সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে ডিমের দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। শুক্রবার (৮ অক্টোবর) ‘প্রতিদিন ডিম খাই, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াই’-এ প্রতিপাদ্যে সারাদেশে বিশ্ব ডিম দিবস উদযাপন হচ্ছে।
রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ পরিকল্পনার কথা জানান।
ডিম খেতে সব বয়সের জনগণকে উৎসাহিত করার জন্য অনুষ্ঠানে প্রতিকী হিসেবে দুজন শিশু ও দুজন বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে ডিম খাওয়ান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব।
এ সময় মন্ত্রী জানান, ‘সমৃদ্ধ জাতি গড়তে হলে পরিপূর্ণ পুষ্টিসম্মত খাবার নিশ্চিত করতে হবে। পুষ্টিসম্মত খাবারের অন্যতম উপাদান ডিম। ডিমের প্রয়োজনীয়তা গ্রামে-গঞ্জেসহ সকল জায়গায় ছড়িয়ে দিতে হবে। দেশের প্রতিটি মানুষ যেন অনুধাবন করতে পারে, খাবারের শ্রেষ্ঠতম একটা উপকরণ ডিম। এই খাদ্য উপাদান যেন ব্যয়বহুল না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যতটুকু ব্যয় হয় সেটা কীভাবে কমানো যায় সেজন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে যৌথ পরিকল্পনা নেয়া হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে ব্যয়ের কারণে ডিম যেন মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে না যায়। ডিমের উৎপাদন বৃদ্ধি ও সহজলভ্য করার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে হবে, স্বনির্ভর করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুণগত উন্নয়নে বিশ্বাস করেন। তিনি দেশের সকল কিছুতে টেকসই উন্নয়নের কথা বলেন। প্রতিবেশী দেশসমূহের তুলনায় বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ খাতের এগিয়ে যাওয়া বিস্ময়কর। এ খাতের উন্নয়নে শেখ হাসিনা সরকার ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘পোল্ট্রি খাতের সমস্যা সমাধানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় তৎপর রয়েছে। করোনার সময় পোল্ট্রি ও ডেইরি খাতের বিপর্যস্ত অবস্থা কাটিয়ে উঠার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে সমস্যা সমাধান করা হয়েছে। বার্ড ফ্লু সংক্রমণ থেকে পোল্ট্রি খাতকে রক্ষার জন্য শেখ হাসিনা সরকার যেভাবে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে, সে ধারা বজায় রেখে এ খাতকে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বর্তমানে পোল্ট্রি ও ফিশ ফিডের মূল্য বৃদ্ধি বন্ধ করার জন্য আমরা তৎপর রয়েছি। আমি আশ্বস্ত করতে চাই পোল্ট্রি খাতকে বিকশিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষ থেকে যত প্রকার সহযোগিতা, পৃষ্ঠপোষকতা দরকার, সেটা দেওয়া হবে। যাতে বাংলাদেশে এ খাত পিছিয়ে না পড়ে।’
‘পুষ্টি চাহিদা মেটাতে বেশি বেশি ডিম খেতে হবে। ডিম খাওয়া নিয়ে বিভ্রান্তির বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে এসে মানুষকে সচেতন করতে হবে। পুষ্টি চাহিদা পূরণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারলে আমাদের আয়ুষ্কাল বাড়বে। আজ দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। মাতৃমৃত্যুর হার, শিশু মৃত্যুর হার অনেক কমে গেছে। এটা এমনি এমনি আসেনি। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সম্মিলিত প্রয়াসে চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যের যোগান ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে’-যোগ করেন মন্ত্রী।
বিপিআইসিসি’র সভাপতি মসিউর রহমানের সভাপতিত্বে অলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব রওনক মাহমুদ। সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডাঃ শেখ আজিজুর রহমান ও এফএও’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ডি সিম্পসন। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বিপিআইসিসি’র সহসভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শওকত আলী এবং বারডেম হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহার নাহিদ মহুয়া। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, বিএলআরআই ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাক্তন ও বর্তমান কর্মকর্তাবৃন্দ এবং পোল্ট্রি খাতের বিশেষজ্ঞ, বিপিআইসিসি, ওয়ার্ল্ড পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা ও এফএও’র প্রতিনিধিবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), ওয়ার্ল্ড পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা এবং বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) যৌথভাবে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে।