ইন্ডিয়া হয়ে যাচ্ছে ভারত, চলছে পক্ষে-বিপক্ষে তীব্র বাদানুবাদ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৩, ০৩:৫৩ এএম

ইন্ডিয়া হয়ে যাচ্ছে ভারত, চলছে পক্ষে-বিপক্ষে তীব্র বাদানুবাদ

জি-২০ সম্মেলনের আমন্ত্রণপত্রেই ভারতের রাজনীতিতে ছড়িয়ে পড়ে ‘ভারত’ সংক্রান্ত উত্তেজনা। ছবি: সংগৃহীত

বদলে যাচ্ছে ‘ইন্ডিয়া।’ হয়ে যাচ্ছে ‘ভারত।’ এ নিয়ে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনসহ নানা মহলে চলছে তীব্র বাকযুদ্ধ। বোঝাই যাচ্ছে ‘ইন্ডিয়া’-কে ঔপনিবেশিক তকমা হিসেবে দেখা বা আদি নাম হিসেবে ‘ভারত’-প্রীতির প্রবণতাটি বরাবরই খুব তীব্র। তবে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, এখন কেন? ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং রাজনীতিক ও অতি অবশ্যই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আলোচনায় প্রশ্নটির উত্তরও রয়েছে। আর তা হলো,  আগামী নির্বাচন এবং তা ঘিরে বিরোধী জোটের তৎপরতাকে ঠেকাতেই এই নাম বদলের হঠাৎ উদ্যোগ।

এক আমন্ত্রণপত্রেই ভারতের রাজনীতিতে ছড়িয়ে পড়ে ‘ভারত’ সংক্রান্ত উত্তেজনা। বিশ্ব দরবারে ভারতের ‘ইন্ডিয়া’ নাম পাল্টে যাওয়ার জল্পনা শুরু হয় এরপরই। আর তাও বিশ্বনেতাদের আগমনের ঠিক আগে আগে। তবে এই আমন্ত্রণপত্র প্রকাশের পর বিশ্ববাসীর চেয়ে ভারতের বিজেপি সরকারের বিরোধী জোট তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করে। কেন না তাদের নাম যে ‘ইন্ডিয়া’। কিন্তু কেন এই নাম বদল?

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, জি-২০ সম্মেলনে অংশ নিতে ভারতে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ বিশ্বনেতারা। ৯ সেপ্টেম্বর এসব বিশ্বনেতাকে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। আমন্ত্রণপত্রে চিরাচরিতভাবেই লেখার কথা ‘প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া’। কিন্তু সেখানে দেখা গেল লেখা ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’।

মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর এই আমন্ত্রণপত্র মিডিয়ায় আসার পর শুরু হয় নতুন জল্পনা।

বদলে যাচ্ছে ইন্ডিয়ার নাম!  
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার বলছে, বিজেপিবিরোধী দলগুলো যে জোট তৈরি করেছে, তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইন্ডিয়া’। তাতে কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি (এএপি) তৃণমূল কংগ্রেস, শিবসেনা (উদ্ধব শিবির), এনসিপি, এসপি, জেডিইউ, ডিএমকের মতো একাধিক বিজেপিবিরোধী দল রয়েছে। প্রথমে পাটনা, তারপর বেঙ্গালুরু হয়ে এই জোটের নেতারা সম্প্রতি মুম্বাইয়ে বৈঠক করেছেন। তৈরি হয়েছে সমন্বয় কমিটি।

আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইন্ডিয়া জোট বিজেপি নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিতে পারে বলে মনে করেন একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। আর এ কারণেই প্রথমে সঙ্গীদের নিয়ে নিজেদের মতো করে জোট বানিয়েছে বিজেপি। তাতে মোদি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

শুধু জোট বানিয়েই ক্ষান্ত থাকেনি বিজেপি, বিরোধী জোট নিয়ে কড়া সমালোচনাও শোনা গেছে। ‘ইন্ডিয়া’ নামটি নিয়ে একাধিকবার সরাসরি কটাক্ষ করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাতে গলা মিলিয়েছেন বিজেপির অন্য নেতারাও।

এবার কি সেই ইন্ডিয়া নাম বদলে দেশের নাম শুধু ভারত করার লক্ষ্যে হাঁটতে শুরু করল মোদি সরকার? বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার দল আম আদমি পার্টির নেতা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সেদিকেই ইঙ্গিত করলেন। এ নিয়ে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন তিনি।

অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন, ‘নাম পরিবর্তনের ব্যাপারে আমি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বার্তা পাইনি। শুধু বিরোধী শিবিরের জোটের নাম ‘ইন্ডিয়া’ বলে গোটা দেশের নাম পাল্টে দিতে হবে? দেশটা ১৪০ কোটি মানুষের। এটি কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের দেশ নয়। এখন যদি আমাদের জোটের নাম ভারত হয়, তাহলে কি দেশের নাম পাল্টে বিজেপি হয়ে যাবে?’

সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, বিরোধীদের ভয় পেয়েই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে মনে করেন কেজরিওয়াল। তিনি বলেন, ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ নামের যে ঘোষণা মোদি দিয়েছেন, সেটি থেকে সবার নজর সরাতেই হুট করে এমন আমন্ত্রণপত্র বানানো হলো। এই নাম পরিবর্তনে কি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রুখে দেওয়া যাবে? এতে কি বেকার কমবে?

ওই আমন্ত্রণপত্র প্রকাশের আগে থেকেই অবশ্য বিজেপি নেতারা ‘ইন্ডিয়া’ নামটি সংবিধান থেকে সরিয়ে ফেলার দাবি করে আসছেন। সংসদের গত অধিবেশনে রাজ্যসভায় বিজেপির এমপি নরেশ বানসাল বলেন, ইন্ডিয়া নামটার সঙ্গে কেমন যেন দাসপ্রথা জড়িয়ে আছে। সংবিধান থেকে এই নাম বাদ দেওয়া উচিত।

এ নিয়ে অবশ্য ভারতের সর্বোচ্চ আদালত শুনানির ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করেছে।

তবে ভারতের অন্যতম প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল কংগ্রেস মঙ্গলবার দলটির প্রবীণ নেতা সোনিয়া গান্ধীর বাড়িতে বৈঠকে বসেছে। এর পর ‘ইন্ডিয়া’ জোটের বৈঠকও হওয়ার কথা।

সম্প্রতি ভারতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করা হয়েছে। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর শুরু হবে এই অধিবেশন। তাতেই সংবিধান থেকে ‘ইন্ডিয়া’ নাম সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারতের সংবিধানের আর্টিকেল ১-এ লেখা আছে, ‘ইন্ডিয়া, দ্যাট ইজ ভারত’।

এমন এক সময়ে এই আমন্ত্রণপত্র প্রকাশিত হলো, যার দুদিন আগে ভারতের রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগওয়াত বলেছেন, ‘ইন্ডিয়া’ নাম না বলে সবার ‘ভারত’ বলা উচিত। ‘ভারত’ নামটি প্রাচীন আমল থেকে চলে আসছে।

নাম বদলের এই আঁচ লেগেছে শোবিজ জগতে। দেশের নাম পরিবর্তন নিয়ে যখন তোলপাড় গোটা দেশ, তখনই মঙ্গলবার দুপুরে ‍‍`এক্স‍‍` পোস্ট করেন অমিতাভ বচ্চন। অমিতাভ লেখেন, ‍‍`ভারত মাতা কি জয়‍‍`। সেই সাথে তেরঙ্গার ইমোজি ও কমলা ফ্ল্যাগ ইমোজি দেন। হিন্দিতে এমনটাই লেখেন বিগ বি। তাঁর পোস্টে ইতিমধ্যেই ২৬ হাজার লাইক পড়েছে। সেই সাথে রিপোস্টের সংখ্যা ছুঁয়েছে ৪,১২০ যা ক্রমেই বাড়ছে। 

Link copied!