বাধার মুখে বন্ধ হলো ‘লালন মেলা’, উদীচীর নিন্দা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

নভেম্বর ২৩, ২০২৪, ০৩:৩৫ পিএম

বাধার মুখে বন্ধ হলো ‘লালন মেলা’, উদীচীর নিন্দা

ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের নরসিংহপুরে দুই দিনব্যাপী ‘মহতী সাধুসঙ্গ ও লালন মেলা’ বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয় লোকজন ও বিভিন্ন ইসলামি দলের বাধার মুখে মেলা বন্ধ হয়ে যায় বলে জানা গেছে। নরসিংহপুরের মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমি প্রাঙ্গণে এ মেলার আয়োজন করা হয়।  

শুক্রবার ও শনিবার মেলা ও সাধুসঙ্গ উপলক্ষে কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাধু-গুরু ও লালন-ভক্তরা নারায়ণগঞ্জে এসেছিলেন। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় মেলা পরিচালনার অনুমতি দেয়নি প্রশাসন।

এদিকে হেফাজতে ইসলামসহ মৌলবাদী গোষ্ঠীর হুমকির মুখে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের নরসিংহপুর গ্রামে আয়োজিত লালন মেলার অনুমতি বাতিল এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের অপারগতা প্রকাশের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।

শুক্রবার দেওয়া এক বিবৃতিতে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, এ ঘটনার মাধ্যমে দেশে সংস্কৃতি চর্চার পরিবেশকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে।

ইনডিপেনডেন্ট ডিজিটালকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, ‘লালন মেলা আয়োজন নিয়ে স্থানীয় মসজিদের ইমাম, মুসল্লি ও বিভিন্ন ইসলামি দলের তীব্র আপত্তি আছে। এ জন্য তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেদন চাইলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা আছে বলে পুলিশ প্রতিবেদন দেয়। এ জন্য মেলার অনুমতি দেওয়া হয়নি।’   

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর মধ্য নরসিংহপুর এলাকায় মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমি প্রাঙ্গণে এ লালন মেলার আয়োজন করা হয়। এবারও মেলা আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল আশ্রম কর্তৃপক্ষ। সেই উপলক্ষে প্যান্ডেল তৈরিসহ নানা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল।

১৫ নভেম্বর মেলা বন্ধের দাবিতে ‘তৌহিদি জনতা’র ব্যানারে মধ্য নরসিংহপুর এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি করেন হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা। এদিন হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আবদুল আউয়াল এই মেলাকে ইমানবিধ্বংসী আখ্যা দিয়ে প্রতিহত করার ঘোষণা করেন। ওই নেতার হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ২০ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করেন মুক্তিধাম আশ্রমের লোকজন ও নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা।

মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ফকির শাহ্ জালাল জানান, প্রকাশ্যে তাকেসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লালন সাধু-গুরু-ভক্তদের হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের এখানে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। নাজেহাল করে ফিরে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। গণমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘আমরা তো এখানে মারামারি করার জন্য আসিনি। আমরা তো শান্তি চাই।

এদিকে, নরসিংহপুর বাইতুস সালাত জামে মসজিদের ইমাম আবদুল কাইয়ুম বলেন, ‘এই মেলায় ইমানবিধ্বংসী কাজ হয়। সেখানে নাচ-গানসহ অনৈসলামিক কার্যক্রম চলে। ওই মেলা প্রতিহত করা সবার ইমানি দায়িত্ব।’  

ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সেখানে মেলা আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হয়নি। লালন-ভক্তদের যাতে কেউ ক্ষতি না করতে পারে, সে জন্য তাদের নিরাপত্তায় সেখানে পুলিশ দেওয়া হয়েছিল।’

তবে এমন ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেন লালন-ভক্তরা। নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক কর্মীরাও এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা রফিউর রাব্বি গণমাধ্যমে বলেন, ‘লালন মেলা বন্ধ করার জন্য যে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি হুংকার দিয়েছে, প্রশাসন সেটাতে আপসরফা করেছে। কুষ্টিয়ার লালন-ভক্তদের নাজেহাল করে বের করে দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রশাসনের এমন অবস্থানের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’

Link copied!