পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে সরিয়ে দেওয়া সদস্য মো. মতিউর রহমানকে সপরিবারে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) বিষয়টি সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংয়ে নিশ্চিত করেছেন দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন। তিনি বলেন, “জব্দ হওয়া সম্পদের বাইরে এই দুই পরিবারের সদস্যদের আর কোনও সম্পদ আছে কিনা, সেটা জানতে নোটিশ জারি করা হয়েছে।”
ব্রিফিংয়ে দুদক সচিব বলেন, “প্রাথমিক অনুসন্ধানে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জীশান মীর্জা, বড় মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর ও মেজ মেয়ে তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের নামে ও বেনামে দেশে-বিদেশে আরও সম্পদ রয়েছে বলে তথ্য রয়েছে। তাই আইন অনুযায়ী পৃথক পৃথক সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারি করেছে দুদক।”
বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর তাদের জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
সংস্থাটি এখন পর্যন্ত বেনজীর ও তার পরিবারের নামে ৬৯৭ বিঘা জমি, ১৯টি কোম্পানির শেয়ার, ঢাকায় ১২টি ফ্ল্যাট, ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ৩৩টি ব্যাংক হিসাব ও তিনটি বিও হিসাব (শেয়ার ব্যবসার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) খুঁজে পেয়েছে। আদালতের আদেশে এসব সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করা হয়েছে। বেনজীর আহমেদ ৪ মে সপরিবার দেশ ছাড়েন।
এর আগে গত ৩০ জুন মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদের তথ্য চেয়ে এনবিআর, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), নিবন্ধন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানায় দুদক সূত্র।
মতিউরের পরিবারকে নোটিশ জারি
ছাগল-কাণ্ডে আলোচিত অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সংযুক্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান, তার প্রথম স্ত্রী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ, প্রথম পক্ষের সন্তান আহমেদ তৌফিকুর রহমান (অর্ণব) ও ফারজানা রহমান (ঈপ্সিতা) এবং দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতারের (শিবলী) সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারির কথা জানান দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন।
মতিউর ও তার স্বজনদের নামে অন্তত ৬৫ বিঘা (২ হাজার ১৪৫ শতাংশ) জমি, আটটি ফ্ল্যাট, দুটি রিসোর্ট ও পিকনিক স্পট এবং তিনটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের তথ্য পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজের নামে ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী, যশোর ও নাটোরে মোট ৮৪৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ (২৫ দশমিক ৭০ বিঘা) জমি রয়েছে। আর ঢাকায় তাঁর নামে ফ্ল্যাট রয়েছে অন্তত চারটি।
২০২৩-২৪ করবর্ষের আয়কর বিবরণীতে লায়লা কানিজ তাঁর মোট সম্পদ দেখিয়েছেন ১০ কোটি ৩০ লাখ ৫১ হাজার টাকা।
মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব, মুঠোফোনে আর্থিক সেবার (এমএফএস) হিসাব ও শেয়ারবাজারের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব জব্দ করা হয়েছে। ২৪ জুন মতিউর ও তার প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও সন্তানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।