মার্চ ৫, ২০২৩, ১২:০৪ এএম
আয়োজন এক কিন্তু দেশ দুই। সেই দুই দেশের দুই সংস্কৃতি মিশে গেল সংস্কৃতির ভেলায়। শিল্পের আশ্রয়ে প্রকাশিত হলো দুই বন্ধুরাষ্ট্রের সম্পর্কের প্রতিচ্ছবি। এমনই আয়োজনে চীনা শিল্পীদের নাচের নান্দনিকতা মুগ্ধতার আবেশ ছড়িয়ে দিল শিল্পরসিকদের নয়নে। দেশটির বিভিন্ন জাতিসত্তার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের দেখা মিলল পরিবেশনায়। নাচের সাথে শ্রোতারা শুনেছেন চীনা ভাষার গান। সাথে ছিল বলপূর্বক বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দুর্দশার চিত্র মেলে ধরা বাংলাদেশের শিল্পীদের উপস্থাপিত রোহিঙ্গানামা শীর্ষক নৃত্য পরিবেশনাও। শিল্পকলা একাডেমির অ্যাক্রোবেটিক দলের বৈচিত্র্যময় উপস্থাপনা আয়োজনে যুক্ত করে বৈচিত্র্যময়তা।
এভাবেই সুন্দরের প্রতিচ্ছবি এঁকে শনিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল চীন-বাংলাদেশ কালচার অ্যান্ড আর্ট নাইট শিরোনামের অনুষ্ঠান। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ঢাকার চীনা দূতাবাস। প্রায় দুই ঘণ্টা ব্যাপ্তির অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পরিবেশনা উপস্থাপন করে চীনের কুমিং ন্যাশনাল সং অ্যান্ড ডান্স থিয়েটারের ২৬ সদস্য এবং একাডেমির শিল্পীবৃন্দ।
শনিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে বাংলাদেশ-চীনের সংস্কৃতি মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। ছবি: দ্য রিপোর্ট
পরিবেশনা পর্বের আগে ছিল সংক্ষিপ্ত আলোচনা। দুই দেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে কথা বলেন চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, সংস্কৃতি সচিব আবুল মনসুর ও পররাষ্ট্র সচিব (পশ্চিম) সাব্বির আহমদ চৌধুরী।
অনুষ্ঠানের আলোচনাপর্বে বক্তারা বলেন, চীন ও বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে রয়েছে হাজার বছরের পুরনো ইতিহাস। সেই ঐতিহ্যবাহী শিল্প-সংস্কৃতির বিনিময়ের মাধ্যমে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পাবে। রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও এ ধরনের সাংস্কৃতিক আয়োজন বিশেষ গুরুত্ববহ। যুদ্ধ-হানাহানি থামিয়ে বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠায়ও সংস্কৃতিচর্চার বিকল্প নেই। পাশাপাশি একে অপরের সংস্কৃতি জানার সুযোগ ঘটবে।
নাচের ছন্দে পরিবেশনা পর্বের সূচনা হয়। চীনের সেই নৃত্যে উঠে আসে সেখানকার কৃষ্টি জীবনের চিত্র থেকে একে অপরের সহযোগিতার দৃশ্যকল্প। ব্লেজিং বা আশীর্বাদ শিরোনামের পরিবেশনাটি উপস্থাপন করেন ইয়াংঝোর নেতৃত্বাধীন নৃত্যদল। নাচের পর ভেসে বেড়ায় চীনা সংগীতের সুর। সং অব হর্স হার্ডিং বা অশ্ব পালনের গান শীর্ষক সংগীত পরিবেশন করে বিলুডা। পরের পরিবেশনাটির শিরোনাম ছিল রোহিঙ্গানামা।
লিয়াকত আলী লাকীর ভাবনা ও পরিকল্পনায় নৃত্যটি পরিবেশন করে একাডেমির শিল্পীরা। এরপর ছিল একাডেমির অ্যাক্রোবেটিক বিশেষ প্রদর্শনী। পরিবেশিত হয় রেড ফিশ শীর্ষক চীনা নৃত্য। চীনা শিল্পী জু ঝোওটিংয়ের নৃত্য পরিবেশনাটির শিরোনাম ছিল হর্স রেইসিং বা ঘোড়দৌড়। এরপর একাডেমির অ্যাক্রোবেটিক দল পরিবেশন করে ক্যাপ ডান্স। সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা অবলম্বনে পরিবেশিত হয় মেহরাজ হক তুষার পরিচালিত নাচ ‘আমার পরিচয়’।
এরপর চীনের শিল্পীরা পরিবেশন করেন দলীয় নৃত্য। একাডেমির অ্যাক্রোবেটিক দল উপস্থাপন করে রিং ড্যান্স। কালারফুল ইউনান বা রঙিন ইউনান শিরোনামের সংগীত পরিবেশন করে বিলুডা। একাডেমির নৃত্য শিল্পীদের উপস্থাপন সহজ মানুষ শীর্ষক নৃত্য। সবশেষে ছিল ক্যামেলিয়া স্লোক বা ক্যামেলিয়া ভার্স শিরোনামে চীনা শিল্পীতের দলীয় নৃত্য। অতিথি শিল্পীদের উত্তরীয় প্রদানের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়।