পরোয়া নেই সরকার নির্ধারিত দামের, বেশিতেই বিক্রি হচ্ছে ডিম-আলু-পেঁয়াজ

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৩, ০৫:৪৬ এএম

পরোয়া নেই সরকার নির্ধারিত দামের, বেশিতেই বিক্রি হচ্ছে ডিম-আলু-পেঁয়াজ

প্রতীকী ছবি

দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় ঊর্ধ্বগতির লাগাম টানতে সরকার আলু, পেঁয়াজ, ডিম, ভোজ্যতেল এবং চিনির দাম নির্ধারণ করে দেয়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো দাম কার্যকরে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয়। এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় দুই সপ্তাহ আগে। তবে বাজারে তার কোনো প্রভাব পড়েনি।

খুচরা বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১২ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ খুচরা বাজারে ব্যবসায়ীরা ১৪৪ টাকার বেশি দামে ডজনপ্রতি ডিম বিক্রি করতে পারবেন না।
তবে ব্যবসায়ীরা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ডিমের দামের তোয়াক্কা করছেন না। বরং ফন্দি এঁটে তারা বাড়তি দামে ডিম বিক্রির পরিকল্পনা নিয়েছে। সরকার নির্ধারিত দামে ছোট আকারে ডিম বিক্রি করে বড় ডিমের জন্য তারা বাড়তি দাম দাবি করছেন।

শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানী ঢাকার মিরপুরের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা ডিমের আকারভেদে ছোট, মাঝারি ও বড় এই তিন ভাগে বিক্রি করছেন। সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে ছোট আকারের ডিম। এক্ষেত্রে ডজনপ্রতি ডিমের দাম ১৪৪ টাকা অর্থাৎ প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা করে পড়বে।

এদিকে মাঝারি আকারের ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ১২ টাকা ৫০ পয়সায়। ডজনপ্রতি ১৫০ টাকায়। অন্যদিকে, ডজনপ্রতি বড় আকারের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকায় এতে প্রতি পিস ডিমের দাম প্রায় ১৩ টাকা করে পড়ে। এছাড়া মুদি দোকানগুলোয় প্রতি পিস ডিম ১৪ টাকায় বিক্রি হয়। সেই হিসাবে ডজনপ্রতি ডিমের দাম পড়ে ১৬০ টাকা।

দামের তারতম্য নিয়ে জানতে চাইলে জানতে চাইলে মিরপুর বাউনিয়াবাঁধ বাজারের ডিম বিক্রেতা সোহেল বলেন, “যাতায়াত খরচসহ পাইকারদের কাছ থেকে প্রতি পিস ডিম কিনি ১১ টাকা ৪০ পয়সা করে। তারা দোকান পর্যন্ত দিয়ে যায়। এর মাঝে কিছু ডিম ভাঙা পড়ে। আবার ক্রেতারাও কিনতে এসে কিছু ডিম ভেঙে রেখে যায়। তখন এসব ডিম ৫ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি করতে হয়। এতে আমার যে লোকসান হয়, তা সরকারি দাম ১২ টাকায় বিক্রি করে কীভাবে লাভ ওঠাব বলেন?”

একই চিত্র পেয়াজ ও আলুর বাজারেও। শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়, আর পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজিতে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী, প্রতি কেজি পেঁয়াজের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা; আলু কেজিতে ভোক্তা পর্যায়ে ৩৫/৩৬ টাকা এবং কোল্ড স্টোরেজ থেকে ২৬/২৭ টাকা টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলে নির্ধারিত দাম এখনো বাজারে কার্যকর হয়নি। ভোক্তা অধিকার অভিযান চালালেও আলু-পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই; দাম বেঁধে দিয়েও ব্যবসায়ীদের সেই নির্দেশ মানার ক্ষেত্রে বাঁধা যায়নি।

রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বরের কাঁচাবাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকা, ক্রস জাতের পেঁয়াজ ৮৫ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় পেঁয়াজ এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা বেশিতে। গত সপ্তাহে এই পেঁয়াজের দাম ছিল ৬০ টাকা প্রতি কেজি৷ এই বাজারে আলু ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আলু-পেঁয়াজের বিক্রেতা রুবেল বলেন, আমার আলু কেনা পড়ছে ৪০ টাকা। আর দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা, ক্রস পেঁয়াজ ৭৮ টাকা, ভারতীয় ৬৫ টাকায় কিনেছি। আমি কমে কীভাবে বিক্রি করবো?

সরকার নির্ধারিত দামে কিনতে পারছেন কিনা জানতে চাইলে রাশেদুল হক নামে এক ক্রেতা বলেন, নির্ধারণ জিনিসটা আবার কী? এটা শুধু শুনেছিই যে সরকার দাম নির্ধারণ করেছে, কিনতে গিয়ে তার কিছু তো চোখে পড়লো না।

Link copied!