প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে যোগ্য ব্যক্তি খুঁজে নিতে সার্চ কমিটির সঙ্গে বিশিষ্টজনদের বৈঠক হয়েছে রবিবার। এতে বিশিষ্টজনরা দাবি তুলেছেন, নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ও শক্তিশালী করতে দরকার যোগ্য ও সাহসী লোক।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব:) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “আমাদের নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন কমিশন ধ্বংস হয়ে গেছে। সেই সমস্ত লোক দরকার যারা এই পরিস্থিতি থেকে টেনে তুলতে পারবে। মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারবে এবং একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে পারবে এমন সাহসী লোক দরকার।”
ইমোশনাল সিলেকশনে কোন লাভ নেই দাবি করে তিনি বলেন, “এর ব্যতিক্রম হলে আমাদের কপালে দুঃখ আছে।”
সার্চ কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে যে ১০ জনের নাম প্রকাশ করা উচিত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অবশ্যই প্রকাশ করা উচিত।”
আরও পড়ুন: ‘সার্চ কমিটিতে পাওয়া নাম ওয়েবসাইটে প্রকাশ হবে’
শাহরিয়ার কবির বলেন, “আমরাও দশ জনের নাম দিয়েছি। কিন্তু কোন সংগঠন কোন নাম দিয়েছে তা প্রকাশ করা ঠিক হবে না। সার্চ কমিটি সমস্ত নামই প্রকাশ করবে। সেটা আমরাও প্রস্তাব করেছি।”
তিনি বলেন, “এই প্রক্রিয়া সময়ের বাঁধাধরা থাকা উচিত না। কারণ যাদের নাম আসছে, ৩০০ বা ৪০০ যে নাম আসুক সকলের খোঁজ খবর নিতে হবে। তাই আমরা সময় নিতে প্রস্তাব করেছি। আমরা চাই সর্বোচ্চ যোগ্য ও সাহসী ব্যক্তিকে কমিশনে চাই। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিপক্ষের রাজনীতি বিদ্যমান সেখানে পক্ষ-বিপক্ষের লোক খুঁজে লাভ নেই। সৎ যোগ্য সাহসী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লোক খুঁজতে হবে।”
মুনতাসীর মামুন বলেন, “গতকাল যে প্রস্তাব এসেছে, আজ তার বাইরে কোন প্রস্তাব নেই। আমি অন্তর্ভুক্তিমূলক একটি নির্বাচন কমিশন চেয়েছি। প্রচলিত যে ধারা- আমলাদের থেকে একজন, জুডিশিয়ারি থেকে একজন- এই ধারার বাইরে আসতে হবে। সিভিল সোসাইটির উপর জোড় দিতে হবে। সেই সাথে সংখ্যালঘুদের থেকে একজন হলে ভালো হয়।”
তিনি বলেন, “অনেকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য একটি নি্বাচন কমিশন গঠনের কথা বলেছেন, কিন্তু এরকম লোক এই দেশে পাওয়া যাবে না। বঙ্গবন্ধুও গ্রহণযোগ্য ছিল না। তিনিই যদি গ্রহণযগ্য না হয়, এই সময় যতই বলি তা কাল্পনিক হয়ে যায়। নিরপেক্ষ কেউ নেই।”
মুনতাসীর মামুন বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়, সুষ্ঠু নির্বাচনের অনেক অংশীদার আছে যেমন রাজনৈতিক দল, প্রশাসন, নির্বাচন এলাকার স্থানীয়রা। তাই সবকিছু নির্বাচন কমিশনের উপর চাপিয়ে দিলে হবে না। নির্বাচন কমিশন শুধু নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে।”
আরও পড়ুন: সোমবার বিকেলের মধ্যে বিএনপির কাছে নাম চাইলো সার্চ কমিটি
তিনি বলেন, “অনেকেই আমরা পরামর্শ দিচ্ছি কিন্তু সার্চ কমিটির ক্ষমতা সীমিত। আমাদের মেনে নিতে হবে সরকার যে আইন করেছে সেই আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি এদের নিয়োগ দিবে। সুতরাং আমাদের বাড়তি কথা বলে কোন লাভ নেই। এতে কোন ফল হবে না। আমরা চাই যেই কমিশন মোটামুটি গ্রহণযোগ্য হবে, যার সৎ থাকার রেকর্ড আছে ও সহসির সাথে কাজ করতে পারবেন, সেই রকম কমিশন “
নাম প্রকাশের বিষয়ে তিনি বলেন, “একজন প্রস্তাব করেছিলেন রাজনৈতিক দলের নাম প্রকাশ করতে, কিন্তু আমি বিরোধিতা করেছি। কারণ তাইলে একটি মার্কা হয়ে যায়। সবার কাছে তখন গ্রহণযোগ্য হবে না।”
নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, “সৎ, দুর্নীতিমুক্ত ও সাহসী এবং নির্ভীক মানুষ চাই আমরা। এমন একটি নির্বাচন কমিশন চাই যেটি প্রভাবমুক্ত অবস্থায় নির্বাচন পরিচালনা করতে পারবে।”
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল কবীর সাংবাদিকদের বলেন, “গতকাল জাফরুল্লাহ সাহেব প্রস্তাব করেছেন। এরকম আরো অনেক প্রস্তাব করেছেন। যেসব রাজনৈতিকদলগুলো নাম প্রস্তাব করে নাই; তাদেরকে আবার একটু এ্যাপ্রোচ করা যায় কি না। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আজকেও কয়েকজন বলছেন। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলরা যারা রেসপন্স করে নাই তাদেরকে আগামীকাল ৫ টা পর্যন্ত আমাদের ওয়েবসাইটে কমিটি নাম দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে “
এখন পর্যন্ত ৩২৯ জনের নাম পাওয়া গেছে জানিয়ে বলেন, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো থেকে ১৩৬, পেশাজীবি সংগঠন ৪০, ব্যক্তিগত পর্যায়ে এসেছে ৯৯। ব্যক্তিগত পর্যায়ে সরাসরি প্রস্তাব নিজে নিজেকে ৩৪ মতবিনিময় সভায় পেয়েছি ২০ জনসহ মোট ৩২৯ জনের নাম পেয়েছি। আগামীকাল সন্ধ্যার পরে মন্ত্রীপরিষদের ওয়েবসাইটে সব নাম দিয়ে দেওয়া হবে বলে যোগ করেন তিনি।
প্রস্তাবকারীদের নামসহ নাম প্রকাশ করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমাদের কাছে ম্যাক্সিমাম সাজেশনস এসেছে যাতে প্রস্তাবকারীদের নাম না থাকে “
কবে নাগাদ তালিকা চূড়ান্ত হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “পরশু দিন মিটিং আছে। তালিকাটা ফাইনাল হওয়ার পরে এখানে ( জাজেস লাউঞ্জে) সাড়ে ৪টায় মিটিং তারপর বাকিসব ঠিক করা হবে।”
সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম বদি বলেন, “আমার কতগুলো উদ্বেগ আছে প্রশ্ন আছে এবং সাজেশন আছে যেগুলো নিয়ে কথা বলতে আমি ওখানে উপস্থিত হয়েছি। আমি প্রথমেই বলেছি নামগুলো প্রকাশ করতে হবে এবং তিন ধাপে করতে হবে। প্রথম ধাপে কোন দল কর নাম প্রস্তাব করেছে সেগুলো প্রকাশ করতে হবে। দ্বিতীয়ত স্বচ্ছতার সাথে সুনাম অধিকারী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে হবে।”
তিনি বলেন, “জাতি এখন ভয়াবহ সংকটের মধ্যে আছে সেই সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা তাদের কাছে জানতে চাই তারা কি ধরনের প্রক্রিয়া এবং কোন ধরনের মানদন্ড ব্যবহার করে এই নির্বাচন কমিশনারদের খুঁজে বের করার পিছনে। এই মানদণ্ড জানতে পারার মাধ্যমে আমরা সংকা থেকে মুক্ত হব। এই সার্চ কমিটিকে পুরোপুরি স্বচ্ছতা তৈরি করতে হবে, স্বনামসম্পূর্ণ ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে হবে। এই মানদন্ড গুলো চিহ্নিত করতে হবে। এ মানদন্ডগুলো চিহ্নিত করার মাধ্যমে আস্থার সংকট দূর হবে।”
তিনি আরও বলেন, “শুধু নাম প্রকাশ করলে হবেনা কোন দল কার নাম প্রকাশ করলো কিভাবে করলো সেই বিষয়গুলো সকলের সামনে প্রকাশ করতে হবে। রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায় থেকে যে নামগুলো এসেছে সেই নামগুলো থেকে লোক নেওয়ার মধ্যে স্বচ্ছতা তৈরি হবে না। যদি কোন দল কোন নাম প্রস্তাব করেছে সেভাবে প্রকাশ করা না হয় তবে এক ধরনের গোপনীয়তা থেকে যাবে। যার ফলে স্বচ্ছ নির্বাচন কমিশনের গঠন করা কখনও সম্ভব হবে না।”