স্বল্পোন্নত দেশসমূহের ৫ম জাতিসংঘ সম্মেলনে (এলডিসি৫) অংশ নিতে কাতারের দোহায় গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ফাঁকে কাতারের সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার সাংবাদিক নিক ক্লার্ককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সাক্ষাৎকারে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, উন্নয়ন, গুম-হত্যা, দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি এবং সেখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেন তিনি।
রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে নিক ক্লার্কের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারে যখন রোহিঙ্গা নিপীড়ন শুরু হয়, রোহিঙ্গারা নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হয় তখন আমরা তাদের জন্য দুঃখ অনুভব করেছি। এরপর আমরা সীমান্ত খুলে দিয়েছি, আমরা তাদের আসতে দিয়েছি। এছাড়াও আমরা মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের সবার জন্য আশ্রয় ও চিকিৎসা দিই। পাশাপাশি আমরা মিয়ানমারের সাথেও কথা বলতে শুরু করি। আমরা তাদের বলি, আপনারা তাদের (রোহিঙ্গা) ফিরিয়ে নিন। দুর্ভাগ্যক্রমে তারা ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের নিজেদের দেশে ফিরে যেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে; কিন্তু এটা সত্যিই খুব কঠিন। যদিও আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা থাকার জায়গার ব্যবস্থা করেছি। ভাসানচর একটি ভালো জায়গা, থাকার জন্য ভালো জায়গা। সেখানে শিশুদের জন্যও ভালো সুবিধার ব্যবস্থা করেছি।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জীবনযাত্রার পরিস্থিতি এবং আগুনে ১২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গার আশ্রয় হারানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসলে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। তারা (রোহিঙ্গারা) একে-অপরের সঙ্গে লড়াইরত। তারা মাদক, অস্ত্র ও মানবপাচারসহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িত। তারা নিজেদের মধ্যে সংঘাতে লিপ্ত রয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ ও সেখানকার শরণার্থীরা বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সংকট থেকে মনোযোগ সরিয়ে বিশ্বের আকর্ষণ সৃষ্টি করেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যুদ্ধ (ইউক্রেনে) পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে। পুরো ফোকাস (দৃষ্টি) এখন যুদ্ধ এবং ইউক্রেন থেকে আসা শরণার্থীদের দিকে।
দেশকে উন্নয়নের পথে কীভাবে এগিয়ে নিলেন এ প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের পর শিক্ষার নিশ্চয়তা নিশ্চিত করেছি। তারপর একে একে মৌলিক অধিকারগুলোর পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির মাধ্যমে আমরা উন্নয়নের পথে এগিয়েছি। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়করণের পাশাপাশি প্রতিটি সেক্টরই বেসরকারিকরণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ২০০৯ সালে যখন সরকারের দায়িত্বে আসি তখন থেকে এখন পর্যন্ত দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চলমান আছে। এ কারণে দেশ এতটা উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছে। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে দেশ এখন উন্নত।
বর্তমান সরকার স্বৈরাচারী কি না এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনি যদি আমাকে স্বৈরাচারী সরকার বলেন, যখন আমাদের দেশ মিলিটারি স্বৈরাচার শাসনের অধীনে ছিল, সেই সময়টি নিয়ে কি বলবেন? যারা জনগণকর্তৃক নির্বাচিতও ছিলেন না।
পশ্চিমা গণমাধ্যমসহ আলজাজিরার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তৎকালীন প্রেসিডেন্ট, আমার বাবা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নির্মমভাবে খুন হয়েছিলেন। কিন্তু সেই খুনিদের নিয়ে কোনো কথা হয়নি।
দেশের গুম-হত্যার রাজনীতি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি সরকারের সময় দেশ লুটতরাজ ও দুর্নীতিতে জর্জরিত হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বেড়েছে শিক্ষার হার। বিএনপি ২০২১ সালে যখন ক্ষমতায় আসে, তারা শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে তা নয়, তারা মানুষ হত্যা করেছে। তারা আমাদের দেশকে ধ্বংস করেছে, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন দেশ দুর্নীতিতে প্রথম হয়েছিল। খুন-হত্যার রাজনীতি চলছিল। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
আসন্ন নির্বাচন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে কিনা নিক ক্লার্কের এই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলে, আমি জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছি। আমি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ও গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতে আওয়ামী লীগ বদ্ধ পরিকর।
এর আগে সম্মেলনে যোগ দিতে গত ৪ মার্চ কাতারে পৌঁছান শেখ হাসিনা। বুধবার (৮ মার্চ) বিকেলে তিনি দেশে ফেরেন।