রোববার কোটা আন্দোলনকারীদের গণপদযাত্রা ও রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি

জাতীয় ডেস্ক

জুলাই ১৩, ২০২৪, ১০:৫৫ পিএম

রোববার কোটা আন্দোলনকারীদের গণপদযাত্রা ও রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি

কোটা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা/ ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

সরকারি চাকরিতে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রোববার (১৪ জুলাই) রাজধানীতে গণপদযাত্রা করে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। একই সঙ্গে আন্দোলনে থাকা সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও গণপদযাত্রা করে নিজ নিজ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেবেন।

শনিবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল লাইব্রেরি চত্বরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

নতুন কর্মসূচি ঘোষণার আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ জানান, কোটার যৌক্তিক সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত ছাত্র ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেবে না।

আন্দোলনে বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, “শিক্ষার্থীদের সাংবিধানিক অধিকারের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়াচ্ছে পুলিশ। আমরা প্রশাসনের কাছে সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করি। এ সময় রমনা থানার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার রেকর্ড শুনিয়ে তারা বলেন, আমরা চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, গত ১০ দিনের আন্দোলনে কোনও শিক্ষার্থী কোথাও কোনও হামলা করেনি। অথচ, অজ্ঞাতনামা হিসেবে মামলা করা হয়েছে। আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে সারাদেশে আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের যানবাহন ভাঙচুর, পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা এবং মারধরের ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় অনেক শিক্ষার্থীকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। শুক্রবার (১২ জুলাই) রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের পরিবহন বিভাগের গাড়িচালক খলিলুর রহমান বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় এ মামলা করেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১১ জুলাই কোটা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি ছিল। সে অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে অজ্ঞাতপরিচয় ছাত্ররা জড়ো হয়ে বিভিন্ন হলের সামনে দিয়ে প্রদক্ষিণ করে বিকেল ৪টার সময় স্লোগান দিতে দিতে শাহবাগ মোড়ের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন।

একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় অতিক্রম করে বেআইনি জনতায় আবদ্ধ হয়ে দাঙ্গা সৃষ্টি করে সরকারি দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করেন। তারা শাহবাগ মোড়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলেন ও পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করেন। এসময় কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের মারধর করে সাধারণ জখম করেন। পরে তারা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের দিকে অগ্রসর হতে থাকলে পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তারা ছাত্রদের বুঝিয়ে শুনিয়ে পুনরায় শাহবাগ মোড়ে ফিরিয়ে আনতে যায়। এ সময় বিএসএমএমইউয়ের পাশে নিরাপদ স্থানে রাখা এপিসি-২৫ ও ওয়াটার ক্যাননের চারদিকে ঘেরাও করে অনেক সংখ্যক আন্দোলনকারীরা উঠে উদ্দাম নৃত্য শুরু করেন।

তারা ওয়াটার ক্যানন চালককে গাড়ি থেকে জোর করে বের করার চেষ্টা ও গতিরোধ করেন। এর ফলে এপিসি ২৫ এর সামনের দুইটি এসএস স্ট্যান্ড, বনাটের উপরে বাম পাশে রেডিও অ্যান্টেনা এবং ডান পাশের পেছনের চাকার মাডগার্ড এবং ওয়াটার ক্যাননের বাম পাশের লুকিংগ্লাস ভেঙে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি করেন।

এ বিষয়ে শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। ছাত্রদের অন্যান্য সিনিয়র স্যাররা বুঝিয়ে শুনিয়ে এপিসি-২৫ ও ওয়াটার ক্যানন থেকে নামিয়ে আনেন এবং পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে পানির বোতল, টেপটেনিস বল ও ইটের টুকরো ছুড়ে মারেন। এতে অনেক পুলিশ সমস্য আঘাতপ্রাপ্ত হন।

মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, ঘটনাস্থলে উপস্থিত সব সিনিয়র কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে অজ্ঞাতপরিচয় ছাত্ররা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাহবাগের আন্দোলনে যোগ দিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বারডেম হাসপাতালের গেটের ব্যারিকেড ভেঙে পুলিশ সদস্যদের আহত করেন। তারা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন ধরনের কটূক্তি করেন। ছাত্ররা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা এবং শাহবাগ থানায় ছাত্রদের ধরে নিয়ে গেছে বলে গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে পুলিশকে মারতে তেড়ে আসেন ও পুলিশকে বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে শাহবাগ মোড় ত্যাগ করেন।

Link copied!