প্রকৌশলী স্বামীর নৃশংস নির্যাতনে গৃহবধূর মৃত্যু

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ১৯, ২০২৩, ০১:২৭ এএম

প্রকৌশলী স্বামীর নৃশংস নির্যাতনে গৃহবধূর মৃত্যু

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে স্বামীর অত্যাচারে গুরুতর আহত গৃহবধূ ফাতেমা নাসরিন (৪৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে মারা গেছেন। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার তাঁর স্বামী গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মির্জা শাখাওয়াত হোসেন (৪৯) কারাগারে আছেন।

শুক্রবার দিবাগত রাতে মারা যান ফাতেমা নাসরিন। তিনি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের ভাতিজি ছিলেন।

পুলিশ সূত্র ও নিহতের স্বজনেরা জানান, ৮ মার্চ মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন রোডের বাসায় ফাতেমা নাসরিনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন শাখাওয়াত। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ফাতেমা। এক কোটি টাকা যৌতুক না দেওয়ায় শাখাওয়াত বঁটি দিয়ে কুপিয়ে ও মসলা বাটার হামান দিস্তা দিয়ে ফাতেমার মাথায় আঘাত করেছিলেন বলে স্বজনদের অভিযোগ। এ ঘটনার পরদিনই শাখাওয়াতকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

মোহাম্মদপুর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, শাখাওয়াত বর্তমানে কারাগারে আছেন।

মামলার বরাত দিয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, ঠাকুরগাঁওয়ের ফাতেমা নাসরিন স্বামী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন রোডের একটি বাসায় থাকতেন। বিয়ের পর থেকে ফাতেমার স্বামী শাখাওয়াত যৌতুক চেয়ে আসছিলেন। ফাতেমার বাবার বাড়িতে থাকা জমি বিক্রি করে এক কোটি টাকা যৌতুক দিতে ফাতেমাকে চাপ দিচ্ছিলেন শাখাওয়াত। 

পরিবারের সবাই ওই জমির অংশীদার জানালে শাখাওয়াত ক্ষিপ্ত হয়ে ফাতেমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালান। চলতি বছরের জানুয়ারিতে চাকরি সূত্রে ফাতেমার স্বামী শাখাওয়াত পঞ্চগড়ে ছিলেন। সেখানে ফাতেমার ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। 

গত ১০ জানুয়ারি ফাতেমা বাদী হয়ে পঞ্চগড় সদর থানায় তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় পুলিশ শাখাওয়াতকে গ্রেপ্তার করে। এরপর ফাতেমা তাঁর একমাত্র মেয়েকে নিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন রোডের বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছিলেন। জামিনে মুক্ত হয়ে ফাতেমার স্বামী শাখাওয়াতও বদলি হয়ে ঢাকায় আসেন এবং তাঁর স্ত্রীর সাথে থাকতে শুরু করেন।

ফাতেমার বোন ও মামলার বাদী আরজিনা বেগম শনিবার রাতে গণমাধ্যমকে জানান, মামলা করায় শাখাওয়াত ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ৮ মার্চ শাখাওয়াত আবার যৌতুক চান। প্রতিবাদ করলে শাখাওয়াত বঁটি দিয়ে ফাতেমাকে এলোপাতাড়ি কোপান। এতে হাত, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়। একপর্যায়ে শাখাওয়াত হামান দিস্তা দিয়ে ফাতেমার মাথায় আঘাত করলে তিনি মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তখন রক্তাক্ত অবস্থায় ফাতেমাকে উদ্ধার করে নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আরজিনা আরও বলেন, ‘সরকারি চাকরি করেও সে ব্যবসা করার জন্য টাকা চাইতো। আমাদের পারিবারিক সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা না দেওয়ায় সে আমার বোনের এই অবস্থা করেছে।’

এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ গণমাধ্যমকে জানান, একজন সরকারি কর্মকর্তার এমন আচরণ দুঃখজনক। যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা দায়েরের পরপরই আসামিকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন। নির্যাতনের শিকার ওই নারী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। আমরা মামলাটি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছি।

Link copied!