তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে ১৯ জনের মৃত্যু

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ২৬, ২০২৩, ০৩:৪৬ পিএম

তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে ১৯ জনের মৃত্যু

অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে আফ্রিকার উত্তর উপকূলে ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত তিউনিসিয়ার সাফাক্স উপকূলে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে একটি নৌকা ডুবে যাওয়ায় ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন আরও ৩৪ জন।

একটি মানবাধিকার সংগঠনের বরাত দিয়ে রবিবার কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সাব-সাহারান আফ্রিকান অঞ্চলের এসব শরণার্থী ও অভিবাসনপ্রত্যাশী ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। তবে তিউনিসিয়ার মাহদিয়া উপকূলে নৌকাটি ডুবে যায়।

সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপগামী বিশেষ করে ইতালি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কাছে তিউনিসিয়া অন্যতম একটি কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এর আগে, দেশটির সাফাক্স উপকূলে গত চারদিনে পাঁচটি অভিবাসী বোঝাই নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণ হারায় ৯জন। আর নিখোঁজ রয়েছেন ৬৭ জন।

ইতালির গণমাধ্যম এএনএসএ ‘র  প্রতিবেদনে রবিবার গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড দুই হাজারের বেশি অভিবাসন প্রত্যাশী ইতালিতে পৌঁছানোর খবর প্রকাশের দিনই নৌকাডুবিতে ১৯ জনের মৃত্যুর খবর আসলো।

ফোরাম ফর সোস্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক রাইটস(এফটিডিইএস) নামে একটি মানবাধিকার সংগঠনের কর্মকর্তা রমধানে বেন আমর রয়টার্স নিউজ এজেন্সিকে বলেন, তিউনিসিয়ার সাফাক্স সমুদ্র সৈকত থেকে শরণার্থী ও অভিবাসনবোঝাই নৌকাটি যাত্রা শুরু করার পর নৌকাটি তিউনিসিয়ার মাহদিয়া উপকূলে ডুবে যায়। তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড পাঁচজনকে উদ্ধার করতে পেরেছে। তবে তিউনিসিয়ান কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি।

তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড জানিয়েছে, গত চার দিনে তারা ৮০টি নৌকা থামিয়ে তিন হাজারেরও বেশি মানুষকে আটক করেছে। আটক হওয়াদের বেশিরভাগই আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চল থেকে এসেছেন।

জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত তিউনিসিয়া থেকে ১২ হাজার শরণার্থী ইতালিতে পৌঁছেছেন। গত বছরের এই সময়ে যা ছিল মাত্র ১ হাজার ৩০০ জন। আগে লিবিয়া ছিল এ অঞ্চল থেকে ইতালি যাওয়ার প্রধান ঘাঁটি।

কেন ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইতালি?

ইউরোপকে অনেকে স্বপ্নের সোনার হরিণ বলে অনেকে মনে করে থাকেন। তাদের ধারনা দেশটিতে গেলে জীবনের ধরণই পাল্টে যাবে, হাতে আসবে কাড়ি কাড়ি টাকা, সমাজে বাড়বে প্রভাব প্রতিপত্তি। আর তাই উন্নত জীবন আর বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচাতে বাংলাদেশসহ অনেক দেশের লোকজন ইউরোপে যাচ্ছেন। এসব অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বেশিরভাগেরই গন্তব্য ইতালি। কয়েক বছর ধরে ইউরোপের এই দেশটিতে যাওয়ার প্রবণতা অনেক বেড়ে গেছে।

অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার অন্যতম পথ হচ্ছে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে প্রবেশ করা। ইতালি প্রবেশের অন্যতম রুট বা সুবিধাজনক জায়গা হচ্ছে আফ্রিকার দেশ লিবিয়া ও তিউনিসিয়া। আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে দারিদ্র্যের কারণে লিবিয়া হয়ে হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিচ্ছেন। 

 

বাংলাদেশ,ভারত, ইন্দোনেশিয়াসহ এশিয়া,আফ্রিকা ও মধ্যপা্চ্যের বিভিন্ন দেশের নাগরিকেরা উন্নত জীবন গড়া ও ভাগ্যের  চাকা বদলানোর উদ্দেশ্য নিয়ে নানা উপায়ে লিবিয়া পৌঁছে। তারপর দেশটির  জুয়ারা উপকূল  থেকে নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অনেকে ইতালি পৌঁছে থাকে।জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকাডুবিতে অনেকের মৃত্যু ঘটে। তবে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার রুট হিসেবে বর্তমানে তিউনিসিয়া উপকূলকেই বেছে নিয়েছে আন্তির্জাতিক মানবপাচারকারীরা। ইউরোপে পাড়ি দেওয়ার ক্ষেত্রে আফ্রিকানদের কাছে তিউনিসিয়া একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। দেশটির সাফাক্স উপকূল থেকে অনেকেই নৌকায় ভেসে ইতালিতে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। আর  এই রুটটিই বর্তমানে ইউরোপ পাড়ি দেওয়ার অন্যতম রুট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

Link copied!