যেকারণে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাপা নেতারা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

মে ২৫, ২০২৩, ০৩:৫১ পিএম

যেকারণে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাপা নেতারা

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন যুত্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের সাথে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির(জাপা) নেতারা। বৃহস্পতিবার রাজধানী গুলশানে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে বেলা ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে ওই বৈঠক শুরু হয়।

জাতীয় নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পরের দিনই মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাথে বৈঠকে বসলেন দেশের প্রধান তিন রাজেনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতারা।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে  আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে দলটির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও  সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. এ আরাফাত; বিএনপি নেতাদের মধ্যে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ এবং জাতীয় পার্টির মহাসচিব অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্য মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে জাতীয় পার্টির মহাসচিব অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু গণমাধ্যমকে বলেন, বৈঠকে মার্কিন সরকারের ঘোষণা করা ভিসানীতি সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত জানতে চেয়েছে। তিন দলের পক্ষ থেকে মতামত দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়েও আওয়ামী লীগ-বিএনপি নেতারা কথা বলেছেন।”

জাতীয় পার্টির এই মহাসচিব আরও বলেন, “নির্বাচন যেন ফেয়ার হয় সে কারণেই তারা ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, এটা বোঝা গেছে। এ ব্যাপারে আমাদের দলও একমত। আমরা বলেছি, মার্কিন সরকার যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।”

প্রসঙ্গত,জাতীয় নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেতে হলে নতুন এক নীতিমালার শর্ত পূরণ করতে হবে। এর আওতায় বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে তার জন্য দায়ী ব্যক্তি এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

 

বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এক বিবৃতিতে ওই ঘোষণা দিয়েছেন। বিবৃতিটি তিনি টুইটারেও শেয়ার করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র গত ৩ মে বাংলাদেশ সরকারকে ওই সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

ব্লিঙ্কেন ওই টুইট বার্তায় বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে আমি আজকে একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করছি। এই নীতির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যেকোনো বাংলাদেশি ব্যক্তির জন্য ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপে সক্ষম হবে।’

যাঁদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ হবে, তাঁদের মধ্যে বাংলাদেশের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা–কর্মচারী, সরকারপন্থী ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।

গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে, এমন কাজের মধ্যে রয়েছে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা দেওয়া এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা।

ব্লিঙ্কেন আরও বলেছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমসহ সবার। যারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায়, তাদের সবাইকে আমাদের সমর্থন দিতে আমি এই নীতি ঘোষণা করছি।

এদিকে, বৃহস্পতিবার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির কারণে অগণতান্ত্রিক শক্তিগুলো সহিংসতা থেকে দূরে থাকবে।

Link copied!