ঢাবিতে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চর্চার অভিযোগ সামাজিক সংগঠনগুলোর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

মার্চ ১৭, ২০২৪, ০৫:৪০ এএম

ঢাবিতে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চর্চার অভিযোগ সামাজিক সংগঠনগুলোর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চর্চার অভিযোগ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে টিএসসিভিত্তিক সাংস্কৃতিক- সামাজিক সংগঠনগুলো। গতকাল শনিবার (১৬ মার্চ) সন্ধ্যা থেকে একে একে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ উদ্বেগ প্রকাশ করে সংগঠনগুলো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইটি সোসাইটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যান্ড সোসাইটি, স্লোগান ৭১, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কুইজ সোসাইটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাট্য সংসদ একে একে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়। 

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘প্রতিবছর রমজান মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতারকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মাঝে একধরনের উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। বিভিন্ন বিভাগ, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সংগঠন ও টিএসসি ভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠন কর্তৃক ইফতারের আয়োজন আমাদের মাঝে আনন্দ, সম্প্রীতি এবং অসাম্প্রদায়িকতার প্রতীক হিসেবে কাজ করে।’ 

কিন্তু সম্প্রতি একটি স্বার্থান্বেষী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ইফতারকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করে টিএসসিভিত্তিক সংগঠনগুলো। এতে বলা হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে নিষিদ্ধ ঘোষিত একটি সংগঠনের সদস্যরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে ধর্মের মোড়কে গণ-ইফতার এর মতো অস্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মসূচি আয়োজন করছে। অথচ আমরা জানি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবসময় সকল শিক্ষার্থী মিলে ইফতার আয়োজন করে; যাতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী সহ সাধারণ মানুষেরও অংশগ্রহণ থাকে।

সেই জায়গা থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ঘটা করে ‍‍`গণ-ইফতার‍‍` এর মতো অস্বাভাবিক কার্যক্রমকে আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা মনে করি, ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য একটি মহল এসব কার্যক্রম করে যাচ্ছে। এসব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানায় সংগঠনগুলো।’

এ বিষয়ে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যান্ড সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রুদ্র প্রসাদ রায় বলেন, বছরের পর বছর টিএসসিতে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ একটি অসাম্প্রদায়িক উৎসব হিসেবে ইফতার আয়োজন করে আসছে। কখনো কোনো ব্যানার-টাইটেলের প্রয়োজন পড়েনি। হুঁট করে ‘গণ-ইফতার’ নামকরণের প্রয়োজন পড়েছে। আমার মনে হয় ধর্মকে ব্যবহার করে একদল মানুষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। একটি স্বতঃস্ফূর্ত গণউৎসবকে এভাবে রাজনৈতিক মোড়ক দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রচেষ্টাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যান্ড সোসাইটির পক্ষ থেকে নিন্দা জানান রুদ্র।

স্লোগান’৭১ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আশিক অমি বলেন, প্রতিবছরই ইফতারকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি উৎসব মুখর পরিবেশ তৈরি হয়। কিন্তু এই উৎসবমুখর পরিবেশের সুযোগ নিয়ে কিছু সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ক্যাম্পাসে অপতৎপরতা চালাতে চায়। কিছু নিষিদ্ধ সংগঠন তাদের গোষ্ঠীগত স্বার্থ হাসিল করার চেষ্টা করে। মানুষের ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়ে এবার যাতে তারা অন্যধরনের অপচেষ্টা চালানোর চেষ্টা করতে না পারে সে জন্যই আমাদের এই বিবৃতি।

তবে, টিএসসিভিত্তিক সংগঠনগুলোর বিবৃতিতে অনেকটা একই ধরনের বার্তা পাওয়া যায়। প্রেস বিজ্ঞপ্তিগুলো প্রকাশ পাওয়া পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রলের স্বীকার হচ্ছে সংগঠনগুলো। নূমান আহমেদ চৌধুরী নামের এক শিক্ষার্থী নিজ টাইমলাইনে পোস্ট করেন, ‘টিএসসির সংগঠনগুলার খালি প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারিই ছাত্রলীগের কাছে বিক্রি হইছে নাকি সংগঠন ধরেই হইছে? সেটা বড় কথা না। বড় কথা হলো এরকম কপি পেস্ট জব আর পারপ্লেক্সিটি এআই দিয়ে প্যারাফ্রেজ করার কাজ শিখার পর অনলাইনে ডলার কামিয়ে দেশের ডলার সংকট নিরসন করতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক একটি মিম পেজ থেকে পোস্ট করা হয়, ‘আশ্চর্য! শিক্ষার্থীদের ইফতার আয়োজনের বিরুদ্ধে ‍‍`কপি-পেস্ট‍‍` কান্নাকাটি করছে কেন সংগঠনগুলো!’

উল্লেখ্য, বিবৃতি প্রকাশ করা বেশিরভাগ সংগঠনগুলোর সভাপতি - সাধারণ সম্পাদকরা ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত। 

এদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যান্ড সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রুদ্র প্রসাদ রায় ঢাবি ছাত্রলীগের উপ সাংস্কৃতিক সম্পাদক, স্লোগান ৭১‍‍`র আশিক অমি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কুইজ সোসাইটির সভাপতি আলভী খান ঢাবি ছাত্রলীগের আন্তরজাতিক বিষয়ক সম্পাদক বলে জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিভিত্তিক সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের দায়িত্বে থাকা একাধিকজন এ কমিটিতে পদ পেয়েছেন। বিশ্লেষণ করে দেখা যায়—ঢাবি নাট্য সংসদের সভাপতি লিপটন ইসলাম উপ নাট্য ও বিতর্ক বিষয়ক সম্পাদক, ঢাবি ব্যান্ড সোসাইটির সভাপতি ইনজামামুল কবির সাকলায়েন উপ মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক, ঢাবি ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক তামজীদ আহমেদ নিঝুম উপ শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক, জয়ধ্বনির সভাপতি পার্থ সরকার উপ তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাবি আইটি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ উদ্দিন ভূঁইয়া নবীন উপ তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক পদ পেয়েছেন।

Link copied!