গেস্টরুমে বসা নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার (১১ মে) দিবাগত রাত সাড়ে ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত এই সংঘর্ষ চলে। এ সময় দু’পক্ষ দেশীয় অস্ত্র একে অপরকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া করে। এখনও আহতের খবর আসেনি।
“হলের গেস্টরুমে আমার অনুসারীরা সাংগঠনিক কাজ করছিল। তখন ওই হলের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ এসে আমার অনুসারীদের বের হয়ে যেতে বলে। কিন্তু আমার অনুসারীরা সময় চাইলে এই নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে নিয়াজ হলে বহিরাগত প্রবেশ করিয়ে আমার অনুসারীদের ওপর রেললাইনের পাথর, ইটপাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপ করে”
- মোস্তাফিজুর রহমান বাবু
সভাপতি, শাখা ছাত্রলীগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)
সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপ- বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ও শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ।
তবে সংঘর্ষ চলাকালীন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারীদের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর হয়ে হামলা চালাতে দেখা গেছে। সংঘর্ষকালীন মাদার বখ্শ হলের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান নেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সম্পাদকের অনুসারীরা। অন্যদিকে নিয়াজ মোর্শেদের অনুসারীরা অবস্থান নেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের দ্বিতীয় তলার ছাদে।
ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, গেস্টরুমে বসাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে। শনিবার (১১ মে) রাত ১০টার দিকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের গেস্টরুমে নিয়াজের কয়েকজন কর্মী বসে ছিল। এ সময় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান ওরফে আতিক কয়েকজন কর্মীকে নিয়ে গেস্টরুমে আসেন। আতিক বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী। এ সময় আতিক নিয়াজের অনুসারীদের কিছুক্ষণের জন্য চলে যেতে বলেন। কিন্তু নিয়াজের অনুসারীরা চলে যেতে অস্বীকৃতি জানান। পরে আতিক নিয়াজকে ফোনে করে তার অনুসারীদের যেতে বলেন। কিন্তু নিয়াজ তার অনুসারীরা সেখানেই থাকবে বলে আতিককে জানায়। পরক্ষণেই নিয়াজ সেখানে উপস্থিত হয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে আতিক তার অনুসারীদের নিয়ে সেখান থেকে চলে আসেন।
এই খবর জানাজানি হলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারীরা বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল গেটে এসে অবস্থান নেন। এ সময় তাদের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারীরাও যোগ দেন। একপর্যায়ে নিয়াজ ও তার অনুসারীরা হলের ছাদ থেকে মিছিল নিয়ে তাদের (সভাপতির অনুসারী) ওপর ইটপাটকেল ও লাঠিসোটা নিক্ষেপ করে হল গেট দখলে নিয়ে তালা দিয়ে রাখেন। কিছুক্ষণ পর মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ও গালিবের অনুসারীরাও পাল্টা হামলা চালায় এবং ছয়টি ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়। এছাড়া তাদের হাতে রামদা ও লাঠিসোটা দেখা গেছে। রাতভর দফায় দফায় এই সংঘর্ষ চলতে থাকে।
“বিশ্ববিদ্যালয় স্পর্শকাতর একটি জায়গা। এখানে পুলিশ চাইলেই হস্তক্ষেপ করতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শৃঙ্খলা ও পড়াশোনার পরিবেশ যেন বজায় থাকে সেই লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করবো”
- মধুসুদন রায়
উপ-কমিশনার, মতিহার থানা, রাজশাহী
এদিকে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষের খবর পেয়ে রাত একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদসহ হল প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণে আসেন অধ্যাপক সহ-উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম ও অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) তারিকুল হাসান। রাত আড়াইটা পর্যন্ত থেমে থেমে দু’পক্ষের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাস উত্তপ্ত ছিল। পরে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনের সঙ্গে পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্যরা সোহরাওয়ার্দী হলের সন্দেহভাজন কক্ষগুলোতে তল্লাশি চালায়। এরপর রাত পৌনে তিনটার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
বিষয়টি জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, “হলের গেস্টরুমে আমার অনুসারীরা সাংগঠনিক কাজ করছিল। তখন ওই হলের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ এসে আমার অনুসারীদের বের হয়ে যেতে বলে। কিন্তু আমার অনুসারীরা সময় চাইলে এই নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে নিয়াজ হলে বহিরাগত প্রবেশ করিয়ে আমার অনুসারীদের ওপর রেললাইনের পাথর, ইটপাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপ করে।”
এতে তার ৫-৬ জন কর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, “গেস্টরুমে বসা নিয়ে প্রথমে একটু বাগবিতণ্ডা হয়েছিল। একপর্যায়ে সভাপতির অনুসারীর কয়েকজন এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। বিষয়টি নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। তবে এ ঘটনায় তার পক্ষের কেউ আহত হয়নি।”
সবশেষ পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করা হবে। রামদা মহড়া ও ককটেল বিস্ফরণের বিষয়টি প্রশাসন খতিয়ে দেখবে।”
মতিহার থানার উপ-কমিশনার মধুসুদন রায় সাংবাদিকদের বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় স্পর্শকাতর একটি জায়গা। এখানে পুলিশ চাইলেই হস্তক্ষেপ করতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শৃঙ্খলা ও পড়াশোনার পরিবেশ যেন বজায় থাকে সেই লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করবো।”
সার্বিক বিষয়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্য পরিস্থিতি এখন শান্ত আছে। হলের স্বাভাবিক পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে কক্ষে তল্লাশি চালানো হয়েছে। দেশীয় অস্ত্র থাকতে পারে এমন কক্ষেও তল্লাশি করা হয়েছে। তবে ভাঙা ইট ও চেয়ারের হাতল জাতীয় জিনিস ছাড়া অন্য কিছু পাওয়া যায়নি। বেশ কয়েকটি কক্ষে তালা দেওয়া ছিল। হয়তো তারা এ ঘটনায় জড়িত ছিল। তারা ডাইনিং কক্ষের ওপর দিয়ে হল ছেড়েছে। হল এখন নিরাপদ আছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে সকাল পর্যন্ত হলেই থাকবে হল প্রশাসন।”