গত ২৮ জুন ইরানের প্রথম দফা নির্বাচনে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও পরে সেটা সংস্কারপন্থী মাসুদ পেজেশকিয়ান ও কট্টরপন্থী সাইদ জালিলির মধ্যে লড়াইয়ে পরিণত হয়। আর এই লড়াইয়ে শেষ হাসি হেসেছেন মাসুদ পেজেশকিয়ান।
শনিবার (৬ জুলাই) ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বিষয়টি জানানো হয়।
কে এই পেজেশকিয়ান? চলুন জেনে আসা যাক-
আরও পড়ুন: মাসুদ পেজেশকিয়ানই ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট
২০২২ সালে মাশা আমিনির দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর পরে ইরানের আইনপ্রণেতা মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছিলেন, “একটি মেয়েকে তার হিজাবের জন্য গ্রেপ্তার করা ও পরে তার মরদেহ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া ইসলামী প্রজাতন্ত্রে অগ্রহণযোগ্য।”
এরই কয়েকদিন পরেই দেশব্যাপী বিক্ষোভ ও ভিন্নমতের বিরুদ্ধে কঠোর ক্র্যাকডাউনের মধ্যে মাসুদ পেজেশকিয়ান ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিকে অপমানের বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, মাশা আমিনির ঘটনা ইরানের সমাজে দীর্ঘমেয়াদে বিভাজন ঘটাবে।
গত ২৮ জুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪০ শতাংশ। ৩ কোটিরও বেশি ভোটগণনার পর মাসুদ পেজেশকিয়ান ১ কোটি ৭০ লাখেরও বেশি ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে সাইদ জালিলি পান ১ কোটি ৩০ লাখেরও বেশি ভোট।
১৯৫৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ইরানের মাহাবাদে পেজেশকিয়ানের জন্ম। তারা বাবা একজন আজারি ও মা একজন কুর্দি। তিনি বহুভাষী, আজারি ভাষায় কথা বলেন ও ইরানের বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর বিষয়ে তিনি নিবেদিতপ্রাণ। পেজেশকিয়ান ইরান-ইরাক যুদ্ধে কাজ করেছিলেন, মেডিকেল দলগুলোকে সামনের সারিতে পাঠান।
প্রাথমিকভাবে হার্ট সার্জন হিসেবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পেজেশকিয়ান পরে তাব্রিজ ইউনিভার্সিটি অব মেডিকেল সায়েন্সের প্রধান হন। ১৯৯৪ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী-কন্যা নিহতের পর তার জীবনের মোড় ঘুরে যায় ও এরপর থেকে বেঁচে যাওয়া সন্তানদের নিজেই বড় করে তোলেন। দ্বিতীয়বার বিয়ে করেননি।
রাজনীতিতে প্রবেশ করে পেজেশকিয়ান ইরানের উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও পরবর্তীতে সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামির প্রশাসনের অধীনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কানাডীয়-ইরানি ফটোগ্রাফার জাহরা কাজেমির মৃত্যুর পরের ময়নাতদন্তের ঘটনায় উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যায় জড়িত হয়েছিলেন। কাজেমি তেহরানের এভিন জেলের একটি বিক্ষোভের ছবি তোলার অভিযোগে আটক হওয়ার পর নির্যাতিত হন ও হেফাজতে মারা যান।
পেজেশকিয়ান পরবর্তীতে আইনপ্রণেতা ভূমিকায় আসেন। তিনি তাব্রিজের একজন আইনপ্রণেতা হিসেবে নির্বাচিত হন এবং পরে সংসদের ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তার স্বাধীন অবস্থানের জন্য পরিচিত এবং সংস্কারবাদী ও মধ্যপন্থী দাবিকেও সমর্থন করেন। তিনি ইরানের বিপ্লবী গার্ডের প্রশংসা করেছিলেন। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রেরও সমালোচনা করেছিলেন।
২০০৮ সাল থেকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় তাবরিজ শহরের হয়ে ইরানের পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন মাসুদ পেজেশকিয়ান। নির্বাচনের আগে ইরানের প্রধান সংস্কারপন্থী জোটের সমর্থন পাওয়ার পাশাপাশি সাবেক দুই সংস্কারপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামি ও হাসান রুহানিরও সমর্থন পেয়েছিলেন তিনি।
২০১১ সালে রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য নিবন্ধন করলেও পেজেশকিয়ান সেটা প্রত্যাহার করে নেন। ২০২১ সালের নির্বাচনে তিনি সেসব প্রার্থীদের মধ্যে ছিলেন, যাদের ওপর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার নিষেধাজ্ঞা ছিল।