রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) হলগুলোতে স্বাধীনতা দিবসে আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করেছে হল প্রশাসন। এ জন্য প্রতিটি আবাসিক শিক্ষার্থীদের থেকে ৩০ টাকা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আবাসিক শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অনাবাসিকদের জন্যও এই বিশেষ খাবারের ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছে ছাত্র সংগঠনগুলো। তবে তাদের এই দাবি উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
প্রতিবাদস্বরূপ বিশেষ এই খাবার বর্জন করেছে তারা। কিন্তু হল প্রশাসন বলছে আমরা লিখিত কোনো আবেদন পাইনি।
ছাত্র সংগঠন সূত্রে জানা যায়, তারা বিশেষ খাবারের সার্বজনীন করার দাবি জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল। এর একটা কপি প্রশাসনের কাছেও পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের এই দাবি না মেনেই প্রতি বছরের মতো শুধু আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্যই আয়োজন করছে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল বলেন, ‘হল প্রশাসন অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করছে। অন্যদিকে আবাসিক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও ৩০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। স্বাধীনতা দিবসের জন্যে আলাদা বাজেট থাকে। এছাড়া প্রতি বছর বিভিন্ন খাতে হল ফি নেয়া হয়। তারপরও অতিরিক্ত অর্থ কেন আদায় করা হবে?’
জিয়া হলের অনাবাসিক শিক্ষার্থী শাহ পরান বলেন, ‘উন্নয়ন ফি, ক্রীড়া ফি, উৎসব ফি থেকে শুরু করে সব ধরনের টাকা আমাদের দিতে হয়। কিন্তু চার বছরে আমি সিট পাবো কিনা সেটা অনিশ্চিত। আবার অনাবাসিক হয়ে জাতীয় দিবসের আয়োজনেও অংশ নিতে পারবো না। বিষয়টি দুঃখজনক।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী মাইন উদ্দিন জিসান বলেন, ‘একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া দুজন শিক্ষার্থী একজন আবাসিক ও অন্যজন অনাবাসিক। দুজনের সুবিধা দুই রকম পাবে। স্বাধীনতা দিবসেও একই রকম হবে ব্যাপারটা ভেবেই অবাক হচ্ছি।’
নাগরিক ছাত্র ঐক্যের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মেহেদী হাসান মুন্না বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবস একটা সার্বজনীন দিন। এই দিনের উৎসব অনাবাসিক-আবাসিক সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনাবাসিকদের উৎসব থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। ন্যায্য পাওনা না দিয়ে বৈষম্য করছে। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছিলাম উৎসবটি সার্বজনীন করার। কিন্তু তারা এটা করেনি। তাই আমরা এই অনুষ্ঠান বর্জন করলাম।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি শাকিল হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের হল গুলোতে সকল প্রকারের ফি উভয় শিক্ষার্থীরা দেয়। প্রশাসনের উচিত ছিল সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। প্রশাসন সে ব্যাবস্থা রাখেনি। ছাত্রদের অধিকার ক্ষুন্ন করেছে। কিন্তু তাদের বেলায় ভিন্ন। সার্বজনীন পেনশন নিয়ে যখন নতুন আইন হয়েছে তখন প্রশাসনের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কিন্তু এখানে তারাই বছরের পর বছর সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বৈষম্য করে আসছে।’
প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক একরামুল ইসলাম বলেন, ‘অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ লিখিত দাবি করেনি। তাছাড়া আমরা এই আয়োজন করি হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা বিশেষ দিবসে এক সাথে একটু আনন্দ-আড্ডা দিবে। অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা সামান্য এক প্যাকেট খাবারের জন্য অনেকেই দূরের মেস থেকে আসবে এটাও কেমন হয়ে যায়।’
শিক্ষার্থীদের থেকে ৩০ টাকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এই খাবারের জন্য প্রশাসন থেকে কোন বাজেট দেওয়া হয় না। হলের কোষ থেকে থেকে এই খাবারের টাকা দেওয়া হয়। এ জন্য নাম মাত্র কিছু টাকা নেওয়া হয়।