মার্চ ৩, ২০২৪, ১১:৪৫ এএম
সম্প্রতি বেইলি রোড, ঢাকার ওয়ারী এবং সর্বশেষ নিউমার্কেটের গাউছুল আজমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নানা মহলে আলোচনা উঠেছে। এই আলোচনা শুরু হয়েছে দেশসেরা বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও। যদি এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ঘটে তাহলে পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য কতটা প্রস্তুত প্রশাসন? ঢাবির অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা কতটুকু? এসব নিয়ে ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা।
আজ রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, এফ বি এস, কলা ভবন, সামাজিক বিজ্ঞান এবং বিভিন্ন হল সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, ঢাবির অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা খুবই ভঙ্গুর। যেকোনো জরুরি অবস্থার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। কিছু জায়গায় অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা থাকলেও সেগুলোর জীর্ণশীর্ণ অবস্থা। অধিকাংশ আবাসিক হলে অগ্নি নির্বাপণের জন্য নেই কোনো উন্নত সরঞ্জাম। শুধু তাই নয়, অগ্নিনির্বাপক গ্যাস, পাউডার সিলিন্ডার, হিটার ও ওয়ার্নিং অ্যালার্মের মতো প্রাথমিক ব্যবস্থাও এখানে নেই।
ঢাবির প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনগুলো ঝুঁকিতে
প্রতিবেদকের সরেজমিন পরিদর্শনে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় ১৫টি, ২য় তলায় ১০টি এবং তৃতীয় তলা ৭টি অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র রয়েছে। মোট ৩২টির মধ্যে দুইতলায় সহকারী হিসাব পরিচালক মোহাম্মদ আবুল কাশেমের দপ্তরের পাশে একটি ও তৃতীয়তলায় একটি যন্ত্র মেয়াদোত্তীর্ণ এবং বেশ কয়েকটি ফায়ার এক্সটিঙ্গুইশার যন্ত্র অব্যবহৃত অবস্থায় থাকতে থাকতে ধুলোবালি জমে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
ঢাবির বিজনেস ফ্যাকাল্টি ( এফবিএস) তে গিয়ে দেখা যায় , ১২ তলা এমবিএ বিল্ডিং ও চার তলা মূল ভবন মিলিয়ে মার্কেটিং বিভাগের সামনে একটি ও ছেলেদের কমনরুমে একটি অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র রয়েছে। এবং সেই দুইটিও মেয়াদোত্তীর্ণ। নিয়মানুযায়ী, এক বছরের মধ্যেই যন্ত্রের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এ দুটি অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র ২০২১ সালের ১১ নভেম্বর কেনা হয়েছে এবং মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২২ সালের ১১ নভেম্বর। মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় আড়াই বছর হয়ে গেলেও পড়ে আছে সেই অবস্থাতেই।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অবস্থা তুলনামূলক ভালো। এ ভবনের বিভাগগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র দেখা যায়। কিন্তু সবগুলো যন্ত্র কেনার দিন ও মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ লেখা নেই। তাই, যন্ত্রগুলোর ব্যবহার উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। এ ভবনের কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডার বিভাগে ৬টি যন্ত্র মেযাদোত্তীর্ণ অবস্থায় পাওয়া যায়। ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি যন্ত্রগুলো কেনা হয়েছে এবং এগুলোর মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি।
হলগুলোর অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা নাজুক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকটের কথা সকলেরই জানা। প্রায় ৪৪ হাজার শিক্ষার্থীর এ বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে থাকা শিক্ষার্থীর সঠিক সংখ্যা নেই কারো কাছেই। হলের রুমগুলোতে ৮-১০ জন এবং গণরুমগুলোতে ত্রিশের অধিক শিক্ষার্থী থাকেন। প্রতিটি হলেই কয়েক হাজার শিক্ষার্থী থাকেন। তবে, এ বিশাল শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি থেকেই যায়। বিশেষ করে অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনার জন্য মোটেও প্রস্তুত নয় হলগুলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, স্যার এ এফ রহমান হল, কবি জসীম উদ্দীন হল এবং মাস্টার দ্য সূর্যসেন হলে সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায় হলগুলোতে একটিও অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র নেই। এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ নির্মিত হল বিজয় একাত্তরে আরেক শোচনীয় অবস্থা! বিজয় একাত্তর হলের যমুনা ব্লকে ১৬টি এবং পদ্মা ব্লকে ১৫ টি অগ্নি নির্বাপন যন্ত্রের একটিরও মেয়াদ নেই। প্রতিটি যন্ত্রই ২০২০ সালের ২১ আগস্ট কেনা হয়েছে এবং পরের বছরের একইদিনে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে।
প্রশাসনের ভাষ্য
বিজয় একাত্তর হল প্রাধ্যক্ষ ড. আবদুল বাছির প্রথমে তার হলের অগ্নি নির্বাপন যন্ত্রগুলোর মেয়াদোত্তীর্ণের বিষয়টি অস্বীকার করলেও প্রতিবেদকের প্রমাণসাপেক্ষে তিনি বলেন, ‘হল গুলোতে অগ্নি নির্বাপনের সকল সরঞ্জাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরবরাহ করা হয়। আমাদের বিষয়গুলোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় চিঠি দিতে হয় বাইরে বিভিন্ন জায়গায় যায়, আমরা জানতে পেরেছি এই সপ্তাহের মধ্যেই নতুন অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র গুলো স্থাপন করা হবে। স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। আর আমরা পুরনো যন্ত্র গুলো শিক্ষার্থীদের দিয়ে একটি মহড়া ব্যবস্থা করব।’
এদিকে স্যার এ এফ রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ রফিক শাহরিয়ার দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ‘প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিংয়ে ভিসি স্যার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আলোকপাত করেছিলেন। দেশের কয়েক জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ফলে এখন আমাদের এসব বিষয়ে নতুন করে ভাবার সময় হয়েছে। তবে হল গুলোতে অগ্নি অগ্নিনির্বাপনের ব্যবস্থা স্থাপনের কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ভিসি স্যার আমাদের (প্রভোস্টদের) বলেছেন এ উদ্যোগটি কীভাবে কার্যকরী করা যায়। আমি হল প্রাধ্যক্ষ হয়েছি। আমি বিষয়গুলো দেখব কোথায় এসব সরঞ্জাম স্থাপন করা যায়।’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘আমি গত প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিংয়ে প্রাথমিকভাবে হলগুলোর অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা জোরদারের ব্যাপারটি নিশ্চিত করার জন্য বলেছি। এবং আমরা অতিসত্বর অন্যান্য ভবনগুলোর দিকে নজর দেব। একাডেমিক ভবনগুলোর অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থার নাজুক অবস্থা অবগত করার জন্য প্রতিবেদককে ধন্যবাদ জানিয়ে ঢাবি ভিসি বলেন, আমি আজই একাডেমিক ভবনগুলোর অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা জোরদারের জন্য চিঠি দেব।’