রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে নিয়ম লঙ্ঘন করে সভাপতি নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে।
বিভাগের স্থায়ী শিক্ষকদের সভাপতি হওয়ার সকল যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সম্প্রতি প্রাণ রসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ হাসানকে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে এটিকে শিক্ষকদের প্রতি অবিচার বলে মনে করছেন বিভাগের শিক্ষকরা।
বিভাগের একাডেমিক কমিটি থেকে প্রশাসনকে চিঠির মাধ্যমে বলা হয়, বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে থেকে সভাপতি নিয়োগ দেওয়া হোক অন্যথায় বিভাগের শিক্ষাকার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
এছাড়া বিভাগের প্লানিং কমিটি সদ্য সাবেক সভাপতি বিশ্বনাথ শিকদারকে বদলি না করার সুপারিশ করেছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা আমলে নেয়নি।
বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত ১০ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার অধ্যাপক আব্দুস সালাম স্বাক্ষরিত এক আদেশে প্রাণ রাসায়ণ ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ হাসানকে প্রেষণে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে স্বপদে বদলি করা হয়। বিভাগে যোগদানের তারিখ থেকে ৩ বছরের জন্য সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
অন্যদিকে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক বিশ্বনাথ শিকদারকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে স্বপদে বদলি করা হলো। এই আদেশ জারির পর গত ১৩ ডিসেম্বর মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের একাডেমিক কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আলোচনা শেষে রেজিস্টার বরাবর একটি চিঠি দেওয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, বিভাগের স্থায়ী শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক অমিত কুমার দত্ত ও সহযোগী অধ্যাপক ফারুক হাসানের বিভাগের সভাপতি হওয়ার পূর্ণ যোগ্যতা আছে। তা থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ উপেক্ষা করে প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ হতে প্রফেসর ড. ইমতিয়াজ হাসানকে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সভাপতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সভাপতি নিয়োগে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সাথে কোন আলোচনা করা হয়নি।
চিঠিতে আরও বলা হয়, একাডেমিক কমিটি মনে করে, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে অন্য বিভাগ হতে সভাপতি নিয়োগের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে এবং এর মাধ্যমে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের উক্ত শিক্ষকদ্বয় বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। ফলশ্রুতিতে তারা মানসিকভাবে চাপে পড়েছেন যা নতুন প্রতিষ্ঠিত এই বিভাগের সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হওয়াসহ বিভিন্ন জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।
সুতরাং, স্পর্শকাতর এ বিষয়টি সম্পর্কে দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বিভাগের উক্ত শিক্ষকদ্বয়ের মধ্য থেকেই বিভাগের সভাপতি নিয়োগের জোর সুপারিশ জানাচ্ছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে চিঠির কোনো জবাব দেওয়া হয়নি।
এদিকে বিভাগের শিক্ষার্থীরা সদ্য সাবেক সভাপতি অধ্যাপক বিশ্বনাথ শিকদারকে বিভাগে পুনর্বহালের জন্য উপাচার্য আবেদন করেছেন। আবেদন পত্রে তারা বলেন, বিশ্বনাথ শিকদার স্যারকে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ থেকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে বদলি করা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক। মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষক স্বল্পতা এবং অধ্যাপক ড. বিশ্বনাথ শিকদার স্যারের বিভাগ পরিচালনা এবং পঠন-পাঠনের সার্বিক কথা বিবেচনা করে স্যারকে আমাদের বিভাগে খুবই প্রয়োজন। তিনি বিভাগে তিনটি সেশনে তত্ত্বীয় এবং ব্যবহারিকসহ মোট সাতটি কোর্সের সাথে সরাসরি যুক্ত। স্যারকে বদলি করার ফলে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়েছে। এজন্য আমরা মনে করি বিশ্বনাথ শিকদার স্যারকে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষক হিসেবে পুনর্বহালের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফারুক হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী বিভাগের সভাপতি হওয়ার জন্য যেসব যোগ্যতা থাকা দরকার তা আমি এবং বিভাগের অন্য শিক্ষকের আছে। কিন্তু আমদের কোনো শিক্ষককে সভাপতি না করে প্রাণ রসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অধ্যাপক ইমতিয়াজ হাসানকে এনে সভাপতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যিনি আমাদের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন। আমরা নিয়োগের আগে উপাচার্য স্যারের সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তিনি দেখা করেননি।
এখন তাদের দাবি কী এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্তই আমাদের দাবি।
এ বিষয়ে অধ্যাপক বিশ্বনাথ শিকদার বলেন, প্রশাসন হয়তো কিছু উদ্দেশ্য নিয়ে অধ্যাপক ইমতিয়াজকে সভাপতি নিয়োগ দিয়েছে। তা না হলে বিভাগে যোগ্য শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও কেন অন্য বিভাগ থেকে শিক্ষক এনে সভাপতি নিয়োগ দিবে।
সভাপতি নিয়োগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, সভাপতি নিয়োগ নিয়ম অনুসারেই হয়েছে।