তুমুল যুদ্ধে বিপর্যস্ত ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসন শহর থেকে সকল রুশ সৈন্যকে সরে যাবার আদেশ দিয়েছে মস্কো। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরু হবার পর থেকে এই খেরসন শহরটিই ছিল একমাত্র আঞ্চলিক রাজধানী যা রাশিয়া দখল করে নিয়েছিল। খবর বিবিসি বাংলা’র।
পশ্চিমা বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনী তিন দিক থেকে খেরসনের দিকে তাদের অগ্রাভিযান অব্যাহত রেখেছে এবং শহরটির উত্তর-পূর্বদিকে কিছু এলাকা পুনর্দখল করেছে।
এর মধ্যেই বুধবার মস্কো ঘোষণা করে যে অব্যাহত ইউক্রেনীয় আক্রমণের মুখে তারা খেরসন শহর থেকে রুশ সৈন্যদের প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।
রসদপত্রের সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে এই রুশ সৈন্যরা দনিপ্রো নদীর পশ্চিম তীরে কোণঠাসা হয়ে পড়তে পারে এমন সম্ভাবনা আছে।
মস্কোর সেনা কমান্ডার জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন বলছেন, খেরসন শহরে রসদপত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখা আর সম্ভব হচ্ছে না।
"আমি জানি এটা একটি কঠিন সিদ্ধান্ত, তবে আমরা আমাদের সৈন্যদের জীবন এবং আমাদের বাহিনীর লড়াই করার সক্ষমতাকে রক্ষা করবো।" - টিভিতে এক ঘোষণায় বলেন জেনারেল সুরোভিকিন।
'পুতিনের জন্য বড় আঘাত'
বিবিসির সংবাদদাতা হুগো বাচেগা বলছেন, এই সেনা প্রত্যাহার রাশিয়া এবং ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য একটি বড় আঘাত এবং ইউক্রেনের জন্য এক বড় বিজয়।
কৃষ্ণসাগরের উপকুলের কাছে দনিপ্রো নদীর তীরের এই খেরসন শহরটি ক্রাইমিয়া থেকে বেশি দূরে নয় - যা ২০১৪ সালে রাশিয়া তার নিজের অন্তর্ভুক্ত করেছিল। ইউক্রেন যদি খেরসন পুনর্দখল করে তাহলে তা ক্রাইমিয়া পুনর্দখলেরও দরজা খুলে দেবে এমন মনে করা যেতে পারে। এ জন্যই রাশিয়ার দিক থেকে খেরসন দখলে রাখা এক গুরুত্বপূর্ণ, বলছেন বিশ্লেষকরা।
আগস্ট মাসে ইউক্রেন তাদের পাল্টা অভিযান শুরু করার পর থেকেই রুশ সৈন্যদের সরবরাহ রুটের সেতুগুলোকে তাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করেছিল। এ কাজে তারা পশ্চিমা দেশগুলোর দেয়া উন্নতমানের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছিল।
সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রুশদের জন্য পরিস্থিতি প্রতিকুল হয়ে পড়েছিল কারণ তারা খেরসনে তাদের সৈন্যদের রসদপত্র সরবরাহ করতে পারছিল না।
তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলছেন, রাশিয়ার এই ঘোষণার ব্যাপারে তার দেশ খুবই সতর্কভাবে এগুচ্ছে। ইউক্রেনের কর্মকর্তারাও এ ব্যাপারে সংশয়ে রয়েছেন কারণ খেরসন শহরে এখনো রুশ সৈন্যরা আছে এবং তারা কি করতে চায় তা এখনো স্পষ্ট নয়।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পডোলিয়াক বলেছেন, রুশ সৈন্যরা যে কোন যুদ্ধ ছাড়াই চলে যাচ্ছে এমন কোন প্রমাণ তারা দেখেননি।
'লড়াই এখনো চলবে'
বিবিসির বিশ্লেষক জেমস ওয়াটারহাউস কিয়েভ থেকে জানাচ্ছেন, বিশ্লেষকদের মতে, রুশ সৈন্যরা তাদের প্রত্যাহারকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে তবে পাশাপাশি ইউক্রেনের সৈন্যদের অগ্রাভিযান বিলম্বিত করছে। এর অর্থ - লড়াই এখনো চলবে এবং কিয়েভ একে কোন সুযোগ হিসেবে দেখবে না।
ইউক্রেনীয় ট্যাংকগুলো কোন বাধা ছাড়াই বিজয়ীর বেশে খেরসন শহরে ঢুকবে এমনটাও হয়তো হবে না, বলেন তিনি।
ব্রিটিশ সরকারের সবশেষ মূল্যায়নে বলা হয়, রুশ বাহিনী হয়তো ইউক্রেনীয় সৈন্যদের অগ্রাভিযান বিলম্বিত করতে সেখানে মাইন পেতে রেখেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, রুশ বাহিনীকে খেরসন থেকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত থেকে বোঝা যায় যে রুশ সামরিক বাহিনী প্রকৃতপক্ষেই সমস্যায় পড়েছে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ জেনারেল মার্ক মিলি বলছেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ শুরু হবার পর থেকে এ পর্যন্ত এক লক্ষেরও বেশি রুশ সৈন্য ও ৪০ হাজার বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। তিনি নিউইয়র্কে বলেন, নিহত ইউক্রেনীয় সৈন্যর সংখ্যাও এক লক্ষের মত হবে।
খেরাসন থেকে বাসিন্তাদের সরিয়ে নেওয়া বন্ধ
অন্যদিকে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বলছে, রুশ বাহিনী অধিকৃত খেরসনের বাসিন্দাদের শহরের বাইরে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে - কারণ লোকেরা এভাবে যেতে ইচ্ছুক নয়।
ইতোমধ্যে শহরটি থেকে হাজার হাজার লোক বের করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তবে কিয়েভ বলছে, এগুলো জোরপূর্বক করা হয়েছে। ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী বলছে, রুশরা স্থানীয় বাসিন্দাদের সামাজিক ভাতা ও বেতন দেয়াও বন্ধ করে দিয়েছে।