অবশেষে ঢাকায় সরবরাহ শুরু হয়েছে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নির্মিত সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে শনিবার এই বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। সঞ্চালনের দায়িত্বে থাকা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সূত্র এ তথ্য গণমাধ্যমকে জানিয়েছে।
এদিন বিকেল ৪টা ৪৬ মিনিটে ঢাকার আমিনবাজার-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুৎ প্রবাহ (লোড ফ্লো) শুরু হয়। ঢাকার উপকণ্ঠে আমিনবাজার গ্রিড উপকেন্দ্রে এই লাইনের মাধ্যমে প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে লোড বাড়ানো হবে।
গত ১৫ ডিসেম্বর দুপুরে গোপালগঞ্জ গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে ৪০০ কেভি ভোল্টেজ দিয়ে লাইনটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। চালুর পর থেকে লাইনটি বিদ্যুতায়িত রয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের দুই বছর পর সেই বিদ্যুৎ ঢাকার আমিনবাজার বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র দিয়ে সরবরাহ শুরু হলো।
১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটির সময়মতো সঞ্চালন লাইন নির্মাণ না হওয়ায় কেন্দ্রটিতে পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছিল না। কেন্দ্রটির অর্ধেক সক্ষমতায় এতদিন উৎপাদন করা হচ্ছিল। সেই বিদ্যুৎ গোপালগঞ্জ ও বরিশাল অঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছিল। পায়রার বিদ্যুৎ ঢাকায় আসার মধ্য দিয়ে কেন্দ্রটি এখন পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন করতে পারবে। এতে আগামী গ্রীষ্মে লোডশেডিং মোকাবিলা সহজ হবে বলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ মনে করছে।
বিদ্যুতের সঞ্চালনের দায়িত্বে থাকা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আমিনবাজার-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইনে শনিবার বিকেলে সফলভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। আগেই পায়রা থেকে গোপালগঞ্জ পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন নির্মাণ শেষ হয়েছিল। গোপালগঞ্জ থেকে আমিনবাজার ৮২ দশমিক ৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করতে হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পদ্মা নদীর সাড়ে ৭ কিলোমিটার অতিক্রম করা (রিভার ক্রসিং)। নদীর ভেতর পাইলিং করে সেখানে বিদ্যুতের টাওয়ার নির্মাণ করা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। নদীর মধ্যে দুই পার মিলে পদ্মা অতিক্রম করতে ১১টি উচু টাওয়ার নির্মাণ করতে হয়েছে।
২০১৪ সালে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য সরকারের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল) ও চায়না মেশিনারিজ কোম্পানির (সিএমসি) মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়। ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের দুটি কেন্দ্র নির্মাণে এই চুক্তি হয়। এখানে এনডব্লিউপিজিসিএল ও সিএমসির সমান মালিকানা রয়েছে। কেন্দ্র দুটি পরিচালনার জন্য দুই কোম্পানি যৌথভাবে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) প্রতিষ্ঠা করে।
২০১৬ সালের মার্চে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। ২০২০ সালের ১৫ মে ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিটটির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। এরপর ওই বছরের ৮ ডিসেম্বরে কেন্দ্রটির ৬৬০ মেগাওয়াটের দ্বিতীয় ইউনিটটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসে। কেন্দ্রটি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের অভাবে ঢাকার আমিনবাজারে আনা যাচ্ছিল না। ফলে স্থানীয়ভাবে ব্যবহার হচ্ছিল এই বিদ্যুৎ। কিন্তু স্থানীয়ভাবে এই বিপুল পরিমাণ বিদ্যুতের চাহিদা না থাকায় কেন্দ্রটি পূর্ণসক্ষমতায় উৎপাদনে যেতে পারেনি।
সঞ্চালন লাইনের অভাবে পায়রার পূর্ণ সক্ষমতা ব্যবহার করতে না পারায় প্রতি মাসে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানিকে ১০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এর মধ্যে পিডিবি দিচ্ছে ৮০ কোটি টাকা, পিজিসিবি দিচ্ছে ২০ কোটি টাকা। এখন পায়রার বিদ্যুতের পূর্ণ ব্যবহারের ফলে সেই ভর্তুকির সুফল মিলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রসঙ্গত, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীতে কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিক থেকে এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ কেন্দ্র।