প্রবাদে আছে, মাঘের শীতে বাঘও পালায়। কিন্তু মাঘ আসার অপেক্ষাও করতে হয়নি। পৌষের মাঝামাঝিতেই বাঘ পালানোর মতো শীত নেমেছে দেশে। ঢাকায়ও শীতে বিপর্যস্ত অবস্থা সবার। অনেকে বলছেন, ঢাকায়ও গ্রামের মতো শীত পড়ছে। কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা অধিক মাত্রায় কমে যাওয়ায় পৌষের মাঝামাঝিতেই তীব্র শীতে কাঁপছে পুরো দেশ।
দেশের সর্বত্র শীত ও কুয়াশার দাপট বেড়েছে। জানুয়ারি মাসের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়, চলতি মাসে ২-৩টি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে একটি মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে। সারা দেশে সর্বত্র সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রয়েছে। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনিম্ন ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, ‘পুরো এই মাসজুড়েই শীতটা থাকবে। তবে এই কদিন যে ঠাণ্ডা পড়ছে সেটা আরও দুই-তিনদিন থাকবে।’
বুধবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। আকাশ আংশিক মেঘলা এবং সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। আগামী তিন দিনে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় দেশের উত্তর, উত্তর পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি হচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
টানা কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা কমতে থাকায় পৌষের মাঝামাঝিতেই দেশের সর্বত্র শীত ও কুয়াশার দাপট বেড়েছে। শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও উত্তরের হিম কাঁপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে দেশবাসীকে।
সকাল থেকেই কাঁপতে কাঁপতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-কর্মক্ষেত্রমুখী হচ্ছে সবাই। ভারী কাপড়েও হিম বাতাস শীতল করে দিতে বাঁধ মানছে না। জীবন ও জীবিকার তাগিদের কাছে শীতের কামড় যে বড় নয় তা ঢাকার পথে নামলেই উপলব্ধি করা যায়।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এই পরিচ্ছন্নতাকর্মী জাকির বলেন, ‘রাত ৩টা বাজে বাইর হই, নাইলে পুরা রাস্তা ঝাড়ু দিয়া শেষ করন যায় না। রাত্রে ভীষণ ঠাণ্ডা বাতাস থাকে। দুই দিন যাবত অনেক বেশি বাতাস।’
নাইটডিউটিতে থাকা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নিরাপত্তাকর্মী মেহেদী হাসান বলেন, ‘রাত ১০টা থেকে ৬টা পর্যন্ত ডিউটি করলাম। বাতাস যে আসে মনে হয়, বরফের বাতাস, দুই তিনটা মোটা কাপড় পইরাও শরীর বাঁকা হয়ে যাওয়ার অবস্থা।’
নরসিংদী থেকে ঢাকায় রিকশা চালাতে আসা ফরিদ মিয়া বলেন, ‘গ্রামের মতো শীত পড়ছে ঢাকায়। এই শীতে বেশি চালাইতে পারি না। সন্ধ্যা হইলে বন্ধ কইরা দেই।’
ভোটার আইডি তথ্য সংশোধনের জন্য কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসা জ্যোৎস্না আক্তার বলেন, ‘গ্রামে একটু শীত বেশি। তবে ঢাকাতেও কম না। এত শীত হবে ভাবি নাই। জরুরি দরকারে এই শীতের মধ্যেই আসতে হলো।’
হিম বাতাসে কাঁপতে কাঁপতে কাজে ছুটছেন গৃহকর্মী কুলসুম আরা। সকাল ৭টার মধ্যেই কাজে পৌঁছাতে হয় তাঁকে। বললেন, ‘ঘর থেকে বের হতে ইচ্ছে ছিল না, তবে উপায় নেই।’
লাকড়ি দোকানি নূরজাহান বেগম মালা বলেন, ‘কাউন্সিলর কিছুদিন আগে কম্বল দিছে। সেই কম্বল পাইছে তাদের কাছের লোকে। মুখ চাইয়া চাইয়া দিছে, আমরা পাই নাই। এমন লোকে কম্বল নিছে, যারা সেই কম্বল নিয়া আবার বেইচাও দিছে।’
ঘন কুয়াশার কারণে বুধবার বিকেল পর্যন্ত রাজধানীসহ দেশের অনেক এলাকায় সূর্যের দেখা পাওয়া যায়নি। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে আসায় মাঝারি থেকে তীব্র শীত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।