অনেকে নিজের পড়ে ফেলা বইগুলো সারিতে সারিতে সাজিয়ে রাখছেন টেবিলে। হয়তো দীর্ঘদিন সেসব হাতের সংস্পর্শের বাহিরে। মলাটে মলাটে জমে আছে ধুলোর স্তূপ। যদি সেই পুরাতন বইগুলো কেউ পরিবর্তনের সুযোগ দেয় তাহলে বিষয়টি কেমন হয়? হয়তো মোটেও মন্দ নয়। ঠিক এমনই এক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তরুণ কিছু শিক্ষার্থী। নতুন বা পুরাতন বইয়ের বিনিময়ে পছন্দের অন্য যেকোনো বই নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন তারা। পাঠকের দুয়ারে বই পৌঁছাতে শুরু করেছেন ‘বই বিনিময় উৎসব’।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মুক্তম। সেখানে পুরো জায়গাজুড়ে রঙিন মলাটের অসংখ্য বই সাজানো। গল্প, কবিতা, উপন্যাস ও ভ্রমণকাহিনীসহ কয়েকটি জনরার নতুন-পুরাতন মিলিয়ে বই রয়েছে প্রায় হাজার খানেক। ঘেটে ঘেটে নিজের পছন্দমতো বই খুঁজে বের করছেন গ্রন্থপ্রেমীরা। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন এক-দুটো পুরনো বই। যেটি ইতোমধ্যে পড়া শেষ করে ফেলে রাখা ছিল। তাই টেবিলে অযথা অযত্নে সাজিয়ে না রেখে তার বিনিময়ে নতুন আরেকটি বই নেওয়ার জন্য ভীড় করছেন তারা।
বইয়ের মানের ওপর নির্ভর করে তিন ধরনের বই বিনিময় করছেন আয়োজকরা। প্রায় নতুন এবং দামী বইগুলোর বিনিময়ে একই মানের বই পাবেন পাঠকরা। আর পুরাতন হলে সেই বইয়ের মতোই অন্য কোনো বই পছন্দ করে নিতে পারবেন তারা। অর্থাৎ পাঠকের বইটি যেই মূল্যের ঠিক সমপরিমাণ মূল্যের বই সংগ্রহ করার সুযোগ পাচ্ছেন বইপ্রেমীরা। তবে এ উৎসবে কোনো প্রকার নগদ অর্থের লেনদেন নেই।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ৫৫তম ব্যাচের সহযোগিতায় বই বিনিময়ের এই আয়োজন করেন একটি স্বেচ্ছাসেবী অরাজনৈতিক সংগঠন ‘অদম্য-১৯’।
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে বই বিনিময় উৎসব।
মূলত বইকে পাঠকের কাছে সহজলভ্য করে তোলার জন্যই এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন আয়োজকরা। তারা জানান, নতুন পাঠক তৈরির লক্ষ্যেই এই আয়োজন। তাই বই বিনিময়ের এই ধারণা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য নতুন-পুরাতন প্রায় এক হাজার বই এখানে প্রদর্শন করেন তারা।
উৎসবে ঘুরতে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ কে আনোয়ার। শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে আমাদের বই পড়ার অবস্থা তলানীতে পৌঁছে গিয়েছে। যা আমাদের জন্য আসলেই ভয়ংকর। তাদের এই উদ্যোগে অনেকে বইয়ের সংস্পর্শে আসতে পারবে। আজকাল ইলেকট্রনিক ডিভাইসের কারণে আমরা প্রতিনিয়ত বই থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। বই যে একটা প্রাণের খোরাক সেটা তারা আশা করি পাঠককে বোঝাতে সক্ষম হবে।
বই বিনিময় উৎসবে একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন ওই বিভাগটির ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র সাগর ইসলাম। তাদের এই আয়োজন নিয়ে তিনি বলেন, ফেসবুক থেকে বই বিনিময় উৎসবের বিষয়টা জানতে পারি। পরে বন্ধুরা মিলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও বই বিনিময় উৎসবের আয়োজন করি। ‘অদম্য-১৯’ থেকে আমাদের প্রায় ৭০০ বই দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে বিনিময় করার জন্য আমরা এক হাজার বই সাজিয়ে রেখেছি। আমাদের মূল বিষয়টা হচ্ছে, যেই বইটা আমার পড়া হয়েছে সেই বই দিয়ে নতুন আরেকটি বই নিয়ে যাওয়া। যেটার মাধ্যমে দেশের সর্বস্তরে পাঠকের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
সার্বিক আয়োজন সম্পর্কে অদম্য-১৯ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা তায়েব মৃধা বলেন, আমাদের আয়োজনের উদ্দেশ্য হলো বইকে পাঠকের কাছে সহজলভ্য করে তোলা। এই আয়োজনকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। বই বিনিময়ের এই ধারণাটি বাংলাদেশে খুব বেশি পুরাতন নয়। আমরা প্রাথমিকভাবে দেশের আটটি বিভাগে এই আয়োজন করছি। তারই ধারাবাহিকতায় ময়মনসিংহ ও রংপুরের পর রাজশাহীতে এ উৎসব শুরু হয়েছে। নতুন পাঠক তৈরির জন্য এই আয়োজন করা। আমরা বেশ সাড়া পাচ্ছি। যারা বই পড়েন তাদের জন্য এটা বড় একটা সুযোগ। পাঠক তৈরির বড় মঞ্চ হতে পারে এই উৎসব।