‘একলা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি/… তোমার জন্যে গলির কোণে/ ভাবি আমার মুখ দেখাব/ মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে। কবি শঙ্খ ঘোষের কবিতার মতোই দশা হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নামফলকের।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের ব্যানারের নিচে চাপা পড়ে গেছে প্রধান ফটকে লেখা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নামটিই। মূল ফটকে টানানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পুনর্মিলনীর ব্যানার। এতে নাম ঢেকে যাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা করছেন শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (১৮ মার্চ) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পুনর্মিলনী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গা ব্যানারে ছেয়ে গেছে। প্রধান ফটকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের উপরও টানানো হয়েছে ব্যানার। পাশেও আরও তিনটি ব্যানার টানানোয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম চাপা পড়ে গেছে।
বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় বইছে। এদিন খুব দ্রুত কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে অনেকেই নেতিবাচক মন্তব্য করছেন। তবে পরবর্তীতে তীব্র সমালোচলার মুখে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের নামফলকের উপর থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের ব্যানার সরিয়ে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
একজন সহকারী প্রক্টর এদিন প্রধান অতিথিকে প্রটোকল দিতে দেখা যায়। তারপরও প্রশাসনের কারোরই এ ঘটনা চোখে পড়েনি।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটকে ব্যানার টানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ঢাকার বিষয়টিকে সংশ্লিষ্টদের ’সাধারণ জ্ঞানের’ অভাব বলে মন্তব্য করেছেন। অনেকে আবার বলছেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নাকি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ অ্যালামনাই এসোসিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় এটিই এখন বোঝা যাচ্ছে না। অনেক শিক্ষার্থী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হারিয়ে গেছে বলে ব্যাঙ্গ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রোল করছেন।
মেহেদী হাসান শাকিল নামের এক শিক্ষার্থী তার ফেসবুক ওয়ালে লেখেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে ডিগ্রী অর্জন করার পর সবাই অ্যালামনাইয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়। আর সেই অ্যালামনাইয়ের পুনর্মিলনীর অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ঢেকে দেয়াটা স্বাভাবিক বিষয় না। এই দিকটি সবার খেয়াল রাখা উচিত।’
এই পোস্টের মন্তব্যের ঘরে সোহাগ নামের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হারিয়ে গেছে। তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’
একটি ফেসবুক পোস্টের মন্তব্যের ঘরে তামান্না সুলতানা নামের এক শিক্ষার্থী লেখেন, ‘সবকিছুরই প্রচার প্রচারণা দরকার আছে। তবে তা যেন অসাবধানতার কারণে আরেকটি বিষয়ের ক্ষতি না হয়ে যায়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ অ্যালামনাইয়ের এ কাজটি দেখে আমরা হতাশ। প্রধান ফটকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ঢেকে দেয়া হয়েছে। এখান দিয়ে অনেকেই যাচ্ছেন, এটা দেখছেন। একটা হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাবেক শিক্ষার্থী লিখেন, এসব কর্মকাণ্ডের জন্যই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আজও জগন্নাথ কলেজের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ব্যানার খুলে ফেলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে লোক কাজে লেগে গেছে ব্যানার খুলতে।
তবে সংবাদ প্রকাশের পরই কেনো ব্যানার সরানোর উদ্যোগ, আগে কেন সরানো হয়নি— এমন প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেউই কথা বলতে রাজী হননি।