ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল শুক্রবারই প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করতে পারেন। চলতি সপ্তাহেই তিনি দেশে মার্শাল ল` প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছিলেন। শাসক দলের প্রধান প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের বিষয়টিকে সমর্থন করেছেন।
পিপলস পাওয়ার পার্টি (পিপিপি)-এর নেতা হান দুং-হুন গতকাল শুক্রবার এক জরুরি বৈঠকে বলেন, তার দল “বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ” পেয়েছে যে মঙ্গলবার রাতে সামরিক আইন জারি করার সময় প্রেসিডেন্ট ইউন গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদদের “রাষ্ট্রবিরোধিতার” অভিযোগে গ্রপ্তারের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার শাসক দলের প্রধান সতর্ক করেছেন যে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল যদি ক্ষমতায় থাকেন, তাহলে দক্ষিণ কোরীয়রা “বড় ধরনের বিপদের” মুখে পড়তে পারে। তাই, তিনি অবিলম্বে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
হ্যানডং-হুন তার বক্তব্যে পরিস্কার করেছেন যে, পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্টকে অভিসংশন করার জন্য অধিকাংশ এমপি ভোট দেবেন। উল্লেখ্য, দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেলে তবে প্রেসিডেন্টকে ইমপিচ করা সম্ভব। অর্থাৎ, ৩০০ জনের পার্লামেন্টে ২০০টি ভোট প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে যেতে হবে।
এর মধ্যে বিরোধী জোটের ১৯২ জন এমপি ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব জমা দিয়েছেন। ফলে তাদের ভোট এমনিতেই প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে যাবে।
আরও পড়ুন: অভিশংসনের মুখে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট
গতকাল হান যা বলেন, তা তার পূর্বের অবস্থান থেকে একেবারে ভিন্ন। কারণ এর আগে তিনি বলেছিলেন যে তার দল বিরোধী দলের অভিশংসন প্রস্তাব আটকে দেবে।
বিরোধীরা গত বুধবার সংসদে ওই অভিসংশন প্রস্তাব পেশ করেছিলো। তবে সেই অভিশংসন প্রস্তাব পাস করতে বিরোধীদের অন্তত আটজন শাসক দলের সংসদ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন।
প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে শাসক দলের প্রধানের এই অবস্থানে দলের একটি বড় অংশ দলীয় প্রধানকে সমর্থন করছেন। ফলে তারাও প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন। বস্তুত, শাসকদলের ১৮ জন এমপি বিরোধীদের ইমপিচমেন্ট প্রস্তাবকে সমর্থন করেছেন। ফলে কোনোভাবেই প্রেসিডেন্ট পদ টিকিয়ে রাখতে পারবেন না উন।
দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, অভিশংসন প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়ার আহ্বান করে জনগণ পিপিপি’র পার্লামেন্ট মেম্বারদের হাজার হাজার বার্তা পাঠাচ্ছেন।
স্থানীয় জরিপকারী প্রতিষ্ঠান রিয়েলমিটারের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দশজনের মাঝে সাত জনের বেশি দক্ষিণ কোরীয় নাগরিক প্রেসিডেন্টের অভিশংসনের পক্ষে।
অভিশংসন প্রস্তাব পাশ করতে ২০০ ভোট প্রয়োজন। বিরোধী দলের হাতে ১৯২টি আসন রয়েছে। অর্থাৎ, প্রস্তাব পাশ করার জন্য তাদের শাসক দল থেকে মাত্র আটজনের ভোট প্রয়োজন।
এমনিতে শাসক দলের সংসদ সদস্যের সংখ্যা ১০৮ জন।
সামরিক শাসন জারির চেষ্টা করার আগে থেকেই প্রেসিডেন্ট ইউন অজনপ্রিয়। দুর্নীতির অভিযোগ ও বিরোধী-নিয়ন্ত্রিত সংসদের কারণে কার্যত একপ্রকার অচলাবস্থার মধ্যে ছিলেন তিনি।
মঙ্গলবার দেশে মার্শাল আইন চালু করার চেষ্টা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট। যা নিয়ে গোটা দক্ষিণ কোরিয়া জুড়ে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। বিরোধীরা এর তীব্র বিরোধিতা করে। শাসক দলের প্রধান জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট তার এই পদক্ষেপ শেষ পর্যন্ত সমর্থন করে গেছেন। আর সেখান থেকেই দলের ভিতরে উনের গ্রহণযোগ্যতা কমেছে।
শনিবার উনকে ইমপিচ করা হলে সাংবিধান আদালত ঠিক করবে প্রেসিডেন্টকে পদ থেকে সরানো হবে, নাকি তাকে একই পদে বহাল রাখা হবে। প্রেসিডেন্টকে সরিয়ে দেওয়া হলে প্রধানমন্ত্রী তার জায়গায় উত্তীর্ণ হবেন।