মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে আগামীকাল (১ জুলাই) থেকে ৭ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ পালনে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। বুধবার (৩০ জুন) দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ওই প্রজ্ঞাপন জারি করে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব মো. রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ১ জুলাই (বৃহস্পতিবার) ভোর ৬টা থেকে সারাদেশে ৭ দিনের জন্য জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচল এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা বন্ধ থাকবে। কেবল ‘জরুরি নয়’, ‘খুব জরুরি’ হলেই বের হওয়ার বৈধতার সুযোগ থাকছে নাগরিকদের। কঠোর বিধিনিষেধে মোট ২১টি শর্ত মানতে হবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে যেসব বিধিনিষেধ:
১. সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে;
২.সড়ক, নৌ ও রেলপথে গণপরিবহণ (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সকল প্রকার যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে;
৩. শপিংমল/ মার্কিটসহ সকল দোকানপাট বন্ধ থাকবে;
৪. সকল পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে;
৫. জনসমাবেশ হয় এ ধরণের সামাজিক (বিবাহত্তোর অনুষ্ঠান, জন্মদিন, পিকনিক পার্টি ইত্যাদি), রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে;
৬. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে;
৭. ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে;
৮. আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিসেবা, যেমন-কৃষিপণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ,কীটনাশক, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ ও স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি) গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমুহের কর্মচারি ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদান সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে;
৯. পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক/লরি/কাভার্ড ভ্যান/ কার্গো ভেসেল এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে;
১০.বন্দরসমূহ (বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল) এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে;
১১. শিল্প-কারখানাসমূহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে;
১২. কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯:০০ টা থেকে বিকাল ৫:০০ টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে।সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন/বাজার কর্তৃপক্ষ/ স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে;
১৩. অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে;
১৪. টিকা কার্ড প্রদান সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে;
১৫. খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরা সকাল ৮:০০ টা থেকে রাত ৮:০০ টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয়(Online/Take away) করতে পারবে;
১৬. আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকেট প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহারপূর্বক যাতায়াত করতে পারবে;
১৭. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা প্রদান করবে;
১৮. ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন;
১৯. জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি,পুলিশ,র্যাব ও অনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। সেসঙ্গে স্থানীয়ভাবে বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রযোজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহ এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে;
২০. জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে;
২১. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন।