পাকিস্তানে বন্যায় ঘরছাড়া ২০ লাখ মানুষ, পাঞ্জাবে ৯ দিনে ৩৩ মৃত্যু

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ১, ২০২৫, ০১:০৭ পিএম

পাকিস্তানে বন্যায় ঘরছাড়া ২০ লাখ মানুষ, পাঞ্জাবে ৯ দিনে ৩৩ মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত

উপচানো চেনাব, রাভি আরও সুতলেজ নদী গত ২৩ অগাস্ট থেকে এ পর্যন্ত পাকিস্তানের দুই হাজার ২০০ গ্রামের ২০ লাখের বেশি মানুষকে ঘরছাড়া করেছে; মৃত্যুর খবর মিলেছে অন্তত ৩৩ জনের।

এদিকে পাঞ্জাব থেকে নেমে আসা বিপুল পরিমাণ পানিতে এবার সিন্ধুও ‘ভয়াবহ বন্যার’ কবলে পড়তে যাচ্ছে বলে কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন।

পাঞ্জাবে অভাবনীয় মাত্রার উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা চলছে বলে জানিয়েছে ডন।

ভারতের মধ্য প্রদেশ ও হিমাচলের অনেক এলাকায় তুমুল বৃষ্টিপাতের কারণে পাকিস্তানে আরও পানি ঢুকতে পারে শঙ্কায় পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (পিডিএমএ) তাদের সতর্কবার্তায় পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টাকে বেশ ‘গুরুত্বপূর্ণ আখ্যা দিয়েছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, ভারত যদি অতিরিক্ত তিন লাখ কিউসেক পানি সুতলেজে ছাড়ে তাহলে লাহোর এবং আশপাশের এলাকাগুলো ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হবে। এরই মধ্যে মুলতান রোডের মোলানওয়ালের মতো এলাকাগুলো প্লাবিত হয়ে আবাসিক বাড়িঘরে পানি ঢুকে যাওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে মানুষকে সরিয়ে নিতে হয়েছে।

সিন্ধুর মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলী শাহ সাবধান করে বলেছেন, পানি প্রায় ১০ লাখ কিউসেকের কাছাকাছি পৌঁছালে তা তার প্রদেশের বাঁধগুলোর জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে, তলিয়ে যেতে পারে বিপুল পরিমাণ ভূমি, ঝুঁকিতে ফেলতে পারে ২ লাখের বেশি মানুষকে।

গত সপ্তাহজুড়ে বর্ষার বৃষ্টিতে পাঞ্জাব দিয়ে প্রবাহিত তিনটি প্রধান নদী ফুঁসে ওঠে মূলত তীরের কাছাকাছি গ্রামাঞ্চলকে ভাসিয়েছে। টানা বর্ষণে তলিয়েছে লাহোরের একাধিক এলাকাসহ বিভিন্ন শহরাঞ্চলও।

বর্ষার বৃষ্টির ওপর দক্ষিণ এশিয়াজুড়েই কৃষকরা নির্ভরশীল। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন এ বৃষ্টিকেই প্রাণঘাতি বিপদে পরিণত করেছে।

পাকিস্তানজুড়ে এবারের বর্ষায় স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট ভূমিধস ও বন্যা জুন থেকে এ পর্যন্ত ৮৫০ জনের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।

পাঞ্জাবের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক ইরফান আলি কাঠিয়া গণমাধ্যমকে বলেছেন, ভারতের বাঁধগুলো থেকে পানি ছাড়ার বিষয়টি বেশ স্পর্শকাতর এবং সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ সতর্কাবস্থায় রয়েছে।

সিন্ধু পানি কমিশন, জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এবং সব বিভাগ সক্রিয় রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সুতলেজ নদী নিয়ে ভারতীয় কমিশনের সঙ্গে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের কথা হয়েছে।

তবে সালাল বাঁধ থেকে পানি ছাড়া নিয়ে ভারতীয় কমিশন হালনাগাদ তথ্য দেয়নি, বলেছেন কাঠিয়া।

বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে পিডিএমএ-র সর্বশেষ প্রতিবেদনে ২৩ থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চেনাব, রাভি ও সুতলেজের কারণে সৃষ্ট বন্যায় ৩৩ জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করা হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৮ জন।

উদ্ধারকারী দলগুলো ৭ লাখ ৬০ হাজার ৪২৪ জন এবং ৫ লাখ ১৬ হাজার ২৫৮টি পশুকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছে। ৩৩১টি শিবিরের মাধ্যমে ভেটেরিনারি সেবা দেওয়া হচ্ছে।

রোববার জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লেফটেনেন্ট জেনারেল ইনাম হায়দার মালিক সাম্প্রতিক বৃষ্টি-বন্যায় পাকিস্তানজুড়ে ৮৫০ মৃত্যু এবং এক হাজার ১৫০ এর বেশি আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

সেপ্টেম্বরের প্রথম ১০ দিনের মধ্যেই বর্ষার শেষ দফা বৃষ্টি দেখা যাবে বলে তার ধারণা।

এ সময় পাঞ্জাবের পূর্বাঞ্চল, আজাদ কাশ্মীর ও আশপাশের এলাকায় প্রবল বৃষ্টিপাত হতে পারে, বলেছেন তিনি।

Link copied!