ঢাকা ও কাঠমান্ডুর মধ্যে সরাসরি ট্রেন সার্ভিস চালু করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত ডা. বনশিধর মিশ্র। এই ট্রেন সার্ভিসের নাম হতে পারে ঢাকা-কাঠমান্ডু মৈত্রী এক্সপ্রেস। ঢাকাস্থ নেপাল দূতাবাসে গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। খবর বাংলা নিউজ২৪.কম এর।
বাংলাদেশ-নেপালের মধ্যে সরাসরি রোড ও রেল কানেক্টিটিভি চালু সম্ভব কিনা জানতে চাইলে নেপালের রাষ্ট্রদূত ডা. বনশিধর মিশ্র বলেন, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি প্লেন যোগাযোগ রয়েছে। এখন সড়ক ও রেল যোগাযোগও সম্ভব। ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ে রেলযোগাযোগ রয়েছে। পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত রেল রুট হতে পারে। আর সেটা সম্ভব। সেখান থেকে নেপালে যাওয়াও খুব সহজ। কেননা ওখান থেকে দুই দেশের সীমান্তের দূরত্ব মাত্র ৩৭ কিলোমিটার। এই পথ দিয়ে ঢাকা-কাঠমান্ডুর মধ্যে সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ সম্ভব।
তিনি বলেন, ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস যদি হতে পারে, তাহলে ঢাকা-কাঠমান্ডু এক্সপ্রেস কেন সম্ভব নয়? আগামী এক দশকেই এটা সম্ভব।
সরাসরি ট্রেন সার্ভিস চালুর বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে নেপালের রাষ্ট্রদূত বলেন, যমুনা সেতুতে এখন আর রেল মালগাড়ী অ্যালাউ না। সে কারণে যমুনা নদীর ওপর আরও একটি রেল সেতু তৈরি হচ্ছে। তাহলে সেই সেতুর ওপর দিয়ে খুব সহজেই ট্রেনযোগে মালগাড়ী ও যাত্রী নেপালে যেতে পারবে।
বাংলাদেশ-নেপালের মধ্যে কানেক্টিটিভির সুযোগ আরও কীভাবে হতে পারে জানতে চাইলে নেপালের রাষ্ট্রদূত বলেন, চট্টগ্রাম ও মোংলাবন্দর থেকে নেপালে রেল কানেক্টিভিটির সুযোগ রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে নেপালে যে সার গিয়েছে, সেই সার চীন থেকে চট্টগ্রাম এসেছে। তারপর চট্টগ্রাম থেকে ছোট জাহাজে করে নেওয়া হয়েছে যশোরের নওয়াপাড়ায়। সেখান থেকে ভারত হয়ে নেপালে গিয়েছে।
তিনি বলেন, বিরল-রাধিকাপুর রেল রুট ও রোহনপুর-সিঙ্গাবাদ রেল রুট থেকে খুব সহজেই নেপালের সঙ্গে রেল রুট যুক্ত করা যেতে পারে। রোহনপুর থেকে নেপালের বিরাটনগর মাত্র ২৭০ কিলোমিটার। এটা খুব সম্ভাবনাময় রুট হতে পারে।
নেপালে চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশের রোগীরা কি কোনো সুযোগ নিতে পারে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে নেপালের রাষ্ট্রদূত ও দেশটির সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, নেপালের সীমান্ত শহরে খুব কম খরচে চক্ষু চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে। মাত্র দুই হাজার টাকায় কন্ট্রাক্ট লেন্স বসানো যায়। ভারতীয় নাগরিকরা এই চিকিৎসার সুযোগ নিয়ে থাকেন। বাংলাদেশের নাগরিকরা বিশেষত বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের জেলা শহরগুলোর মানুষেরাও চিকিৎসার জন্য এই সুযোগ নিতে পারেন।
দুই দেশের মধ্যে পর্যটন খাতে কীভাবে একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারে—প্রশ্নের জবাবে বনশিধর মিশ্র বলেন, বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে পর্যটন বিকাশের অনেক সুযোগ রয়েছে। যেমন নেপালে কোনো সমুদ্র নেই। সে কারণে নেপালের পর্যটকরা সমুদ্র দেখে আপ্লুত হয়। একই ভাবে বাংলাদেশের পর্যটকরা হিমালয় পর্বত ও মাউন্ট অ্যাভারেস্ট দেখতে নেপালে যেতে পারেন। এভাবে দুই দেশেই পর্যটন বিকাশের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া নেপালে পর্যটকদের জন্য বাঞ্জি জাম্প ও র্যাফটিংয়ের সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ-নেপালের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানির সুযোগ কেমন—জানতে চাইলে নেপালের রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই দেশের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানির প্রচুর সুযোগ রয়েছে। নেপাল থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ নিতে পারে। নেপাল থেকে পাথর, কমলালেবু, টমোটেসহ সবজি বাংলাদেশ নিতে পারে। একইভাবে বাংলাদেশ থেকে নেপালে ব্যাপকভাবে সারের চাহিদা রয়েছে। অন্যান্য পণ্যেরও চাহিদা রয়েছে। উভয় দেশই বাণিজ্যের সুযোগ নিতে পারে।