ডিসেম্বর-১১: যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মানতে ভারত ও পাকিস্তানকে চাপ দেয় যুক্তরাষ্ট্র

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ডিসেম্বর ১১, ২০২২, ১২:০৩ এএম

ডিসেম্বর-১১: যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মানতে ভারত ও পাকিস্তানকে চাপ দেয় যুক্তরাষ্ট্র

১১ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে। এদিন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নিতে পাকিস্তান ও ভারতকে চাপ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এ দিন কুষ্টিয়া জেলা শত্রুমুক্ত হয়।

১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির জন্য একটি স্মরণীয় দিন। পাক হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে এ দিন যশোরে প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয় টাউনহল ময়দানে। সেই জনসভায় মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান। ওয়াশিংটন পোস্ট, লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ ও নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকাসহ বহু বিদেশি সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন জনসভায়।

https://www.youtube.com/watch?v=xzdtItDWGxg

১১ ডিসেম্বর মুজিবনগর সরকার থেকে প্রকাশিত জনগণের উদ্দেশে এক নির্দেশনায় বলা হয়, ‘ওই খুনিগুলোকে (ধরা পড়া বা সারেন্ডার করা পাকিস্তানি সৈন্য) তোমরা মেরে ফেলো না, মুক্তিবাহিনীর হাতে ওদের হস্তান্তর করো। হয়তো ওদের বিনিময়ে আমরা জাতির পিতাকে উদ্ধার করতে পারব।’

এ দিনটি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জন্য এক বিষাদের দিন। নিশ্চিত পরাজয় জেনে যুদ্ধবিরতির জন্য প্রাদেশিক সরকারের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী জাতিসংঘ সদর দফতরে জরুরি বার্তা পাঠান।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে উত্থাপিত যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নিতে ভারত ও পাকিস্তান উভয়কেই চাপ দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র রোনাল্ড জিগলার বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব মেনে নেওয়া ভারত-পাকিস্তান উভয়ের জন্যই অত্যাবশ্যক।

১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান লে. জেনারেল নিয়াজির কাছে এক বার্তায় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জানান, মার্কিন সপ্তম নৌবহর বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। চীনও যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ দিন বিকেল ৩টা থেকে ঢাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়।

ডিসেম্বর মাসের এই দিন জাতিসংঘের অনুরোধে বিদেশি নাগরিকদের স্থানান্তরের জন্য ঢাকা বিমানবন্দরে সাময়িক সময়ের জন্য বিমান হামলা স্থগিত করে ভারত।

মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা ঢাকার প্রত্যেক এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকার চার পাশে মিত্রবাহিনী নির্দিষ্ট এলাকায় রাতে ছত্রীসেনা অবতরণ করায়। মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী বীরবিক্রমে ঢাকা অভিমুখে এগিয়ে আসে।

একাত্তরের এই দিনে, জামালপুর, ময়মনসিংহ, গাইবান্ধা, চণ্ডীপুর, টাঙ্গাইল, কুষ্টিয়া, ফুলছড়িহাট ও বাহাদুরবাদ ঘাটসহ মুক্ত হয় বাংলাদেশের ১২টি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর ছয় দিনব্যাপী অবরোধ ও প্রচণ্ড যুদ্ধের পর এ দিন ভোরে জামালপুর হানাদারমুক্ত হয়। জামালপুর গ্যারিসনে অবস্থানকারী পাকিস্তানি বাহিনী ২১ বেলুচ রেজিমেন্টের ছয় জন কর্মকর্তা ও ৫২২ জন সেনা যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। হানাদেরদের মধ্যে নিহত হয় ২১২ জন, আর আহত হয় ২০০ জন।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিভিন্ন বই-পুস্তক ও গবেষণা থেকে সংগৃহীত ঘটনাবলী নিয়ে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের দর্শক ও পাঠকদের জন্য প্রতিবেদন সিরিজ ‘বিজয়ের দিনলিপি’ তৈরি করা হয়েছে। দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের ইউটিউব চ্যানেলেও প্রতিবেদনটি ভিজুয়ালি দেখা যাবে।  

Link copied!