ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২২, ০৬:৪৮ পিএম
নেদারল্যান্ডসকে বলা হয় বিশ্বের টিউলিপ রাজধানী; আর বাংলাদেশে সেই নেদারল্যান্ডসের ডেপুটি হেড অব মিশন পাউলা শিনডেলার গাজীপুরের শ্রীপুরে গিয়ে যেন খুঁজে পেলেন নিজের বাড়ির আঙিনা। শুক্রবার সকালে শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পূর্বখণ্ড গ্রামে দেলোয়ার হোসেনের টিউলিপ বাগান দেখতে যান এই ডাচ কূটনীতিক। বাংলাদেশের মাটিতে স্বদেশী ফুলের বাহার দেখে তার মুখে ফোটে ঝলমলে হাসি।
শীতের দেশে দীগন্ত বিস্তৃত টিউলিপ বাগানের ছবি দেখেই এক সময় মুগ্ধ হত বাংলাদেশের মানুষ। পরে দামি ওই ফুল অল্প পরিমাণে আমদানিও শুরু হয়।
কেওয়া পূর্বখণ্ড গ্রামের দেলোয়ার হোসেন ২০২০ সালে পরীক্ষামূলকভাবে টিউলিপ লাগিয়ে সাফল্য পান। এবার তিনি বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেছেন টিউলিপ চাষ। এবারের শীতে ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে তার বাগান। দেলোয়ার জানান, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে তার টিউলিপ বাগান দেখতে আসেন নেদারল্যান্ডসের ডেপুটি হেড অব মিশন। বাংলাদেশের টিউলিপ বিশ্ববাজারে পৌঁছে দিতে তার পরিকল্পনার কথা শোনেন।
বাংলাদেশের আবহাওয়ায় টিউলিপ চাষ কীভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে পাউলা শিনডেলার সহযোগিতারও আশ্বাস দেন বলে জানান দেলোয়ার। নেদারল্যান্ডস প্রতিবছর তিন বিলিয়নের বেশি টিউলিপ কন্দ উৎপাদন করে। দেশটির রপ্তানি আয়েও টিউপলিপের অবদান উল্লেখযোগ্য। সেখানে প্রতি বছর বসন্তে টিউলিপ উৎসব হয়।
বাংলাদেশের মত গ্রষ্মমণ্ডলীয় দেশে টিউলিপের বাণিজ্যিক চাষ কতটা সম্ভব, সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি। তবে গাজীপুরের দেলোয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নিজের মত করে।
দেলোয়ার জানান, ২০২০ সালে তিনি সীমিত পরিসরে চাষ করে কয়েক রঙের টিউলিপ পেয়েছিলেন। সে সময় রীতিমত হইচই পড়ে গিয়েছিল। দেলোয়ারের টিউলিপ বাগান দেখতে অনেকেই ভিড় করছিলেন তার শ্রীপুরের বাড়িতে।
পরের বছর ফেব্রুয়ারিতে দেলোয়ারের বাগানে আরও বেশি টিউলিপ ফোটে। সেই চারা ও কন্দ তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন জায়গায়। এখন টিউলিপ ঘিরে অনেকের মধ্যেই তৈরি হচ্ছে স্বপ্ন।
দেলোয়ার জানান, দেশে গড় তাপমাত্রা সবচেয়ে কম থাকে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইকো সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) এবং পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের সহায়তায় সেখানকার কয়েকজন প্রান্তিক কৃষক এবার টিউলিপের চাষ করেছেন। সেখানেও এবার ফুটেছে বাহারী রঙের ফুল। কৃষকদের প্রশিক্ষণ, পরিচর্যা, ও দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন দেলোয়ার হোসেনই।
দেশে টিউলিপের চাষ আরও বাড়াতে এবার নেদারল্যান্ডস থেকে হলুদ, লাল, চার ধরনের পিংক, অরেঞ্জ, সাদা, বেগুনিসহ ১০ ধরনের ৭০ হাজার টিউলিপের বাল্ব আমদানি করা হয়েছে। তেঁতুলিয়ায় ৪০ হাজার, রাজশাহীতে এক হাজার এবং যশোরের গদখালিতে পাঁচ হাজার বাল্ব দিয়ে বাগান তৈরি করে বোঝার চেষ্টা হচ্ছে, দেশে কোন এলাকায় টিউলিপ সবচেয়ে ভালো হতে পারে।
দেলোয়ার বলেন, “আমাদের দেশে ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চাহিদা মিটাতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ফুল আমদানি করা হয়। ফুল চাষে জড়িয়ে আছে কৃষি অর্থনীতির একটি অংশ। তবে আমরা এ দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে। নানা প্রতিবন্ধকতার পরও থেমে থাকিনি। এরই মধ্যে অনেক ফুল চাষে সফলতা এসেছে। এখন হল সম্প্রসারণের কাজ করে যাওয়া।”