রাষ্ট্রপতির চিঠি পেলেও ‘অর্থহীন’ সংলাপে যাবে না বিএনপি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জানুয়ারি ৫, ২০২২, ০৮:১১ পিএম

রাষ্ট্রপতির চিঠি পেলেও ‘অর্থহীন’ সংলাপে যাবে না বিএনপি

নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপের চিঠি পেয়েছে বিএনপি। বুধবার দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই চিঠি প্রাপ্তির কথা নিশ্চিত করেছেন। বেলা আড়াইটার দিকে বঙ্গভবন থেকে পাঠানো রাষ্ট্রপতির ওই চিঠি তিনি নিজে পেয়েছেন বলে জানান রিজভী। পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,‘দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে তা জানানো হয়েছে।’ 

সংলাপে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত

গত ২৭ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির সংলাপকে ‘অর্থহীন’ অভিহিত করে এই সংলাপে অংশ গ্রহন না করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির ওই ভার্চুয়াল সভার সিদ্ধান্ত গত ২৯ ডিসেম্বর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তা জানানো হয়। 

সংলাপে যায়নি বেশ কয়েকটি দল

কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৪ ফেব্রুয়ারি। নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ গত ২০ ডিসেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপের সূচনা করেন। জাতীয় পার্টি, জাসদ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, তরিকত ফেডারেশ, খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিএনএফ, ইসলামী ঐক্যজোট, গণফোরাম ও বিকল্পধারা বাংলাদেশসহ নিবন্ধিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে রাষ্ট্রপতির সংলাপ করছে। বিএনপি ছাড়াও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি,সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সংলাপে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। 

যা ছিল বিএনপির বিজ্ঞপ্তিতে

বিএনপির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়ছিল, বিগত দুইটি নির্বাচন কমিশন গঠনের পূর্বে রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে নিবন্ধণকৃত রাজনৈতিক দল গুলো অংশ নিয়ে তাদের মতামত দিয়েছিলো। বিএনপি মনে করে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কালীন সময়ের নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং নিরপেক্ষ প্রশাসনের সাংবিধানিক নিশ্চয়তা ব্যাতীত নির্বাচন কমিশনের গঠন নিয়ে সংলাপ শুধু সময়ের অপচয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দলীয় সরকার বহাল রেখে নির্বাচন কমিশন কখনই স্বাধীন ভাবে নিরপেক্ষ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারবেনা।

বিএনপি বিশ্বাস করে নির্বাচন কালীন সময়ে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার ব্যতিরেকে সুষ্ঠু, অবাধ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কোন নির্বাচন কমিশনই অনুষ্ঠান করতে পারবেনা। রাষ্ট্রপতি নিজেই বলেছেন তার কোনও ক্ষমতা নেই পরিবর্তন করার। সেই কারনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ কোনও ইতিতবাচক ফলাফল আনতে পারবেনা। বিএনপি অর্থহীন কোন সংলাপে অংশগ্রহণ করবে না।

বিগত দুইটি নির্বাচন কমিশন গঠনের পূর্বে রাষ্ট্রপতির সাথে সংলাপের বিষয়টি তুলে ধরে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিএনপি নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে সুস্পষ্ট প্রস্তাব লিখিত ভাবে রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করেছিলো। কিন্তু সব উদ্যোগই ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচনকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকার কারনে।

‘রাষ্ট্র যন্ত্রকে বেআইনী ব্যবহার, নির্বাচন কমিশনের চরম ব্যর্থতা, অযোগ্যতার কারনে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে। ভোটারগণ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের দলীয় সংগঠনে পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পর পর দুটো নির্বাচন কমিশনই চরম ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ২০১২ সালে সংবিধান পরিবর্তন করে নির্বাচন কালীন সময়ে তত্ত্ববধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচনের বিধান বলবত করে প্রকৃত পক্ষে আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্র বিকাশের সকল পথ বন্ধ করে দিয়েছে। জনগণ তার ভোটের অধিকার হারিয়েছে’- বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

Link copied!