ধেয়ে আসছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মোখা। পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর ও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও আরও ঘণীভূত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে।
এ অবস্থায় কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং মোংলা সমুদ্রবন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত দেখালেই চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জেটিতে নোঙররত মাদার ভ্যাসেল অর্থাৎ বড় জাহাজগুলোকে বহির্নোঙরে গভীর সাগরে পাঠিয়ে থাকে। ছোট ছোট জাহাজ, ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলে।
ঘূর্ণিঝড়ে সাগর উত্তাল হয়ে থাকে এমন সময় জাহাজগুলো গভীর সাগরে পাঠানোর বিষয়টি সাধারণ চোখে খটকা লাগলেও কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় চলুন জেনে নেই।
সাধারণত ঝড়ের সময় সবাই নিরাপদে তীরে বা তার কাছাকাছি জায়গায় থাকতে চায় কিন্তু সে সময় বড় জাহাজগুলোকে গভীর সমুদ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অনেকেই মনে করতে পারেন সেখানে জাহাজগুলো ঝড়ের কবলে পড়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আসলে তা ঘটে না। মূলত জাহাজ ও বন্দরের নিরাপত্তা ও ক্ষতি কমানোর জন্য জন্যই বিভিন্ন দেশের বন্দর কর্তৃপক্ষ কাজটি করে থাকেন। আর এটা আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত একটি নিয়ম।
বঙ্গোপসাগর বা আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড়ে গতিপথের অঞ্চল ছাড়া সাধারণত গভীর সমুদ্রের চাইতে তীরবর্তী অঞ্চলের পানি বেশি ঝঞ্ঝাক্ষুদ্ধ হয়। এ কারণে এত বড় জাহাজগুলো জেটিতে বাঁধা থাকলে প্রচণ্ড ঝড়ে একটি আরেকটির ওপর আছড়ে পড়ে বা ধাক্কা খেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
শুধু জাহাজই নয়, শক্তিশালী এই ধাক্কায় বন্দরেরও ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া বন্দরের চ্যানেলে যদি কোনো জাহাজ ডুবে যায় তবে বন্দরে জাহাজ আসা-যাওয়া বন্ধ হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। এজন্য আন্তর্জাতিক মেরিটাইম স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) অনুযায়ী ল্যান্ড লক এরিয়া বা প্রাকৃতিকভাবে বেষ্টিত সুরক্ষিত নৌবন্দর না থাকলে বিশ্বের সর্বত্রই ঝড়ের সময় বড় জাহাজকে গভীর সাগরে পাঠিয়ে দেওয়া। আর তুলনামূলক মাঝারি ও ছোট জাহাজ ও জলযানকে তীরের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়।
বিশ্বের সকল পণ্য পরিবাহী বড় জাহাজেই দুটি ইঞ্জিন কার্যকর থাকে। দুই ইঞ্জিন চালিয়ে অনেক বড় বড় ঢেউয়ের সাথে তাল মিলিয়ে জাহাজ চলতে পারে। আর ঝড়ের সময়ে জাহাজকে একটি বিশেষ কৌশলে নির্দিষ্ট গতিতে চালিয়ে ভারসাম্য ঠিক রাখেন নাবিকরা। আর এতে ঝড়ের সময়ে বন্দরের চাইতে গভীর সমুদ্রেই নিরাপদে থাকে বড় জাহাজগুলো।