কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে নাখোশ বিএসইসি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জানুয়ারি ৫, ২০২২, ০৭:০৮ পিএম

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে নাখোশ বিএসইসি

বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১০ নভেম্বর শেয়ারবাজারের সম্পদ ব্যবস্থাপনা (অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট) কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে তাদের সম্পদ ও দায়ের তথ্য চেয়েছিল। সম্পদ ও দায়ের পাশাপাশি কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর সম্পদ-দায়ের তথ্যও জানতে চেয়েছিল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সুপারিশ মেনে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজটি করেছে বলে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে প্রেরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। প্রতিষ্ঠানটি তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় গত ১৮ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরকে চিঠি পাঠিয়ে কোম্পানিগুলোর কাছে এভাবে তথ্য চাওয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানায়।

পূনরায় চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক বিএসইসির চিঠি পেয়ে কিছুটা বিরতি দিলেও থেমে যায়নি। গত ১৯ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটি বিএসইসিকে চিঠি দিয়ে বলেছে, তথ্য নিয়ে সংস্থাটি কোনো তদারকমূলক কাজ করবে না, কোনো একক প্রতিষ্ঠানের বিশ্লেষণকাজেও ব্যবহার করবে না। তথ্যগুলো বরং সামগ্রিক সংকলন আকারে ব্যবহৃত হবে।

চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, দেশের আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর দায় ও সম্পদের সামগ্রিক প্রকৃত চিত্র বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানসহ দেশের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তুলে ধরার জন্য এসব তথ্য–উপাত্ত সুলভ হওয়া অপরিহার্য। শেয়ারবাজার–বিষয়ক তথ্যের সংবেদনশীলতা নিয়ে বিএসইসির উদ্বিগ্নতার বিষয়েও বাংলাদেশ ব্যাংক সচেতন বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। তারা বলেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকও অত্যন্ত সংবেদনশীল তথ্য নিয়ে যথাযথ গোপনীয়তা বজায় রেখেই কাজ করে থাকে।

পরিসংখ্যানের কাজে তথ্য 

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম এই বিষয়ে বলেন, ‘তথ্যগুলো পরিসংখ্যানের কাজে ব্যবহার করা হবে। আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংকের মতো সংস্থা যখন তথ্য চায়, তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য দিতে হয়। বিএসইসি আগে একবার তা দিতে একমতও হয়েছিল। এখন কী সমস্যা হয়েছে, বোধগম্য নয়।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠির জবাবে গভর্নরকে চিঠি পাঠিয়ে বিএসইসি বলেছিল, শেয়ারবাজার অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং বাজারের নিয়ন্ত্রক হিসেবে তদারকির দায়িত্ব পালন করে তারা। প্রতিটি মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি ও পক্ষের কাছে থাকা তথ্য মূল্য সংবেদনশীল হতে পারে, যা বিএসইসির অনুমোদন ছাড়া বা অনুমোদিত পন্থা ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে সরবরাহ ও প্রকাশ করা যায় না। বিদ্যমান ১৯৬৯ সালের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশের ১৯ ধারায় এসব তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

আইনগতভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক তথ্য পাবে

বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৯ ডিসেম্বর পাল্টা চিঠিতে বিএসইসিকে বলেছে, ধারাটি বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষেত্রে খাটবে না। আইনগতভাবে অধিকারপ্রাপ্ত নয়, এমন ব্যক্তির কাছে তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে বিএসইসির অনুমতি নেওয়ার কথা বলা আছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর প্রযোজ্য নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক আরও বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২-এর আর্টিকেল-৬৯ অনুযায়ী সরকারসহ যেকোনো ব্যক্তির কাছ থেকে গবেষণা ও পরিসংখ্যানের কাজে ব্যবহারের জন্য তথ্য সংগ্রহের আইনগত অধিকার রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক। সুস্পষ্ট আইনগত অধিকার থাকা সত্ত্বেও বিএসইসির সঙ্গে আলোচনা করে ও তাদের সম্মতি নিয়েই কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ শুরু করে।

বিএসইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলোর সম্পদ ও দায়ের তথ্য যে চাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বিএসইসি তা জানেই না। নভেম্বরে পাঠানো চিঠিতেও ওই কথাই বলেছে বিএসইসি।

এই ব্যাপারে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক নিজের জায়গায় ঠিক আছে। তবে বিএসইসি থেকে নিবন্ধন নেওয়া প্রতিষ্ঠান অনুমতি ছাড়া কাউকে তথ্য দিতে পারে না। দিলে তারা আইন লঙ্ঘনের মুখে পড়বে।

শেষ বৈঠক হয়েছিল ২০১৯ সালে

এসব তথ্য চাওয়া নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসিসহ শেয়ারবাজারের সঙ্গে সম্পর্কিত সব পক্ষ নিয়ে একটি বৈঠক হয়েছিল ২০১৯ সালের ১০ জানুয়ারি। এরপর বিএসইসি ২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছিল, অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সম্পদ ও দায়ের তথ্য অভিন্ন ফরম্যাটে পাঠানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো একমত হয়েছে। তবে মিউচুয়াল ফান্ডের তথ্য দেওয়ার ধরনে কিছু সংশোধনী আনতে হবে। বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, সেই কাজ আর হয়নি। ২০০১ থেকে ২০২১ পর্যন্ত মোট ৫২টি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি লাইসেন্স নিয়েছে। এর মধ্যে কার্যকর কোম্পানি ৪১টি, অকার্যকর ১০টি। কার্যকরগুলো বর্তমানে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার সম্পদ ব্যবস্থাপনা করছে বলে জানা গেছে।

Link copied!