মে ২৭, ২০২৫, ০২:০৮ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
জেরুজালেমে গতকাল সোমবার কট্টর ডানপন্থী ইসরায়েলিরা পবিত্র আল-আকসা মসজিদের প্রাঙ্গণ ও জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) কার্যালয়ে আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে ঢুকে পড়েন। জেরুজালেম দিবস উপলক্ষে আয়োজিত মিছিল থেকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় সেখানকার ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালানো হয়।
জেরুজালেমের পুরোনো শহরের অলিগলি ও মুসলিম–অধ্যুষিত এলাকার ভেতর দিয়ে মিছিল করার সময় কিছু ইসরায়েলি ‘আরবদের মৃত্যু হোক’ ও ‘তোমাদের গ্রাম জ্বলে যাক’ বলে স্লোগান দেন।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এসব খবর জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেম দখল করে। তখন থেকে শহরটি ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্রতিবছর ইসরায়েলে ২৬ মে জেরুজালেম দিবস হিসেবে উদ্যাপন করা হয়, যা একটি বার্ষিক ছুটির দিন। এই দিনের স্মরণে প্রতিবছর একটি মিছিল বের করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে আগেভাগেই শত শত সশস্ত্র পুলিশ ও সীমান্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। কারণ, ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা নিয়মিত মুসলিম–অধ্যুষিত এলাকার দোকানপাট ও ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা, নিপীড়ন ও হয়রানি করে থাকেন।
বসতি স্থাপনকারীরা অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমের বিভিন্ন বসতি ও ফাঁড়িতে বসবাস করেন, যা আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ।
গতকালও একদল ইসরায়েলি তরুণ ফিলিস্তিনি দোকানদার, পথচারী, স্কুলগামী শিশু, এমনকি ইসরায়েলি মানবাধিকারকর্মী ও পুলিশের সঙ্গে বিবাদে জড়ান। তারা লোকজনের গায়ে থুতু ছিটান, গালাগাল করেন ও জোরপূর্বক ঘরে ঢোকার চেষ্টা চালান। তাদের অনেকের হাতেই এ সময় ইসরায়েলি পতাকা ছিল।
ঘটনাস্থলে থাকা এএফপির একজন সাংবাদাতা জানান, এ সময় পুলিশ অন্তত দুই যুবককে আটক করেছে।
মিছিলকারীদের একটি ছোট দল পূর্ব জেরুজালেমে ইউএনআরডব্লিউএর একটি কার্যালয়য়ের প্রাঙ্গণেও ঢুকে পড়ে। এ দলে একজন ইসরায়েলি সংসদ সদস্যও ছিলেন।
ইসরায়েল ইউএনআরডব্লিউএকে দেশটি ও অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে নিষিদ্ধ করেছে। এর ফলে গাজা উপত্যকায় সংস্থাটির ৭০ বছরের বেশি সময় ধরে চলা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
ইউএনআরডব্লিউএর পশ্চিম তীরের সমন্বয়কারী রোলান্ড ফ্রিডরিশ বলেন, ডজনখানেক ইসরায়েলি মিছিলকারী ইসরায়েলি পুলিশের সামনেই মূল ফটক বেয়ে ওই প্রাঙ্গণে ঢোকেন। তাদের মধ্যে ইউলিয়া মালিনোভস্কিও ছিলেন। তিনি ইউএনআরডব্লিউএকে নিষিদ্ধ করা একটি আইনের অন্যতম প্রণেতা।
গত বছর একই মিছিলে উগ্র জাতীয়তাবাদী ইসরায়েলিরা পুরোনো জেরুজালেমে এক ফিলিস্তিনি সাংবাদিকের ওপর হামলা চালিয়েছিলেন এবং ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
আর চার বছর আগে একই মিছিল গাজায় ১১ দিনের একটি যুদ্ধের কারণ হয়েছিল।
গতকাল সকালে ইসরায়েলের চরম ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ও অন্যান্য রাজনীতিবিদসহ দুই হাজারের বেশি ইসরায়েলি পবিত্র আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকায় আগ্রাসীভাবে ঢুকে পড়েন।
বেন-গভির তার এক্স অ্যাকাউন্টে আল–আকসা প্রাঙ্গণ থেকে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের বিজয়, সব জিম্মির মুক্তি ও নবনিযুক্ত শিন বেতপ্রধান মেজর জেনারেল ডেভিড জিনির সাফল্যের প্রার্থনা করছি।’ এর আগেও সশস্ত্র পুলিশের সহায়তায় বেন-গভির আল–আকসা প্রাঙ্গণে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়েছিলেন।
আল–জাজিরার সংবাদদাতা নিদা ইব্রাহিম বলেন, এই মিছিলের লক্ষ্য হলো শহরের ওপর ইসরায়েলি আধিপত্য জাহির করা। তিনি বলেন, বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, জেরুজালেমের পুরোনো শহরের ভেতরে ইসরায়েলি নাগরিকেরা ফিলিস্তিনিদের দোকানে হামলা চালাচ্ছেন এবং তাদের দিকে বিভিন্ন বস্তু ছুড়ে মারছেন।