জানুয়ারি ১২, ২০২২, ০৯:০২ পিএম
নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পরিচয়পত্র জরিপের কাজ শেষে অফিস থেকে তাদের ‘সুবর্ণ নাগরিক’ কার্ড দেওয়া হচ্ছে। আর সেই কার্ড দিতেই প্রতিবন্ধীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠছে অফিস সহায়ক আখেরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। তিনি প্রতিবন্ধীদের জরিপ কাজ শেষে এ কার্ড সংগ্রহ করতে প্রতিবন্ধীদের কাছ থেকে সর্বনিম্ন ৩০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত টাকা নিচ্ছেন।
বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার কিসমত গণকৈড় ইউনিয়নের উজালখলসী গ্রামের প্রতিবন্ধী আব্দুর রশিদ (৫৫) তার প্রতিবন্ধী পরিচয়পত্র ‘সুবর্ণ নাগরিক’ আইডি কার্ড নিতে আসেন উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তার কার্যালয়ে। এ সময় কার্যালয়ের অফিস সহায়ক আখেরুল নানা টাল বাহানা শুরু করেন এবং মিষ্টি খেতে ১০০ টাকা দাবি করেন। শেষ পর্যন্ত ৫০ টাকা নিয়ে প্রতিবন্ধী রশিদকে ‘সুবর্ণ নাগরিক’ কার্ড হাতে ধরিয়ে দেন আখেরুল।
প্রতিবন্ধী আব্দুর রশিদ জানান, অফিস সহায়ক আখেরুল ১০০ টাকা দাবি করে। আমি গরিব মানুষ। গাড়ি ভাড়ার টাকাও মানুষের কাছ থেকে চেয়ে এনেছি। কোথায় থেকে তাকে টাকা দেব। অবশেষে ৫০ টাকা আখেরুলকে দিয়ে কার্ড হাতে পেয়েছি।
কেবল প্রতিবন্ধী আব্দুর রশিদ না, উপজেলার নিবন্ধিত ১ হাজার ৯৯ জন প্রতিবন্ধীর জরিপ কাজ চলছে। প্রতিবন্ধীদের ডাক্তারি শনাক্তের পর আবেদন ফরমে জরিপের কাজ শেষে ‘সুবর্ণ নাগরিক’ আইডি নিতে সবার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন আখেরুল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিবন্ধীর স্বজন এক মহিলা জানান, কার্ড হাতে ধরিয়ে দেওয়ার পর ২০০ টাকা দাবি করেন আখেরুল। আমার কাছে এত টাকা ছিল না। তাড়াহুড়ার সময় অনেক অনুরোধ বিনয় করে শেষ পর্যন্ত ৩০ টাকা দিয়েছি। এতে তিনি দ্বিমত করলেও শেষ পর্যন্ত ৩০ টাকাই নিয়েছেন।
এদিকে, টাকা নেওয়ার অভিযোগ অকপটে স্বীকার করে অফিস সহায়ক আখেরুল ইসলাম বলেন, ৩০ টাকা, ৫০ টাকা, ১০০ টাকা, এটা ঘুষ না। আমি মিষ্টি খেতে নিয়েছি। তারাও ইচ্ছা করে আমাকে মিষ্টি খেতে দিয়েছেন। আমি জোর করে কোন প্রতিবন্ধীর কাছে থেকে টাকা গ্রহণ করি নি। পরে তিনি ভুল স্বীকার বলেন, আমি সম্প্রতি চাকরিতে যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার ভুল হয়েছে। আমি কখনো আর এ ধরনের কাজ করব না। এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে না আনতে অনুরোধ করেন তিনি।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আ. ন. ম রাকিবুল ইসলাম বলেন, প্রতিবন্ধীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ডাক্তারি শনাক্তের পর কার্যালয় থেকে ‘সুবর্ণ নাগরিক’ দেওয়া হচ্ছে। এতে প্রতিবন্ধীদের কোন টাকা পয়সা দিতে হবে না। কেউ যদি টাকা পয়সা চায় তা অমানবিক। তবে উনি (আখেরুল) টাকা পয়সা নিচ্ছেন কিনা, এমন অভিযোগ আমার কাছে নেই। বিষয়টা খতিয়ে দেখা হবে।