জুলাইয়ের আহতদের সঙ্গে কর্মচারীদের মারামারি, চক্ষুবিজ্ঞানে কর্মবিরতি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ২৮, ২০২৫, ০২:৪৩ পিএম

জুলাইয়ের আহতদের সঙ্গে কর্মচারীদের মারামারি, চক্ষুবিজ্ঞানে কর্মবিরতি

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে জুলাই আন্দোলনে আহত এবং চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনদের সঙ্গে হাসপাতালের কর্মচারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় চিকিৎসক, কর্মচারীদের অনেকে আহত হয়েছেন বলে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক চিকিৎসক জানে আলম জানিয়েছেন। 

ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলম বুধবার দুপুর দুইটায় জানিয়েছেন বেলা ১১টার দিকে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। তিনি বলেছেন দুপুর দেড়টার দিকে সেবাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিলেও হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা এখন ‘বন্ধ আছে’। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।  

ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলম বলেন, “সংঘর্ষের সময় জুলাইয়ে আহত এবং রোগীর স্বজনদের হামলায় আমাদের চিকিৎসক, কর্মচারীদের অনেকে আহত হয়েছেন। সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পর এখন উনারা হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়া চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের উদ্ধার করার কাজ করছেন।” 

হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, জুলাইয়ের আহতরা হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মচারীদের আবাসিক ভবনেও হামলা চালিয়েছে এবং কর্মচারীদের শাস্তির দাবিতে তারা স্লোগানও দিয়েছেন তারা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (তেজগাঁও) আলমগীর কবির বলেছেন, বর্তমানে ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।’

মঙ্গলবার হাসপাতালের পরিচালককে অবরুদ্ধ করে রাখা, জুলাইয়ে আহতদের আত্মহত্যার চেষ্টার পর এবং সংঘর্ষের এই ঘটনা ঘটল।

পরিচালককে অবরুদ্ধ করে রাখা এবং আহতদের আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় নিরাপত্তার দাবিতে বুধবার সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করছিলেন কর্মচারীরা।

এ অবস্থায় সকাল ১০টার পর থেকে জুলাইয়ে আহতরা হাসপাতালের কর্মচারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পরে আহতদের সঙ্গে যোগ দেন বহির্বিভাগে আসা রোগীর স্বজনরা।

আগের দুদিনে যা ঘটে

নানা দাবিতে মঙ্গলবার ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয়ে গিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে জুলাই আন্দোলনে আহতদের একটা অংশ। এ সময় প্রায় দেড় ঘণ্টা পরিচালককে তার কার্যালয়ে অবরোধ করে রাখে তারা। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

হাসপাতালের পরিচালক চিকিৎসক খায়ের আহমেদ চৌধুরী মঙ্গলবার বলেন, মঙ্গলবার দুপুর সোয়ার দুইটার দিকে জুলাই আন্দোলনে আহতদের একটা অংশ তার কার্যালয়ে আসেন। গত রোববার আত্মহত্যার চেষ্টা করে হাসপাতালে ভর্তি চারজনও তাদের সঙ্গে ছিলেন।

“সুইসাইড করতে চেয়েছিল এমন চারজন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। সে অবস্থায়ই মঙ্গলবার তারা হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসে। এরসঙ্গে যোগ দেয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জুলাই আন্দোলনের কয়েকজন। তাদের নিজেদের মধ্যেও অনেক ধরনের কোন্দল আছে, একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ করে। তাদের ৪০ থেকে ৫০ জন আমার রুমে আসে। সেখানে তারা নিজেদের মধ্যে গোলমাল করছিল, একজন আরেকজনকে ব্লেইম করছিল যে একদল অনুদান এনেছে তাদেরকে দেয় নাই।”

চিকিৎসক খায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন, তার বিরুদ্ধে একপক্ষের হয়ে কাজ করার অভিযোগ তোলে আন্দোলনে আহতরা। পরিস্থিতি খারাপ হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি জানিয়েছেন তিনি।

“তাদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী নাকি আমি বিদেশে পাঠানোর নামের তালিকা করি। কিন্তু এটা তো হওয়ার কথা নয়। এখানে বিশেষজ্ঞ কমিটি আছে তারাই নির্ধারণ করে তারা বিদেশে যাবে। তো এসব বিষয় নিয়ে পরিস্থিতি উত্যপ্ত ছিল, তাদের মধ্যে আকতার হোসেন নামে একজন আবার পেট্রল নিয়ে এসেছিল। যে কারণে আমি কিছুটা ভয় পেয়ে যাই, কোনো দুর্ঘটনা ঘটায় কিনা। বিষয়টি আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাই। এরপর সেনাবাহিনীর সদস্যরা এলে তারা সরে যায়। এর আগেই আমি আহতদের একটা অংশের সহায়তায় কক্ষ থেকে বের হয়ে আসি।”  

ঘটনাস্থলে থাকা জুলাই আহতদের একজন বলেন, “ওইদিন যারা সুইসাইড অ্যাটেম্পট নিয়েছিল তারাই আজ ডিরেক্টরের কার্যালয়ে আসে। সেখানে নানা কথাবার্তা বলতে বলতে আবারও সুইসাইড করার চেষ্টা করে। সঙ্গে পেট্রল নিয়ে আসে। এখন সব ঠিক আছে।”

ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার ইবনে মিজান বলেছিলেন, “তারা কেরোসিন পেট্রোল নিজেদের গায়ে ঢেলে আগুন লাগানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় আমরা গিয়ে তাদের কাছ থেকে বোতলগুলো নিয়ে নেই।

পরে সেনাবাহিনী এসে সম্মিলিতভাবে তাদের বোঝানোর পর তারা চলে যায়।”

এর আগে গত রোববার জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত চারজন ‘বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা’ করে বলে জানায় জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 

এ ঘটনার পর তাদেরকে তাৎক্ষণিক সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন শেরে-বাংলা নগর থানার ওসি ইমাউল হক।

চিকিৎসকের বরাতে তিনি বলেন, “আমাদেরকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। খবর পেয়ে আমরাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা বর্তমানে শঙ্কামুক্ত রয়েছেন।”

বিষপান করা চারজন হলেন- শিমুল, মারুফ, সাগর ও আখতার হোসেন।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান বলেন, “তাদেরকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে ওয়াশ করা হয়েছে। তারা বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আছেন এবং সুস্থ আছেন।” 

ঘটনার সময় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের নতুন সিইও কামাল আকবর।

সেখানে হাসপাতাল পরিচালকের সঙ্গে তার বৈঠক চলাকালে বিষপানের ঘটনাটি ঘটে।  

Link copied!