জ্যামে নাজেহাল নগরবাসী, সড়ক অবরোধ করে ফুটবল খেলেছে কোটা আন্দোলনকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই ৭, ২০২৪, ০২:৫৩ পিএম

জ্যামে নাজেহাল নগরবাসী, সড়ক অবরোধ করে ফুটবল খেলেছে কোটা আন্দোলনকারীরা

দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহালসহ চার দফা দাবিতে ‍ ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন‍’ প্ল্যাটফর্ম ঘোষিত সারাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও মহাসড়কে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড় অবরোধ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এতে বিভিন্ন এলাকা দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অফিস শেষে ঘরমুখী মানুষ পড়েন চরম ভোগান্তিতে। বাসসহ অন্যান্য যানবাহন প্রধান সড়কগুলোয় আটকা পড়ায় গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করেছেন সাধারণ মানুষ। হঠাৎ কিছু রাস্তায় অবরোধে গাড়ি আটকা পড়ে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের।

এদিকে আন্দোলনকারীদের দখলে থাকা সড়কের বিভিন্ন অংশে যানবাহন না থাকায় অনেকেই নেমে পড়েছেন ফুটবল খেলতে।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী রোববার (৭ জুলাই) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে গিয়ে “বাংলা ব্লকেড” নামে সড়ক দখলে নেন কোটা আন্দোলনকারীরা। এ সময় নীলক্ষেত, চানখারপুল, সায়েন্সল্যাব, শাহবাগ, বাংলামোটর, কাওরান বাজার ও আগারগাঁওসহ শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে অবস্থান নেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে পরিবাগ প্রধান সড়কে দেখা যায়, আন্দোলনকারী কয়েকজন শিক্ষার্থী ফাঁকা সড়কে ফুটবল খেলছেন।

এর আগে, বেলা আড়াইটার পর থেকে বিভিন্ন বিভাগ ও হল থেকে শিক্ষার্থীরা ব্যানার ও ফেস্টুনসহ আলাদা আলাদা মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হন। পরে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, শাহবাগ, চাঁনখারপুল মোড় অবরোধ করেন। ফলে ফার্মগেট-শাহবাগ, গুলিস্তান-নিউ মার্কেট, শাহবাগ-পল্টন-মগবাজার রোড, শাহবাগ -সাইন্সল্যাব রোড এবং শাহবাগ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে যায়। তবে অ্যাম্বুলেন্সের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য শিক্ষার্থীরা জায়গা করে দেন।

এসময় শিক্ষার্থীরা, একাত্তরের পথ ধরো, বাংলা ব্লকেড সফল করো’, ‘দফা এক দাবি এক, কোটা নট কাম ব্যাক’, ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ,’ ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার”, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট একশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’‍‍`- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

এর আগে, রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে শনিবার (৬ জুলাই) অবরোধ তুলে নেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তবে অবরোধ প্রত্যাহারের আগে রোববার বেলা তিনটা থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা।

হাইকোর্ট কর্তৃক প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের আদেশের বিরুদ্ধে এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিসহ মোট ৪ দফা দাবিতে কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

কোটা আন্দোলন ২০২৪: চার দফা দাবি

  • ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধা-ভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে।
  • ‘১৮’র পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী শুধু অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।
  • সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শুন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে।
  • দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

অবরোধ তুলে নেওয়ার আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “কাল বেলা তিনটা থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হল। শুধু শাহবাগ মোড় নয়, শাহবাগ ও ঢাকা শহরের সায়েন্স ল্যাব, চানখাঁরপুল, নীলক্ষেত, মতিঝিলসহ প্রতিটি পয়েন্টে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা নেমে এসে কর্মসূচি সফল করবেন। ঢাকার বাইরের জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করবেন।”

নাহিদ আরও বলেন, “শিক্ষার্থী ও আদালতকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়ে সরকার দায়িত্বহীন আচরণ করছে। নির্বাহী বিভাগ তার দায় এড়াতে পারে না। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কোটা থাকবে না। তাহলে কোটা কেন আবার ফিরে এল? কেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রহসন করা হচ্ছে? দাবি আদায়ে প্রয়োজনে আমরা হরতালের মতো কর্মসূচি পালন করব। এটা শুধু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নয় বরং শিক্ষক-অভিভাবকদেরও আন্দোলনে নেমে আসতে হবে।”

শিক্ষকেরা ক্লাসে ফিরে গেলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরে যাব না উল্লেখ করে আন্দোলনের সমন্বয়ক আরও বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার অবিলম্বে খুলে দিতে হবে, নয়তো আমরা নিজ দায়িত্বে সেটি খুলে নিতে বাধ্য হব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বাধা দিচ্ছে ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীরা। আমরা কিন্তু হলের তালা ভাঙতে জানি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ ব্যাপারে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানাই।”

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কাল বেলা তিনটা থেকে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করবেন। শুধু শাহবাগ মোড় নয়, ঢাকা শহরের সায়েন্স ল্যাব, চানখাঁরপুল, নীলক্ষেত, মতিঝিলসহ প্রতিটি পয়েন্টে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা নেমে আসবেন। ঢাকার বাইরের জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করবেন।

এর আগে, ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহালসহ চার দফার দাবিতে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার বেলা আড়াইটা থেকে বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা নিজস্ব হলের ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে জড়ো হতে থাকেন। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে হলপাড়া-ভিসি চত্বর-টিএসসি- বুয়েট, ইডেন কলেজ হয়ে বেলা পৌনে পাঁচটার দিকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা।

Link copied!