ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৩, ০৯:০৮ পিএম
কার্গিল যুদ্ধ নিয়ে দ্বন্দের জেরে সেনা অভুত্থান ঘটিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরীফকে ক্ষমতাচ্যুত করে জেনারেল পারভেজ মোশাররফ নিজেই বনে যান পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি। ক্ষমতায় থাকাকালে বেশ কিছু আলোচিত-সমালোচিত কাজও করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ‘সন্ত্রাসী হামলা’র পর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সমর্থন জানান জেনারেল মোশাররফ। এদিকে একই সাথে সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি থাকার মত সাংঘর্ষিক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন জেনারেল মোশাররফ।
কার্গিল যুদ্ধের আলোচিত টেপ রেকর্ড
কার্গিল যুদ্ধ হলো ১৯৯৯ সালের মে-জুলাই মাসে কাশ্মীরের কার্গিল জেলায় ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের মধ্যে সংঘটিত সর্বশেষ সশস্ত্র সংঘর্ষ। আর এই যুদ্ধে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের কাছে তথ্য গোপন রেখেছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী।
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান থাকাকালে পারভেজ মোশাররফ। সংগৃহীত ফাইল ছবি
ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ এন্ড অ্যানালিসিস উইং বা 'র' পাকিস্তানের সেনা প্রধানের ফোনে আড়ি পেতেছিল। সেখানে জেনারেল মোশাররফের সাথে বিস্তারিত আলাপ হচ্ছিল কার্গিল যুদ্ধ ও অন্যান্য বিষয়ে। ১৯৯৯ সালের ২৬ মে এই টেপ রেকর্ডার ভারতীয় প্রশাসনের কাছে আসে। আর এরপর জুন মাসে সাংবাদিক আর কে মিশ্রর মাধ্যমে তা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে শোনানো হয়।
এই নিয়ে নওয়াজ শরীফ পারভেজকে সামরিক বাহিনী থেকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এর জবাবে ১৯৯৯ সালে নওয়াজ শরীফকে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেন জেনারেল পারভেজ। রাওয়ালপিন্ডির সেন্ট্রাল জেলে আটকিয়ে রাখা হয় নওয়াজ শরীফকে।
নানা সংস্কারে জেনারেল মোশাররফ
২০০১ সালের ২০শে জুন পারভেজ নিজেকে দেশের প্রকৃত রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন এবং ২০০২ সালের ১ই মে তারিখে একটি রেফারেন্ডামের মাধ্যমে তিনি পাঁচ বছরের জন্য রাষ্ট্রপতি থাকবেন বলে জানান। কিন্তু তখনও তিনি সেনাপ্রধানের পদে ছিলেন।
ক্ষমতায় বসার সাথে সাথেই দেশের অর্থনীতি এবং সমাজ-ব্যবস্থা পরিবর্তনের দিকে মনোযোগ দেন 'থার্ড ওয়ে' রাজনৈতিক ধারার এই সমর্থক। উগ্রবাদ দমনে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরো ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
২০০২ সালে তিনি দেশের সংবিধানে পরিবর্তন আনেন। পাকিস্তানের জন্য 'এনলাইটেন্ড মোডারেশোন প্রোগ্রাম' চালু করেন, সঙ্গে সঙ্গে তিনি 'ইকোনমিক লিবারেলাইজেশোন' শক্তভাবে চালু করে ট্রেড ইউনিয়ন নিষিদ্ধ করেছিলেন।
একসাথে সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতির বিরল দৃষ্টান্ত
জেনারেল মোশাররফ পাকিস্তানের ক্ষমতায় থাকতে বিচার বিভাগের সঙ্গে একধরনের লড়াইয়ে নেমেছিলেন। তিনি দেশের আইনের বিরুদ্ধে গিয়ে একই সঙ্গে সেনাবাহিনীর প্রধান ও প্রেসিডেন্ট পদে আসীন থাকতে চেয়েছিলেন। এ জন্য তিনি প্রধান বিচারপতি ইফতেখার মুহাম্মদ চৌধুরীকে বরখাস্ত করেন। এতে দেশব্যাপী প্রতিবাদ শুরু হয়।
২০০৮ সালের নির্বাচনে হেরে যায় তার দল। এই নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ছয় মাস পর অভিশংসন এড়াতে পদত্যাগ করেন তিনি।