নভেম্বর ৩, ২০২২, ০৮:৩৩ এএম
জেলহত্যা দিবস আজ। ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩ নভেম্বর) ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যার পর তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ,এএইচএম কামারুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে হত্যা করা হয়। এর আগে ১৫ আগস্টের পর এই চার জাতীয় নেতাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
জেল হত্যা দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়নে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করার পাশাপাশি জাতিকে নেতৃত্বহীন করার লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ৩ নভেম্বর স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ঘাতকচক্রের উদ্দেশ্য ছিল দেশে অগণতান্ত্রিক স্বৈরশাসনের উত্থানের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের চেতনা থেকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে মুছে ফেলা। কিন্তু ঘাতকচক্রের সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি।
যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার আদর্শ চির অম্লান থাকবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু সুখী-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। এটাই হোক জেলহত্যা দিবসে আমাদের অঙ্গীকার। তিনি জাতীয় চার নেতার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ।’
অপরদিকে, প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে জাতীয় চার নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন এবং তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বলেন, কারাগারের অভ্যন্তরে এ ধরনের বর্বর হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। জাতীয় চার নেতার এ আত্মত্যাগ বাঙালি জাতি চিরকাল শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।
স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এবং উন্নয়ন ও গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তি এখনো নানাভাবে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে-আশঙ্কা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে অরও বলেন, ‘এই অপশক্তির যে কোনো অপতৎপরতা-ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে।’
মুক্তিযুদ্ধের সব পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আসুন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের ধারা সমুন্নত রেখে সবাই মিলে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি। জেলহত্যা দিবসে এই হোক আমাদের সুদৃঢ় অঙ্গীকার।’
প্রখ্যাত সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেনহাস তার ‘বাংলাদেশ এ লিগ্যাসি অব ব্লাড’ গ্রন্থে ৩ নভেম্বর হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। এ কাজের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি ঘাতক দল গঠন করা হয়েছিল। এই ঘাতক দলের প্রতি নির্দেশ ছিল পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটার সঙ্গে সঙ্গে কোনো নির্দেশের অপেক্ষায় না থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে তারা জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করবে। ’৭৫-এর ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটানোর পর কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি: যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। সূর্য উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের সব দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো পতাকা উত্তোলন করে আওয়ামী লীগ। সকাল ৭টায় ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়।
এদিকে সকাল সাড়ে ৭টায় রাজধানীর বনানী কবরস্থানে জাতীয় চার নেতার কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। একইভাবে রাজশাহীতে জাতীয় নেতা কামারুজ্জামানের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এছাড়া জেলহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন।