বিড়ালের লোভ দেখিয়ে শিশুটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করে ডোবায় ফেলেন রুবেল

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ২৯, ২০২৩, ০৯:১৬ পিএম

বিড়ালের লোভ দেখিয়ে শিশুটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করে ডোবায় ফেলেন রুবেল

চট্টগ্রামে শিশু আবেদা সুলতানা আইনীনের (১১) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। শিশুটিকে বিড়াল এনে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নির্জনে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করে বস্তাবন্দি করে ডোবায় ফেলে দেওয়া হয়। সাত মাস আগেই ২৪ অক্টোবর নগরীর জামালখানে চিপসের লোভ দেখিয়ে ধর্ষণ শেষে খুন করা হয়েছিল আরেকটি শিশুকে। ওর নাম মারজান হক বর্ষা (৭)। এরকম লোমহর্ষক দুটি শিশু ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় এলাকাবাসী হতভম্ব হয়ে গেছেন। 

পিবিআই জানায়, নিখোঁজের ৯ দিন পর আজ বুধবার ভোরে চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ কাট্টলী এলাকার একটি ডোবা থেকে আইনীনের (১১) লাশ উদ্ধার করে পিবিআই। গত ২১ মার্চ আইনীনকে বিড়াল ছানা এনে দেওয়ার কথা বলে একটি খালি বাসায় ডেকে নিয়ে যায় মো. রুবেল (৩০) নামের এক সবজি বিক্রেতা। সেখানে শিশুটিকে ধর্ষণ শেষে বালিশ চাপা দিয়ে এবং গলাটিপে হত্যা করা হয়।

জানা যায়, নিহত শিশুটির বাবার নাম আবুল কাশেম, মায়ের নাম বিবি ফাতেমা। আগে পরিবারের সাথে ঢাকায় থাকলেও মাস তিনেক আগে মায়ের সাথে চট্টগ্রামে নানার বাড়ি থাকা শুরু করেছিল সে। 

পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, প্রায় তিন মাস আগে আইনীনের মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়। এরপর মেয়েকে নিয়ে নগরীর পাহাড়তলী এলাকায় বাবার বাসায় থাকতে শুরু করেন আইনীনের মা। সেখানে একপর্যায়ে রুবেলের সাথে তাদের পরিচয় হয়।

চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটপ্রধান পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা বলেন, পাহাড়তলী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরির (জিডি) ভিত্তিতে ২৩ মার্চ থেকে ছায়াতদন্ত শুরু করে পিবিআই। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সন্দেহভাজন হিসেবে রুবেলকে আটক করা হয়। এরপর তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়।

নাইমা আরও জানান, হত্যার পর লাশ সবজির ভ্যানগাড়িতে নিয়ে ত্রিপলে মুড়িয়ে পার্শ্ববর্তী একটি ডোবায় ফেলে দেওয়া হয়। রাত ১০টার দিকে মেয়েটির জামা-কাপড় পিসি রোডের কনকা স্টেশন এলাকায় ফেলে দেয় রুবেল। এরপর থেকে ডোবায় প্রতিদিনই লাশটি দেখতে যেত। ডোবায় লাশ থাকার বিষয়টি কেউ যেন বুঝতে না পারেন, সেজন্য খড় দিয়ে প্রতিদিন লাশ ঢেকে দিয়ে আসত রুবেল।

শিশু মারজানা হক বর্ষা (৭) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের শিকার শিশুটির বাসার অদূরে শ্যামল স্টোর নামের একটি দোকানের কর্মচারী ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়। পরে শ্যামল স্টোর থেকে কর্মচারী লক্ষণ দাশকে (৩০) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার লক্ষণ দাশ লোহাগাড়ার উত্তর পুদয়া ৩ নং ওয়ার্ডের মনি মিস্ত্রির বাড়ির ফেলোরাম দাশের ছেলে।

বুকফাঁটা কান্না মায়ের

শিশু বর্ষার লাশ খুঁজে পাওয়ায় অঝোরে কেঁদেছিল তার মা-বোন আর পরিবারের সদস্যরা। কেঁদে কেঁদে পুলিশের অবহেলার কারণে করুণ পরিণতি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিল বর্ষার পরিবার। এবার শিশু আইনীনের লাশ উদ্ধারের পরও সেই একই চিত্র দেখা গেল। 

বর্ষার মায়ের মতো আইনীনের মা বিবি ফাতেমাও অভিযোগ তুললেন, রুবেলকে প্রথম থেকেই সন্দেহ করার কথা বলা হলেও পুলিশ সেটা পাত্তা দেয়নি। বরং পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত এস আই মো. দুলাল বলেছেন, আইনীনের সাথে রুবেলের প্রেমের সম্পর্ক আছে।

এ অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে এস আই দুলাল গণমাধ্যমকে বলেছেন, অভিযোগটি সত্য নয়। বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ দেখে গত ২৬ মার্চ রুবেলকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল; কিন্তু সে স্বাভাবিক উত্তর দিয়েছিল। রুবেলের মা থানায় এসে বলতে থাকে আমরা তার ছেলে তুলে এনে নির্যাতন করছি। এরপর তার মায়ের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু রুবেলের ওপর নজর রাখছিলাম আমরা।

যে জবানবন্দি দিল রুবেল

আইনীন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন গ্রেপ্তার রুবেল। বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে তিনি স্বীকারোক্তি দেন। দুই সন্তানের জনক রুবেল পেশায় সবজি বিক্রেতা।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, আদালত জবানবন্দি গ্রহণ করে অভিযুক্তকে কারাগারে পাঠিয়েছে।

Link copied!