খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে চান ‘প্রধানমন্ত্রী’: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

অক্টোবর ৬, ২০২৩, ১১:১৬ পিএম

খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে চান ‘প্রধানমন্ত্রী’: মির্জা ফখরুল

শুক্রবার বিকালে গণঅধিকার পরিষদের এক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মির্জা ফখরুল।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে তারা এমন কথা বলছে যা মুখে আনা যায় না, অশালীন অরুচিকর কথা। এটা পরিষ্কার আপনি যে তার মৃত্যু চান, তাকে হত্যা করতে চান এটা পরিস্কার আপনার কথায়।”

শুক্রবার বিকালে গণঅধিকার পরিষদের এক সমাবেশে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “তারা(সরকার) বলতে শুরু করেছে এবং জোরেশোরে চিৎকার করে বলেছে যে, আমরা সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করব, সেইভাবে নির্বাচন হবে এবং সেটা সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ হবে। কিছুক্ষণ আগে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করে একই কথা বলেছেন।”

‘‘ এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা দিয়ে মানুষকে প্রতারণা করা, তাদেরকে বোকা বানানোর চেষ্টা করা এবং খালি মাঠে আমরা যেটাকে বলি ওয়াকওভার নিয়ে আবার সরকার গঠন করা… এটা করার ব্যাপারে বাধা এসেছে। কোত্থেকে এসেছে? পশ্চিমা বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলো তারা বাধা দিয়েছে… বলেছে, ওই ধরনের ওয়াকওভার মার্কা নির্বাচন চলবে না। এবার একটা সুষ্ঠু অবাধ অংশগ্রহনকারী নির্বাচন হতে হবে। আমরা বলেছি, ওই নির্বাচন হতে হলে হাসিনার অধীনে হবে না, সম্ভব নয়। সুতরাং আমাদের কথা একটাই যে, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না।”

এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের নমুনাও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘‘আপনারা বার বার বলেন যে, নির্বাচন সুষ্ঠু অবাধ হবে, নিরপেক্ষ হবে। যদি আপনি পেছন দিকে তাঁকিয়ে দেখেন গত ১৫ বছরে বিরোধী দল তথা বিএনপির ৪৫ লক্ষ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন, আপনারা ৬’শ অধিক নেতা-কর্মীকে গুম করে দিয়েছেন, হাজার হাজার মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করেছেন এবং পত্র-পত্রিকায় এখন বেরিয়ে এসেছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যত মামলা…আমাদের সাইফুল ইসলাম নিরবের বিরুদ্ধে সাড়ে ৫শ মামলা, সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর বিরুদ্ধে ৩’শ, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বিরুদ্ধে আছে প্রায় ৪’শ এরকম সমস্ত নেতাদের বিরুদ্ধে এমনকি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টা মামলা, আমার বিরুদ্ধে আছে ৯৮টা … এরকম সমস্ত নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা আছে।”

‘‘ যত নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে এত বছর তারা এই মামলাগুলো ফেলে রেখে দিয়েছিলো। এখন তারা অতি দ্রুত এই মামলাগুলো নিষ্পত্তি করে বিরোধী নেতাদের সাজা দেওয়ার জন্য স্পেশাল সেল তৈরি করেছে। তারা নির্দেশ দিয়েছে ম্যাজিস্ট্রেট, বিচারকদেরকে বিচার দুই মাসের মধ্যে শেষ করো এবং পরিস্কার বলেছে যেগুলোর চার্জশিট হয় নাই, সেগুলোর চার্জশিট করো অতিদ্রুত। এগুলোর নাম হচ্ছে তাদের সুষ্ঠু নির্বাচন।”

তিনি বলেন, ‘‘ যারা খেলবে মাঠে… উনি সবসময় বলেন না… আমাদের ওবায়দুল কাদের সাহেব(আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) উনি সবসময় বলেন খেলা হবে। খেলবেন কি? কার সঙ্গে খেলবেন? যাদের সঙ্গে খেলবেন তাদের জেলে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।”

‘জেগে উঠুন’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আমরা ঐক্য গঠন করেছি। যুগপত আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা এই সরকারকে পরিষ্কার করে এক দফা দাবি জানিয়েছি। এক দফা দাবিতে কোনো মতে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হতে পারে না, তাকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে এবং চাটুকার নির্বাচন কমিশনকে বাতিল করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তাদের মাধ্যমে নির্বাচন হতে হবে।”

‘‘ আমাদের রোড মার্চগুলোতে লক্ষ লক্ষ মানুষ এক বাক্যে বলেছে, এই সরকারের পদত্যাগ চাই। এদেশের মানুষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই আমি জনগনকে বলতে চাই, আমাদের ভাইদেরকে বলতে চাই, আমাদের মা-বোনদের বলতে চাই এদেশটাকে যদি বাঁচাতে চান তাহলে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে বেরিয়ে আসুন। জেগে উঠুন। বজ্রকন্ঠে সোচ্চার করে বলুন যে, অনেক হয়েছে, অনেক লুট করেছো, অনেক অত্যাচার করেছো, নির্যাতন করেছো, অনেক ভাইয়ের রক্তে রঞ্জিত করেছো হাত, অনেক মায়ের বুক খালি করেছো, অনেক স্ত্রীকে স্বামীহারা করেছো, অনেক পুত্রকে পিতা হারা করেছো … আর নয়। দয়া করে এখনো সময় আছে শান্তিতে শান্তিতে বিদায় হও। পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দাও, সংসদ বিলুপ্ত করো, নতুন নির্বাচন হবে সেই নির্বাচনে জনগন তার প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবে।”

সরকার পতনে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘‘ আজকে তরুণরা বেরিয়ে এসেছে। আমি আশাবাদী। তরুণ যুবকদের বলছি, আমরা যখন তরুণ যু্বক ছিলাম আমরা যুদ্ধ করেছি, যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। নব্বই সালে আমাদের ছাত্র-যু্বকেরা তারা সংগ্রাম করে স্বৈরাচারকে হটিযে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলো দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব।”

‘খালেদা জিয়াকে হত্যার অপচেষ্টা করছে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে তারা এমন কথা বলছে যা মুখে আনা যায় না… অশালীন অরুচিকর কথা। এটা পরিষ্কার আপনি যে তার মৃত্যু চান, তাকে হত্যা করতে চান এটা পরিস্কার আপনার কথায় যে…. আর কত বাঁচবে?।

‘‘বাঁচানোর আলা, মান দেয়া আলা আল্লাহ। এবার আপনাকেও গুনতে হবে। আপনি কতদিন টিকে থাকবেন এই ক্ষমতায়। জনগণ আপনাকে টেনে হিঁচড়ে নামাবে।”

শুক্রবার বিকাল সাড়ে তিনটায় পুরানা পল্টনে ফকিরাপুল কালভার্ট রোড মোড়ে পুরানা পল্টনে গণঅধিকার পরিষদের উদ্যোগে ‘গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের’ দাবিতে এই সংহতি সমাবেশ হয়। 

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূরের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানের সঞ্চালনায় সংহতি সমাবেশে কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবব্রাহিম, গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বিএলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, রিপাবলিকান পার্টির কেএম আবু হানিফ, সম্মিলিত শ্রমিক অধিকার পরিষদের এএম ফয়েজ উদ্দিন, গণঅধিকার পরিষদের সাইদুজ্জামান খান, হানিফ খান প্রদীপ, আবদুর জাহের, ফাতেমা জেসমিন, নূরে ইফাত সিদ্দিকী, আবু হানিফ, শহিদুল ইসলাম, শ্রমিক অধিকার পরিষেদের আবদুর রহমান, ছাত্র অধিকার পরিষদের আরিফুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

Link copied!