ঋণ বিতরণ ও এলসি খুলতে পারবে না এস আলমের ৬ ব্যাংক

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক

আগস্ট ১৯, ২০২৪, ০৪:১৮ পিএম

ঋণ বিতরণ ও এলসি খুলতে পারবে না এস আলমের ৬ ব্যাংক

পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ঋণ বিতরণ ও আমদানি এলসি খুলতে পারবে না এস আলম গ্রুপের ছয়টি ব্যাংক। সোমবার (১৯ আগস্ট) ঋণ বিতরণ ও আমদানি এলসি খোলায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ-তথ্যের সত্যতা গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন এই ৬ ব্যাংক হলো- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক।

বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ-পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নতুন করে ঋণ বিতরণ করতে পারবে না এই ছয়টি ব্যাংক। সেই সঙ্গে আগের ঋণ নবায়নও করতে পারবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, এসব ব্যাংক নতুন করে কোনও আমদানি এলসিও এখন থেকে আর খুলতে পারবে না।

আরও পড়ুন: ইসলামী ব্যাংক দখলের পেছনের কথা

গত সপ্তাহে এস আলমের মালিকানাধীন এই ছয়টি ব্যাংকসহ মোট নয়টি ব্যাংকের ইস্যু করা ১ কোটি বা তারও বেশি টাকার চেক নিজ নিজ ব্যাংক থেকে বা অন্য কোনও ব্যাংকের মাধ্যমে নগদায়ন বন্ধের নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের প্রভাব কমাতে ও তাদের ঋণ গ্রহণ বন্ধে এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। গ্রুপটির সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি সম্পর্ক ছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ-পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, “এস আলমের মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো দীর্ঘদিন ধরে ঘাটতিতে রয়েছে। নামে-বেনামে ঋণ দিয়ে এই ব্যাংকগুলোর এমন সংকট তৈরি হয়েছে। এরপরও সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদের বিশেষ সুবিধার মাধ্যমে এসব ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্ট থেকে নিয়মিত টাকা সরবরাহ করেছেন।”

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ৩০ জুন গভর্নরের অনুমোদনে এস আলম গ্রুপের প্রভাব থাকা ইসলামি ব্যাংকগুলোকে একদিনে ৩৫ হাজার কোটি টাকা তারল্য সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর মধ্যে সরকার বদলের পর বেনামি ঋণের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক থেকে কাগুজে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একদিনে ৮৮৯ কোটি টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করা হলে ব্যাংকটি সেটা ঠেকিয়ে দেয়।

এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন আটটি ব্যাংকসহ নয়টি ব্যাংকই এখন চরম আর্থিক সংকটে রয়েছে। দীর্ঘ দিন এসব ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সিআরআর ও এসএলআর বজায় রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। তাদের চলতি হিসাবেও রয়েছে বড় ধরনের ঘাটতি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, এসব ব্যাংক আমানতের চেয়ে বেশি ঋণ দেওয়ায় সেগুলোর চলতি হিসাবের ঘাটতি আরও বেড়েছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, “বিশেষ বিবেচনায় এসব ব্যাংককে জামানত ছাড়াই টাকা ধার দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই সঙ্গে চালু রেখেছে লেনদেন হিসাব। এজন্যই ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছিল।”

এর মধ্যে এস আলমের পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে থাকা হিসাব তলব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তাদের নামে থাকা ক্রেডিট কার্ডের তথ্যও চাওয়া হয়েছে। ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ও ডাক বিভাগের কাছে থাকা হিসাবের তথ্যও চাওয়া হয়েছে।

এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া শেখ হাসিনার সরকারের শাসনামলে সুবিধাভোগী অন্যতম বড় শিল্পগোষ্ঠী ছিল এই এস আলম গ্রুপ।

Link copied!