ধারণা সূচকে দুর্নীতি বেড়েছে বাংলাদেশে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জানুয়ারি ২৮, ২০২১, ০৫:৫৭ পিএম

ধারণা সূচকে দুর্নীতি বেড়েছে বাংলাদেশে

বার্লিনভিত্তিক এই দুর্নীতিবিরোধী সংস্থার প্রকাশিত ‘দুর্নীতির ধারণা সূচকে’ (সিপিআই) এ বছর বাংলাদেশের অবস্থানের অবনমন ঘটেছে দুই ধাপ, তবে স্কোর গতবারের সমান।

বিশ্বের ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলের ২০২০ সালের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে তৈরি করা এই সূচকে গত দুই বছরের মত ২৬ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী (ভালো থেকে খারাপ) ১৪৬ নম্বরে।

আর উল্টোভাবে, অধঃক্রম (খারাপ থেকে ভালো) অনুযায়ী ‘সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত’ দেশের তালিকায় এবার বাংলাদেশ রয়েছে দ্বাদশ স্থানে।

এক ধাপ এগিয়ে গতবার বাংলাদেশ উঠে এসেছিল ১৪তম স্থানে।

বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি বলেন, “এই ফলাফল হতাশা ব্যঞ্জক বলে মনে করছি। স্কোরে কোনো উন্নতি হয়নি। অন্যদিকে আমাদের অবস্থান দুই ধাপ নিচে নেমে এসেছে। আমাদের আরও হতাশা হচ্ছে- এবারও দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় সর্বনিম্নতে রয়েছে। একমাত্র আফগানিস্তানের পর বাংলাদেশের অবস্থান। আফগানিস্তানের স্কোর ১৯ এ আছে।”

১০০ ভিত্তির এই সূচকে শূন্য স্কোরকে দুর্নীতির ব্যাপকতার ধারণায় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ১০০ স্কোরকে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত বা সর্বোচ্চ সুশাসনের দেশ হিসেবে বিবেচনা করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল। আগে দশভিত্তিক সূচকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরা হলেও ২০১২ সাল থেকে ১০০ ভিত্তির এই সূচক প্রকাশ করা হচ্ছে। পুরনো প্রতিবেদনগুলো থেকে দেখা যায়, ২০১৩ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৭, তার আগের বছর ছিল ২৬।

বুধবার বার্লিন থেকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মূল প্রতিবেদন প্রকাশের পাশাপাশি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি বলেন, “নিচের দিক থেকে হিসেবে করলে বাংলাদেশের র‌্যাঙ্কিং কমেছে। ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত আমরা সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিলাম, তারপর ওপর থেকে ক্রমাগত র‌্যাঙ্কিং বেড়েছে।

“আমরা মনে করি যেসব উপাদান ফলাফলের ওপরে কাজ করেছে তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে- প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা অন্যতম কারণ। আমাদের রাজনৈতিক শুদ্ধাচারের বড় ধরণের নিরসন হয়েছে। আবার দুর্নীতি ও বিচারহীনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বার্থের দ্বন্দ্ব বিরাজ করতে দেখা যায়। রাজনীতিকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি অর্জনের উপায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।”

টিআই জানায়, এবারের সূচকে গড় স্কোর হল-৪৩। এ বছর ৫৩টি দেশ ৪৩ স্কোর বা তার বেশি পেয়েছে। সবচেয়ে বেশি স্কোর করেছে ডেনমার্ক ও নিউজিল্যান্ড, তারা ১০০ মধ্যে ৮৮ স্কোর পেয়েছে। সবচেয়ে নিম্ন স্কোর ১২ পেয়েছে দক্ষিণ সুদান ও সোমালিয়া।

এবার ৬২ দেশের স্কোর বেড়েছে। ৭০টি দেশের স্কোর আগের মতই রয়েছে এবং ৪৮টি দেশের স্কোর নেমে এসেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “বাংলাদেশের ১০০ এর মধ্যে ২৬ পেয়েছে।  নিচের দিক থেকে হিসাব করলে দ্বাদশ এবং ওপর থেকে হিসেব করলে ১৪৬তম।  ২০১৮ ও ২০১৯ সালের সমান স্কোর। ২০১৯ সালের তুলনায় নিচের দিকে চতুর্দশ থেকে দ্বাদশে নেমে এসেছে। এটাই বেশি আলোচিত হয়।”

এছাড়া ৩১টি এশিয়া প্যাসিফিক দেশের মধ্যে বাংলাদেশ চতুর্থ অবস্থানে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কম্বোডিয়া, আফগানিস্তান এবং উত্তর কোরিয়ার পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। এই তিনটি দেশের তুলনায় কেবল আমরা ভালো। তিনটি কারণে আমাদের অবস্থান হতাশাব্যঞ্জক। দুই ধাপ নিচে নেমে এসেছি, দক্ষিণ এশিয়ার তুলনায় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন এবং এশিয়া-প্যাসিফিকের বিবেচনায় চতুর্থ সর্বনিম্ন।”

টিআইবি নির্বাহী পরিচালক বলেন, “বাংলাদেশের ২০০১ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত স্কোরে ক্রমাগত অগ্রগতি হয়েছে, এই জন্য আমরা সন্তুষ্ট। তবে স্কোর ২০ এর কোটাতে স্থির হয়ে আছে। যেটি আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য ও হতাশাজনক বলে আমরা মনে করছি।”

টিআই জানায়, এবারের সূচকেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভুটান সর্বোচ্চ অবস্থানে আছে। তারা ৬৮ স্কোর পেয়ে ওপর থেকে ২৪তম অবস্থানে আছে। এরপর মালদ্বীপ ৪৩ স্কোর পেয়ে ৭৫তম অবস্থানে এসেছে, গতবার ১৩০তম অবস্থানে ছিল দেশটি। ভারত ৪০ স্কোর পেয়েছে, তাদের এবার এক পয়েন্ট কমেছে। শ্রীলঙ্কা অপরিবর্তিত, পাকিস্তান এক পয়েন্ট কমে ৩২ থেকে ৩১ হয়েছে। আফগানিস্তানের স্কোর ১৬ থেকে বেড়ে ১৯ হয়েছে, অবস্থান ১৬৫তম।

ভালো স্কোর করা ডেনমার্ক ও নিউজিল্যান্ডের পরে রয়েছে ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, লুক্সেমবার্গ, অস্ট্রিয়া, কানাডা।

অন্যদিকে সবচেয়ে খারাপ স্কোর করা দক্ষিণ সুদান, সোমালিয়ার পাশাপাশি রয়েছে সিরিয়া, ইয়েমেন, ভেনেজুয়েলা, সুদান, লিবিয়া, উত্তর কোরিয়া, হায়তি, কঙ্গো। সিপিআই-২০২০ এর তথ্যের উৎস ছিল ১৩টি আন্তর্জাতিক জরিপ, যার চলমান তথ্য এই সূচকে ব্যবহৃত হয়েছে। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতি সূচক তৈরি করা হয়েছে।

আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আটটি সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো হল- ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম এক্সিকিউটিভ ওপিনিয়ন সার্ভে, ইকোনোমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট কান্ট্রি রিস্ক রেটিংস, ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট ‘রুল অব ল ইনডেক্স, পলিটিক্যাল রিস্ক ইন্টারন্যাশনাল কান্ট্রি রিস্ক গাইড, বার্টেলসম্যান ট্রান্সফরমেশন ইনডেক্স, গ্লোবাল ইনসাইট কান্ট্রি রিস্ক রেটিংস, বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি পলিসি অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল অ্যাসেসমেন্ট, ভেরাইটিজ অব ডেমোক্রেটিজ প্রজেক্ট।

বৈশ্বিকভাবে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২০ এর অক্টোবর পর্যন্ত সময়ের তথ্য ২০২০ এর সূচকে ব্যবহৃত হয়েছে।

Link copied!