এপ্রিল ২, ২০২৪, ০৪:১১ পিএম
সিরিয়ায় নিযুক্ত ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জবাব দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছে তেহরান কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি দেশটির সাধারণ বিক্ষোভকারীদের মধ্য থেকেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান এসেছে।
স্থানীয় সময় সোমবার (১ এপ্রিল) বিকেল পাঁচটার দিকে এ হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার মোহাম্মেদ রেজা জাহেদি ও আরেকজন সিনিয়র কমান্ডার মোহাম্মদ হাজি হাদি রহিমিসহ অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
দীর্ঘ দিন ধরে ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা ও তাদের মিত্রদের লক্ষ্যবস্তু করে আসছে ইসরায়েল। তবে সোমবার প্রথমবারের মতো ইরানের কনস্যুলেট ভবনে চালানো হয়েছে।
সিরিয়ায় কনস্যুলেটে হামলার জেরে ইরানের সঙ্গে আঞ্চলিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে ইসরায়েল। কারণ লেবানন ও গাজার যুদ্ধরত গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ও হামাসকে অর্থায়ন ও অস্ত্র সরবরাহ করে ইরান। বিশ্লেষকরা বলছেন, সোমবারের এই হামলাকে ইসরায়েল তাদের প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এমনকি তা ইরানের সঙ্গে আঞ্চলিক যুদ্ধেও রূপ নিতে সময় লাগবে না।
ইরানের প্রতিক্রিয়া
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেছেন, সোমবারের হামলায় ‘প্রতিক্রিয়া জানানোর অধিকার ইরানের অবশ্যই আছে।’
তার কথারই সূত্র ধরে পৃথক বিবৃতিতে দামেস্কে কনস্যুলেটে হামলার ঘটনাকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান ‘সব ধরনের আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা ও চুক্তির লঙ্ঘন’ হিসেবে বিবেচনা করছেন। একই সঙ্গে দামেস্কে কনস্যুলেটে হামলার ঘটনায় ইসরায়েল জড়িত বলেও দাবি করেছেন তিনি।
দামেস্কে হামলার ঘটনায় প্রাণে বেঁচে গেছেন ইরানের রাষ্ট্রদূত হোসেন আকবরী। ইসরায়েলের প্রতি চরম প্রতিশোধের স্পৃহা প্রকাশ করে তিনি মন্তব্য করেন, তেহরানের প্রতিক্রিয়া হবে ‘চূড়ান্ত নিষ্পত্তিমূলক’।
এদিকে সিরিয়ায় কনস্যুলেট ভবনে হামলার ঘটনায় ইরানে বিক্ষোভ হচ্ছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের ক্ষমতাসীন সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রতিক্রিয়ায় অন্যরা
ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ ভাহিদিকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল মেকদাদ বলেন, ‘আমরা দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেট ভবন লক্ষ্য করে চালানো নৃশংস এই সন্ত্রাসী হামলা ও নিরপরাধ মানুষকে হত্যার তীব্র নিন্দা জানাই।’
এক বিবৃতিতে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বলেছে, সোমবারের হামলায় ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডস কোরের (আইআরজিসি) অভিজাত শাখা কুদস ফোর্সের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদি ও তার ডেপুটি জেনারেল মোহাম্মদ হাদি হাজি রাহিমি নিহত হয়েছেন।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে, ‘আমরা সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলার মিশনের বিরুদ্ধে এই অগ্রহণযোগ্য হামলার তীব্র নিন্দা জানাই।’
লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই অপরাধের জন্য শত্রুপক্ষকে শাস্তি পেতে হবে। অবশ্যই হামলার প্রতিশোধ নেওয়া হবে।’ এছাড়া ইরাক, জর্ডান, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অন্যান্য মুসলিম দেশও এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
ইসরায়ের ক্রমাগত হামলার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘ওই অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান সংঘাত বৃদ্ধির কারণ হতে পারে এমন যেকোনো বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন আছে ওয়াশিংটন।’
যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকারবিষয়ক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলেছে, ইসরায়েলি ওই হামলায় আটজন ইরানি, দুজন সিরীয় ও লেবাননের একজনসহ অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের সবাই যোদ্ধা।
কঠোর প্রতিশোধের হুমকি ইরানের
এদিকে দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলার ঘটনায় কঠোর প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছে তেহরান কর্তৃপক্ষ। ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেন, ‘প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে ইহুদিবাদী ইসরায়েল আত্মরক্ষার জন্য তার এজেন্ডায় অন্ধ হত্যাকাণ্ড ফিরিয়েছে। এটা অবশ্যই জানতে হবে যে, তাদের এই লক্ষ্য কখনই অর্জিত হবে না এবং এই কাপুরুষোচিত অপরাধের জবাব দেওয়া হবে।’
সূত্র: এপি, সিএনএন, বিবিসি