স্বাধীনতার রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের রেশ এখনও কাটেনি। মাত্র ক'দিন আগে, ৩১ মার্চ রাতে রাজধানীর হাতিরঝিলে দেশের প্রথম 'ড্রোন শো' দিয়ে দুই বছরব্যাপী মুজিববর্ষ উৎসবের সমাপ্তি টানা হয়েছে। অত্যাধুনিক 'ড্রোন শো'তে মুগ্ধ যখন ঢাকা শহর, তার একদিন পরই দীর্ঘকাল ধরে নিভৃতে বেড়ে ওঠা ধর্মীয় উন্মাদনার ক্ষুদ্রতম একটি ঘা বের হয়ে এসেছে। কপালে টিপ পরায় একজন নারীকে রাজধানীর জনাকীর্ণ রাস্তায় অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল শুনতে হয়েছে। তাও সাধারণ কেউ নন; গাল দিয়েছেন জনগণের টাকায় লালিত-পালিত রাষ্ট্রের একজন পুলিশ। বাহিনীর পোশাকে থাকা সেই পুলিশ সদস্য টিপ পরা নারীর গায়ের ওপর দিয়ে নিজের মোটরসাইকেল চালিয়ে যেতেও উদ্যত হয়েছিলেন। ওই নারী সরে যান; মোটরসাইকেলের চাকা তার পায়ের পাতার ওপর দিয়ে যায়।
ঘটনার সময় ছিল ২ এপ্রিল সকাল। ঘটনাস্থল রাজধানীর অন্যতম জনাকীর্ণ ও ব্যস্ততম প্রাণকেন্দ্র ফার্মগেট। মানসিক ও শারীরিক নিপীড়নের শিকার হওয়া নারীর নাম লতা সমদ্দার, তেজগাঁও কলেজের শিক্ষিকা। তার কণ্ঠে ঘটনার বর্ণনা শুনেছি। পুলিশ কর্তৃপক্ষ ঘটনার প্রায় দু'দিন পর ঘটনাস্থলের পুলিশ সদস্যের পরিচয় জানিয়েছে, নাম- নাজমুল তারেক, একজন কনস্টেবল। শিক্ষিকা লতার ভাষ্যে জেনেছি, ঘটনার সময় পুলিশ কনস্টেবল তার দিকে নোংরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন।
আমাদের সমাজে এসব নতুন নয়। আমরা খোঁজ না রাখলেও দীর্ঘ মেয়াদে বিচিত্র স্থানে, বিচিত্র পরিসরে, বিচিত্র কৌশলে ধারাবাহিকভাবে এসব ঘটনা ঘটে আসছে। ধর্মীয় উন্মাদনা নিয়ে তিন দশক ধরে কাজ করতে গিয়ে এমন বহু ঘটনা জেনেছি। নিপীড়িতরা নীরবে গুটিয়ে থাকে; কোথাও অভিযোগ লিপিবদ্ধ করে না। দেশে গত আড়াই দশকে ধর্মাশ্রিত রাজনীতি, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের উত্থান নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তাদের নানা পথ ও কৌশলের কথা জেনেছি। তার একটি হলো সাংস্কৃতিক নিপীড়ন। যার লক্ষ্য- পথে-ঘাটে, যাত্রাপথে, মেলায়-খেলায়, মাঠে-ময়দানে, ভিড়ে-নির্জনে, বিদ্যালয়ে-কার্যালয়ে, নেশায়-পেশায়, পার্কে-মাঠে, হাটে-বাজারে, যত্রতত্র-সর্বত্র ছেলেমেয়ে-নারী-পুরুষদের মধ্যে এই মাটির চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতিভিত্তিক চিন্তা-চেতনা-চর্চায় পরিবর্তন আনা।
নাচ-গান না শেখা, ছবি না আঁকা, ছবি না তোলা, পুরুষদেরও হাফপ্যান্ট না পরা, গোঁফ রাখলে সরু করে রাখা, দাড়ি রাখা, মেয়েদের কপালে টিপ না পরা, মাথায় কাপড় দেওয়া, বোরকা পরা, হিজাব-নেকাব পরে চুল ও মুখমণ্ডল ঢেকে চলা, হাতে-পায়ে মোজা পরা- এ রকম বিচিত্র বিষয়ে আক্রমণাত্মক নির্দেশনা চাপিয়ে দিয়ে সমাজের সর্বস্তরে ছেলেমেয়ে, নারী-পুরুষদের মধ্যে মানসিক চাপ সৃষ্টি করা ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির একটি কৌশল। এ জন্যই সড়কগুলোতে বহু মেয়ে, নারী আক্রমণের শিকার হয় এবং 'আরেক দিন এভাবে দেখলে খবর আছে' কিংবা 'দেখবি কী করি' বলে শাসানোও হয়। আমাদের সমাজে সাধারণত এগুলো অগুরুত্বপূর্ণ, বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়। সবাই এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দেয়। গণমাধ্যম এসব আমলে নেয় না। যার বড় কারণ- থানায় এসব ঘটনা অভিযোগ আকারে লিপিবদ্ধ হয় না।
সাধারণত নিপীড়নের শিকার হওয়া নারী এবং অল্প বয়সী ছেলেমেয়েরা ভয়ে কুঁকড়ে যায়। অসহায় বোধ করে, দুশ্চিন্তা ও আতঙ্কে সহজে কাউকে বলে না; পরিবারেও লুকায়। বরং তারা নিজেকে বোঝায়- আমাদের সমাজে চলতে গেলে এসব সহ্য করে, মেনে নিয়েই থাকতে হবে। তারা খুঁজে পায় না- এমন অভিযোগ কোথায়, কার কাছে জানাবে? জানিয়ে কী লাভ হবে? কে শুনবে? কে প্রতিকার করবে? মনে করে, প্রতিকার চাইতে গিয়ে উল্টো নিজের পরিবার, বন্ধু-পরিচিত মহল, সমাজে আরও নানা কটুকথা, হয়রানি, সমালোচনা ও বিপদের মুখে পড়বে। এমন ধারাবাহিক ভয়ভীতি প্রদর্শন শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, এমনকি বহু নারী-পুরুষেরও মনোবল ধ্বংস করে। ফলে জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে, নতুন করে অপদস্থ হওয়ার আশঙ্ক এড়াতে অনেকে বাঙালি সংস্কৃতির সাজ-পোশাক ও অন্যান্য চর্চা ছেড়ে নিপীড়কদের নির্দেশিত পোশাক ও চর্চাকে জীবনের সঙ্গী করে। এমনকি তারা নিজের পরিবার এবং চারপাশের নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরদেরও তাদের চিন্তা-চেতনা ও চর্চার অনুসারী হওয়ার জন্য পরামর্শ দিতে শুরু করে।
রাস্তায় যে পুরুষগুলো সাজ-পোশাক নিয়ে নিয়মিতভাবে মেয়েদের নিগৃহীত করে; তারাও কোনো না কোনো প্রক্রিয়ায় মগজ ধোলাইয়ের শিকার। তারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ধর্মব্যবসায়ী বা ধর্মের অপব্যবহার করে গড়ে তোলা উগ্র রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের সংস্পর্শে আসার পর পাল্টাতে শুরু করে। ইসলামী ওয়াজের নামে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ ও সম্প্রীতির দর্শনসমৃদ্ধ সংস্কৃতির প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানো বয়ানগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহজলভ্য। ফলে বহু বছর ধরে ইসলামী উগ্রবাদী রাজনীতির মগজ ধোলাই প্রক্রিয়া সহজতর হয়েছে। কনস্টেবল তারেকের মতো মানসিকতার ব্যক্তিরা বিষাক্ত উত্তেজক বয়ানগুলো নিয়মিত দিনরাত শোনে। তারা সংবাদপত্র পড়ে না; টেলিভিশন দেখে না। গান-নাটক-সিনেমার প্রতি চরম বিদ্বেষ তাদের। তারা জগৎ-সংসারের অন্যসব মানুষের চিন্তা-চেতনা-দর্শনের ধার ধারে না। ঘৃণার উন্মাদনা ছড়ানো ওয়াজের বয়ানে তাদের মগজ বোঝাই থাকে সব সময়। নিজেদের দেহ-মন-মগজে একই উন্মাদনা অনুভব করে এবং নিজেদের জীবন থেকে সর্বজনীনতা ও সহনশীলতাকে নির্বাসনে পাঠায়। তখন ধর্মব্যবসায়ী ও ধর্মের অপব্যবহার করা রাজনৈতিক চক্রের উগ্র ও উস্কানিমূলক বয়ান সমাজের সর্বত্র বাস্তবায়নের চিন্তায় মগ্ন হয়ে থাকে।
তাদের লক্ষ্য হয়- অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ, সম্প্রীতি, সহনশীলতা ও সর্বজনীনতার দর্শনে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটিয়ে আরব সংস্কৃতির বিস্তৃতি ঘটানো। তাদের ভাষায় বাঙালি সংস্কৃতি মানেই 'বিজাতীয়, 'হিন্দুয়ানি' বা 'হিন্দু সংস্কৃতি,' যা তারা বাংলাদেশ থেকে নির্মূল করতে চায়। এই সাংস্কৃতিক পরিবর্তন দেশে ইসলামী শাসন ও সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার রাজনীতিরই একটি অংশ। এই গোষ্ঠীর বিশ্বাস- সাংস্কৃতিক নিপীড়নে এখনই যারা ভীত হবে না, আত্মসমর্পণ করবে না; তারাও এক সময় বাংলাদেশে নিজের সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হবে এবং নিরাপদ ও সুন্দর ভবিষ্যতের স্বার্থে দেশ ছেড়ে যাবে। ধর্মীয় রাজনৈতিক দল ও উগ্র সংগঠনগুলো আমাদের প্রায়ই মনে করিয়ে দেয়- ৯০ শতাংশ মুসলমানের বাংলাদেশকে শতভাগ মুসলমানের দেশে পরিণত করা তাদের স্বপ্ন। ধর্ম-পরিচয়ভিত্তিক জনসংখ্যার পরিসংখ্যানে তারা যেমন পরিবর্তন চায়; পাশাপাশি বৃহত্তর মুসলমান জনগোষ্ঠীতে বাঙালি সংস্কৃতিরও পরিবর্তন চায়। জাতি, ধর্ম ও সংস্কৃতির ধারণা সম্পর্কে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করে তারা সাজ-পোশাক, সংগীত-সাহিত্য, শিল্প-সংস্কৃতি, বিদ্যালয়ের পাঠ, উৎসব উদযাপনে বাঙালিয়ানা ঝেঁটিয়ে বিদায় করে আরবিয়ানা আনতে চায়। মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর থেকেই আমাদের সমাজে এই সাংস্কৃতিক পরিবর্তন আনতে সরব ও নীরব প্রচেষ্টায় তারা সোচ্চার।
২০১৫ সালের পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ভিড়ে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। তার কয়েক সপ্তাহ পর পেশাগত কাজে কয়েকজন সাংবাদিকসহ এক পুলিশ কর্মকর্তার অফিসকক্ষে ছিলাম। সেখানে আরও কয়েকজন অধস্তন পুলিশ কর্মকর্তা বসে কথা বলছিলেন। একজন সাংবাদিক পহেলা বৈশাখে নারী নির্যাতনের ঘটনার তদন্তের অগ্রগতি প্রসঙ্গে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার কাছে জানতে চান। প্রশ্ন শুনে পেছনের সোফায় বসে গল্পরত অধস্তন পুলিশ কর্মকর্তাদের একজন আরেকজনের কাছে সাংবাদিকদের সম্পর্কে বিদ্রুপ করেন। বলেন, মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি। যে মেয়ের ঘটনা; বিচারের জন্য তার চেয়ে সাংবাদিকদের মাথাব্যথা বেশি। বিদ্রুপের ভাষা আরও রূঢ় ছিল। আমি পেছনে বসায় দেখতে ও শুনতে পেরেছিলাম।
তার কয়েক বছর পরের একটি ঘটনা। আমার এক ঘনিষ্ঠজন এক দুপুরে রাজধানীর হাতিরঝিলের সড়ক দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন। র্যাবের একটি অস্থায়ী চেকপোস্টে তাকে থামানো হয়। এক র্যাব কর্মকর্তা মোটরসাইকেলের কাগজপত্র বেশ কিছুক্ষণ ধরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন। কোনো সমস্যা না পেয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স চান। সেটাও ঠিকঠাক দেখার পর র্যাব কর্মকর্তা ক্রুদ্ধ ভঙ্গিতে তাকে বলেন, হাফপ্যান্ট পরে মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন কেন? মোটরসাইকেল চালক র্যাব কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলেন, দেশের কোন আইনে আছে হাফপ্যান্ট পরে মোটরসাইকেল চালানো যাবে না? কিন্তু 'র্যাবের সঙ্গে তর্ক করার অভিযোগে' তাকে ধরে নিয়ে যেতে পারে- এমন বিপদে পড়ার আশঙ্কায় তিনি প্রশ্নটি করেননি। বরং অতি বিনয়ের সঙ্গে র্যাব কর্মকর্তাকে বলেছিলেন, ভুল হয়ে গেছে, আর কখনও হাফপ্যান্ট পরে মোটরসাইকেল চালাবেন না।
লতা সমদ্দার কনস্টেবলের রূঢ় আক্রমণে ভয় পেয়ে কুঁকড়ে যাননি। মুখবুজে-মাথাগুঁজে অন্যায় মেনে নেননি। তা করলে ঘটনাটি আরও অজস্র ঘটনার মতো আড়ালে পড়ে যেত; অজানাই থাকত। শিক্ষিকা লতা প্রতিবাদ করেছেন; থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন। তার সাহসিকতায় কপালের ছোট্ট টিপ সমাজে বড় হই চই ফেলেছে। ঘটনাটি গণমাধ্যমে এসেছে, জনগণে উন্মোচিত হয়েছে, প্রতিবাদ জেগেছে, বিচারের দাবি উঠেছে। জাতীয় সংসদে খোদ ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও স্বনামখ্যাত অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা উচ্চকণ্ঠ হয়েছেন। এ সবকিছু পুলিশ ও সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। পুলিশ কর্তৃপক্ষ কনস্টেবল তারেককে শনাক্ত করতে বাধ্য হয়েছে; চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
কপালের টিপের জন্য শিক্ষিকা লতার নিগৃহীত হওয়ার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদমুখরতা দেখে অনেকে অবশ্য নাখোশ। 'বড় সব ঘটনা ফেলে ছোট ঘটনা নিয়ে' সোচ্চার হওয়ায় তারা ব্যথিত। কিছু পুরুষ নিজের কপালে টিপ পরে ঘটনার প্রতিবাদ করায় বহু পুরুষ বেজার। সিলেটে এমন ক্ষুব্ধ এক পুলিশ কর্মকর্তা ফেসবুকে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সমস্যায় পড়েছেন। আরেকজন ক্ষুব্ধ টেলিভিশন সাংবাদিক নিজের ফেসবুকে বিদ্রুপ করে লিখেছেন, 'হাতের চুড়িটাও রেডি রাইখেন টিপ পরা ভাইরা। সামনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু আসবে। চুড়ি হাতে বসে থাকতে ভুলবেন না, প্লিজ।'
কনস্টেবল নাজমুল তারেকের মতো চিন্তা-চেতনার মানুষ দেশে অজস্র। তারা নিঃসঙ্গ-দুর্বল নয়; শক্তিশালী ও দলবদ্ধ। স্বাধীনতার ৫০ বছরে সংখ্যায় ও দলে তারা বেশ বিস্তৃত হয়েছে। শুধু পুলিশেই নয়; তারা আছে সব বাহিনী, প্রশাসন, শিক্ষাঙ্গন, বিচারাঙ্গন, শিল্প-সংস্কৃতি-সাহিত্যচর্চা, সাংবাদিকতা, স্বাস্থ্য খাত, ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি; সর্বস্তরের শ্রেণি-পেশায়। তারা সাধারণত নীরবে, প্রয়োজনে সরবে নানা কৌশলে কাজ করে। এসব যত জেনেছি, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে ততই দুশ্চিন্তা বেড়েছে। তাই কপালের টিপ নয়; উদ্বেগ হয় বাংলাদেশের কপাল নিয়ে।
ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার চাষাবাদে পরিপূর্ণ পাকিস্তান থেকে মুক্ত করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চাঁদ-কপালের স্বাধীন বাংলাদেশ চেয়েছিলেন। যে কপাল হবে অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বন্ধনে দৃঢ়, সহনশীলতা ও সর্বজনীনতার দর্শনে সমৃদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে অমূল্য ক্ষতির বিনিময়ে অর্জিত সেই বাংলাদেশের চাঁদ-কপাল কি ভবিষ্যতে সত্যিই টিকে থাকবে? সেই কপালে কি 'চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা'র মতো ছড়াগুলো বাঁচবে? নাকি বাংলাদেশের চাঁদ-কপাল থেকে চাঁদের টিপ খসিয়ে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা, অন্ধত্ব, উগ্রবাদ ও উন্মাদনার কলঙ্ক লেপন করে দেওয়া হবে?
লেখক : সাংবাদিক
(লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক সমকালে)