ঐক্য ন্যাপের সভাপতি ও দেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক পঙ্কজ ভট্টাচার্য আর নেই। প্রবীণ এই রাজনীতিক রবিবার রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। ৮৩ বছর বয়সী এই রাজনীতিক শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন। গত সোমবার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এরপর গতকাল শনিবার সকাল থেকে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। এ অবস্থায় রবিবার রাত ১২টা ২৮ মিনিটে পঙ্কজ ভট্টাচার্য মারা যান।
পঙ্কজ ভট্টাচার্যের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন তাঁর ভায়রা ডা. মানস বসু গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রাজধানীর হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
পঙ্কজ ভট্টাচার্য ১৯৩৯ সালের ৬ আগস্ট চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শিক্ষাজীবন কেটেছে চট্টগ্রাম ও ঢাকায়। ছাত্র আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ততার কারণে ১৯৫৯ সালে তিনি চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হন। পঙ্কজ ভট্টাচার্য গত শতকের ষাটের দশকের ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী বাংলাদেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী, একজন নেতৃস্থানীয় সংগঠক।
১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও পরে কার্যকরী সভাপতি নির্বাচিত হন পঙ্কজ ভট্টাচার্য। তিনি ১৯৬৬ সালে ‘স্বাধীন বাংলা ষড়যন্ত্র’ মামলায় অভিযুক্ত হয়ে জেল খাটেন।
পঙ্কজ ভট্টাচার্য মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়ন-কমিউনিস্ট পার্টি গেরিলা বাহিনীর সংগঠক ছিলেন। স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৯৩ সালে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম গঠনের সময় তিনি ছিলেন দলটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। পরে সম্মিলিত ‘সামাজিক আন্দোলন’ নামে দেশের প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক মানুষের একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলেন। ২০১৩ সালে তিনি ঐক্য ন্যাপ নামে রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। অল্প বয়সে কৃতী ফুটবলার ছিলেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য।
পঙ্কজ ভট্টাচার্য লেখালেখিতেও ছিলেন নিমগ্ন। চলতি বছরের অমর একুশে বইমেলায় তাঁর লেখা আত্মজীবনীমূলক বই ‘আমার সেই সব দিন’ প্রকাশিত হয়।