জাপান যেতে ঘর ছাড়ে পল্লবীর ৩ কিশোরী

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ৬, ২০২১, ১১:২৮ পিএম

জাপান যেতে ঘর ছাড়ে পল্লবীর ৩ কিশোরী

রাজধানীর পল্লবী থেকে নিখোঁজ হওয়া তিন কলেজ শিক্ষার্থীকে আব্দুল্লাহপুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার (৬ অক্টোবর) ভোরে তাদের উদ্ধার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-৪ একটি দল।

উদ্ধারের পর তারা জানায়, জাপানে উন্নত জীবনে প্রলোভন দেখিয়ে তাদের প্রথমে কক্সবাজার নিয়ে যায় পূর্বপরিচিত তরিকুল্লা ও হাফসা। দেওয়া হয় ছদ্মনাম। এমনকি জাপানি স্টাইলে কাটা হয় ওই তিন কিশোরীর চুল। র‌্যাবের ধারণা, পাচারের উদ্দেশ্যেই এই ঘটনা।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র‌্যাব জানায়, ‘জাপানের তরুণ-তরুণীদের স্বাধীন জীবনযাপন কিশোরীদের মনে আগ্রহ তৈরি করেছিল। জাপানী ভাষাও শিখতে আরম্ভ করেছিল তারা। পরে গত ১ অক্টোবর সকালে জাপান যেতে ঘর ছাড়ে তারা।

এই তিন বান্ধবী মিরপুর-পল্লবী এলাকার আলাদা তিনটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। গত ১ অক্টোবর সকালে কলেজে যাওয়ার কথা বলে টাকা, গয়না ও স্কুল সার্টিফিকেট নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় তারা।

নিখোঁজ হওয়া তিন জনের মধ্যে এক ছাত্রীর বোন অপহরণের অভিযোগ এনে গত ২ অক্টোবর পল্লবী থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় তিন কিশোরীর পরিচিত ও বন্ধুসেহ ৪ জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

র‌্যাব সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানায়, মামলা হওয়ার পর পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করেছিল র‌্যাব-৪। নানা তথ্যের ভিত্তিতে গতিবিধি অনুসরণ করে তাদের উদ্ধার করা হয়। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় পুরো ঘটনা।

এই কিশোরীরা র‌্যাবকে জানিয়েছে, ধর্মীয় ও সামাজিক নানা নিয়ম মানতে পরিবারের চাপ তাদের বিরক্ত করে তুলেছিল। ফলে সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তির পাশাপাশি লেখাপড়ায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলে তারা। এসময় ইন্টারনেটে দেখে জাপানি সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে তারা। ইন্টারনেটে জাপানি নাটক-সিনেমা দেখার পাশাপাশি জাপানি ভাষাও আয়ত্ত করা শুরু করে তারা। সুযোগ খুঁজতে থাকে কীভাবে জাপান যাওয়া যায়।

র‌্যাব জানায়, মাস দুয়েক আগে আগে ৩ বান্ধবী তাদের আরেক বন্ধুর সঙ্গে মিরপুরের দিয়াবাড়ী এলাকায় ঘুরতে গিয়ে হাফসা চৌধুরী নামে ২৪/২৫ বছরের এক নারীর সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। তারা ফেসবুকে তাকে বন্ধু করে নেয়।

তিন কিশোরীর আগ্রহ দেখে হাফসাই তাদের জাপানে নেওয়ার পরিকল্পনা সাজায় বলে র‌্যাব জানায়।

র‌্যাব জানায়, হাফসা চৌধুরীর পরিকল্পনায় ওই তিন বান্ধবী বাসা থেকে বের হয়ে জাপানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রথমে গাবতলীতে যায়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যেন তাদের অবস্থান চিহ্নিত না করতে পারে, সেজন্য তারা নিজেদের ইমেইল, ফেসবুক আইডি ও মোবাইল গাবতলী এলাকায় ধ্বংস করে ফেলে।

পরে তারা নৌকায় নদী পার হয়ে আমিন বাজার পৌঁছায়। সেখানে হাফসার দুই সহযোগী একটি কালো রঙের নোয়া গাড়ি নিয়ে তৈরি ছিল বলে ওই তিন কিশোরী জানায়। ওই গাড়ি তাদের অচেনা একটি স্থানে নামায়। এরপর অটোরিকশায় করে তাদের নেওয়া হয় কমলাপুর রেলস্টেশনে।

কিন্তু চট্টগ্রামের ট্রেন তখন না পেয়ে তারা বাসে উঠে কুমিল্লার ময়নামতিতে গিয়ে নামে বলে র‌্যাব জানায়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পথিমধ্যে তারা নিজেদের পরিচয় গোপনের উদ্দেশ্যে এবং পশ্চিমা সংস্কৃতির আদলে নিজেদের চুল কেটে ফেলে পশ্চিমা বেশ ধারণ করে। কুমিল্লার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় পৌঁছে তারা কেডস্, পোশাক ও একটি মোবাইল ফোন কেনে।

এরপর কুমিল্লা থেকে বাসে চট্টগ্রাম যায় ওই তিন কিশোরী। চট্টগ্রাম সিনেমা প্যালেস মোড়ে নেমে দুটি মোবাইল ফোন কেনে। তারপর বাসে করে কক্সবাজার গিয়ে কলাতলীতে একটি হোটেলে ওঠে।

র‌্যাব জানায়, তারা ১ অক্টোবর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত কক্সবাজারে ছিল। এসময় অবস্থান গোপন রাখতে তারা মোবাইল ইন্টারনেটের পরিবর্তে ওয়াইফাই ব্যবহার করছিল।

ওই তিন কিশোরী বলেছে, ২ অক্টোবর কক্সবাজার সৈকতে ‘হাফসার লোক’ আসিফ ও শফিকের (৩০-৩২ বছর বয়সী) সঙ্গে দেখা করে তারা। ওই দুজন তাদের কাছ থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও কিছু নগদ টাকা নিয়ে নিলে তারা আতঙ্কিত হয়ে হোটেলে ফিরে আসে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হোটেলেই থাকছিল তারা, কিন্তু হোটেলের আশপাশে র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে ঢাকায় ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা ৫ অক্টোবর রাতে বাসে ওঠে। ৬ অক্টোবর বুধবার ভোরে ঢাকায় পৌঁছে বেড়িবাঁধ এলাকায় গেলে সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়।

হাফসা নামের ওই নারীর বিষয়ে র‌্যাব জানায়, তাকে শনাক্ত করার পাশাপাশি কক্সবাজারে থাকা ওই দুই ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Link copied!