আজ থেকে আঠারো বছর আগে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্টের সকাল। দিনটিতে বাংলাদেশের মানুষ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায় সারাদেশে একযোগে বোমা হামলার খবরে। ওইদিন সকাল ১১ থেকে ১১:৩০ এর মধ্যে মুন্সিগঞ্জ বাদে দেশের ৬৩ জেলার প্রেসক্লাব, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ঢাকার ৩৪টিসহ সাড়ে ৪শ’ স্পটে প্রায় ৫শ’ বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিগোষ্ঠী জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। এতে দুইজন নিহত এবং শতাধিক আহত হন। এরমধ্য দিয়ে দেশে সংঘবদ্ধ উপস্থিতির জানান দেয় জঙ্গিরা।
হামলার ছয় মাসের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের মুখে জেএমবির সাংগঠনিক অবস্থা ভেঙে পড়ে। গ্রেপ্তার করা হয় জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আবদুর রহমান ও শীর্ষস্থানীয় নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইসহ তৎকালীন সব গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে। ২০০৭ সালে শীর্ষ সাত জঙ্গির ফাঁসির রায়ও কার্যকর হয়।
হামলার ঘটনায় সারা দেশে ১৫৯টি মামলা দায়ের হয়। এরমধ্যে ৯৪টির বিচার সম্পন্ন হয়েছে। এসব মামলায় শীর্ষ সাত জঙ্গিসহ ১৫ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। সব মিলিয়ে ৩২৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। বাকি মামলাগুলো বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এরমধ্যে ডিএমপিতে ১৮টি, সিএমপিতে ৮টি, আরএমপিতে ৪টি, কেএমপিতে ৩টি, বিএমপিতে ১২টি, এসএমপিতে ১০টি, ঢাকা রেঞ্জে ২৩টি, চট্টগ্রাম রেঞ্জে ১১টি, রাজশাহী রেঞ্জে ৭টি, খুলনা রেঞ্জে ২৩টি, বরিশাল রেঞ্জে ৭টি, সিলেট রেঞ্জে ১৬টি মামলা হয়।
ঢাকা জেলায় ৫টি ও ঢাকা রেঞ্জে ২৩টি মোট ২৮টি মামলা দায়ের হয়। মামলার সর্বশেষ তথ্য জানতে কথা হয় ঢাকা জেলার পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আব্দুল্লাহ আবু ভূঁইয়ার সাথে। তিনি জানালেন, ঢাকা জেলায় যে ৫টি মামলা ছিল তার মধ্যে ২টি নিষ্পত্তি হয়েছে। ৩টি প্রক্রিয়াধীন এবং এগুলোতে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। নিষ্পত্তি হয়েছে দুটির। একটিতে দণ্ড হয়েছে। আরেকটিতে আসামিরা খালাস পেয়ে গেছেন।
সিলেট জেলায় ৮টি ও সিলেট রেঞ্জে ১৬টি মামলা মোট ২৪টি মামলা দায়ের হয়। এ বিষয়ে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের এই প্রতিবেদকের কথা হয় সিলেট বিভাগের পাবলিক প্রসিকিউটর নওশাদ আহম্মেদ চৌধুরির সাথে। তিনি জানান, মোট ২৪টি ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাগুলো হয়। সবগুলো মামলার চার্জশিট পুলিশ আদালতে দাখিল করলেও বেশ কয়েকটি মামলার এখনো অভিযোগ গঠন হয়নি। আবার বেশিরভাগ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শুনানির পর্যায়ে রয়েছে।
রাজশাহী জেলায় ৪টি ও রাজশাহী রেঞ্জের ৭টি মোট ১২টি মামলা দায়ের করা হয়। এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগের পাবলিক প্রসিকিউটর মুসাব্বিরুল ইসলাম বলেন, সিরিজ বোমা হামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, জেএমবি ক্যাডার শফিউল্লাহ ওরফে তারেক, আবু ইছা ওরফে এনামুল হক আকন্দ, জহুরুল ইসলাম, এনামুল হক ওরফে সাংবাদিক এনামুল, আমানুল্লাহ ওরফে আবু সাইদ, কোরবান আলী ও তরিকুল ইসলাম।
এ ছাড়া এনামুল হক, আরিফ, আব্দুর রহমান ওরফে খালিদ, তরিকুল ইসলাম, শফিউল্লাহ, আবু ইছা, সিদ্দিকুল ইসলাম, হাসান, জাহাঙ্গীর ও আব্দুল আওয়াল, ক্যাডার আব্দুর রহিম। রায়ে একই সাথে তার ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে তাদের।
এছাড়াও অপর চার আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এরা হলেন জেএমবি ক্যাডার শফিউল্লাহ, তরিকুল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন ও আরিফ। সিরিজ বোমা হামলায় অপর একটি মামলার রায়ে তারা আগেই সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় তাদের এ মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
২ জন আসামির আগেই ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় বাকি জেএমবি ক্যাডার শফিউল্লাহ, এনামুল হক, আরিফ, তরিকুল ইসলাম, আবু ইছা, কোরবান, জহুরুল ও আমানুল্লাহর বিরুদ্ধে আদালতে বিচারকাজ শুরু হয়। তবে এই আটজনেরও নগরীর বোয়ালিয়া ও মতিহার থানায় দায়েরকৃত দুটি মামলায় সাজা হয়েছে। বাকিগুলো এখনও বিচারাধীন রয়েছে।
খুলনা জেলায় ৩টি ও খুলনা রেঞ্জে ২৩টি মোট ২৬টি মামলা দায়ের হয়। এই বিষয়ে পাবলিক প্রসিকিউটর এ কে এম ইকবাল হোসেন বলেন, খুলনা বিভাগে ৬টি মামলার মধ্যে একটি মামলার বিচারকার্য শেষ হলেও অপর ৫টি মামলার মধ্যে ৩টি মামলার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি পর্যায়ে রয়েছে। প্রতিটি মামলায় গড়ে ২০ থেকে ২৫ জন করে সাক্ষ্য গ্রহণও সম্পন্ন হয়েছে। বাকি সাক্ষ্যও দ্রুত সম্পন্ন হওয়ার পথে।
বরিশাল জেলায় ১টি ও রেঞ্জে ৭টি মোট ৮টি মামলা দায়ের করা হয়, এ বিষয়ে বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) ওবায়েদ উল্লাহ সাজু বলেন, জেলার একটি মামলা হয়েছিল বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে সেটির সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।
চট্টগ্রাম জেলায় ৮টি ও রেঞ্জে মামলা হয় ১১টি মোট ১৯টি মামলা দায়ের হয়। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা ও জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুর রশীদ জানান, ২০০৯ সালে মামলাগুলোর রায় হয়। এতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল জেএমবির চট্টগ্রামের তৎকালীন সামরিক কমান্ডার জাবেদ ইকবাল ওরফে মোহাম্মদ ও আলাউদ্দিন ওরফে রুবেলকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়। আলাউদ্দিন ঘটনার পর থেকে পলাতক।