ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৪, ০৭:১১ পিএম
মিয়ানমারে সামরিক ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে চলছে তুমুল লড়াই। দেশটির বিশাল সশস্ত্র বাহিনী ‘টাটমা-ড’ পুরোপুরি পরাস্ত হয়ে পড়ছে জাতিগত বিদ্রোহীদের কাছে। দেশটির তিনটি প্রধান জাতিগত বিদ্রোহী বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’।
তিনটি গোষ্ঠী হলো- তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এমএনডিএএ) এবং আরাকান আর্মি (এএ) নিয়ে এই গঠিত এই অ্যালায়েন্স। এই অ্যালায়েন্সের চালানো বর্তমান মিশন ‘অপারেশন ১০২৭’-এ শত শত সাধারণ মানুষও যোগ দিয়েছে যার ফলে প্রায় ধরাশায়ী হয়ে পড়েছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার।
মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করছে এমন বিশেষজ্ঞদের একটি দল জানিয়েছে, বর্তমানে দেশটির জান্তা সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে মাত্র ১৭ শতাংশ ভূখণ্ডের ওপর, ২৩ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ে রয়েছে দ্বন্দ্ব এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের দখলে রয়েছে ৫২ শতাংশেরও বেশি ভূখণ্ড।
এমনকি বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড অব পুলিশ অর্থাৎ বিজিপির সদস্যদের আরাকান আর্মি এমনভাবে কোণঠাসা করে ফেলেছে যে তারা যুদ্ধ থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এই এলাকায় মিয়ানমারের সামরিক ঘাঁটিগুলো একের পর এক নিজেদের দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি।
মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনের সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর একটি সশস্ত্র বাহিনী আরাকান আর্মি বা এএ নামে পরিচিত, যারা রাখাইনের বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াই করছে।
২০০৯ সালে জন্ম নেয়া আরাকান আর্মি রাজনৈতিক ও সামরিক বিস্তার ঘটিয়ে এখন এত শক্তিশালী হয়েছে যে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় প্রায় সবগুলো শহরেই এর ক্ষমতা বেশি।
আর এই প্রভাব বিস্তার ও শক্তিশালী লড়াইয়ের পিছনে যে ব্যক্তিটি দায়িত্বে রয়েছেন তিনি হলেন জেনারেল তোয়ান ম্রাত নাইং, আরাকান আর্মির প্রধান।
২০২০ সালের মধ্যে রাখাইনে রাষ্ট্রবিরোধী অভ্যুত্থান সফল করার পিছনেও রয়েছে এই জেনারেলের হাত। প্রযুক্তির অবদান ব্যবহার করে নিজেদের কর্মকাণ্ড প্রচার করতে আরাকান আর্মি যেসব ভিডিও প্রচার করে থাকে সেগুলোতে দেখা যায় সামরিক পোশাকে, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা পড়া এক ব্যক্তিকে যিনি আধুনিক সব অস্ত্র ব্যবহারে তরুণ সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।
১৯৭৮ সালের ৭ নভেম্বর মিয়ানমারের সিটওয়েতে জন্ম এই আরাকান বিপ্লবীর। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ও দুই সন্তানের পিতা এই জেনারেল।
১৯৯৮ সালে আরাকানের ন্যাশনাল ইউনিটি পার্টিতে যোগদানের পরিকল্পনা করলেও পার্টির জেনারেল নিহত হলে রাখাইনে ফিরে আসেন তিনি। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন সিটওয়ে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তারপর ২০০৯ সালে চিকিৎসক নিও তোয়ান অংয়ের সাথে মিলে গঠন করেন আরাকান আর্মি। নিও তোয়ান এখন আরাকান আর্মির কমান্ডার ইন চিফ।
এক সময় টুরিস্ট গাইড হিসেবে ইয়াঙ্গুনে পর্যটকদের নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন তোয়ান ম্রাত নাইং। সে সময় থেকে অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন এই নেতা। এছাড়াও সামরিকবাদ, দর্শন, রাজনীতি, ভূগোল এবং ইতিহাসে রয়েছে অগাধ জ্ঞান। যার প্রভাব দেখা যায় তার যুদ্ধ কৌশলে ও বিভিন্ন সাক্ষাৎকারেও।
কেন এই নেতার এত জনপ্রিয়তা
দীর্ঘ সময় ধরে দেশটিতে শক্ত হাতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন এ নেতা। দেশের সব জায়গায় জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গেলেও রাখাইনদের জন্য লড়াইয়ে তিনি জোর দিচ্ছেন বেশি।
এমনকি আরাকান আর্মির যাত্রা শুরুর সময় দেশটির জেড খনিতে কাজ করা রাখাইন যুবকদের আর্মিতে নেয়া হয়। আর রাখাইন রাজ্যকে স্বাধীন করতে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কারণেই দিনের পর দিন অবহেলিত জনপদ রাখাইন রাজ্যের সাধারণ মানুষের মধ্যে আরাকান আর্মির ব্যাপক জনপ্রিয়তা।
পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের কার্যক্রম প্রচারের মাধ্যমে দেশটিতে নিজেদের প্রচার ও প্রসার বাড়িয়েছে আরাকান আর্মি। এজন্য অপেক্ষাকৃত নতুন সংগঠন হলেও আরাকান আর্মি রাখাইন তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়। আরাকান আর্মিতে যোগ দিচ্ছে দেশটির নারীরাও।
এছাড়াও তোয়ান ম্রাত নাইং প্রায়ই সময় বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেন এবং বলেন আরাকান আর্মি যদি আরাকানে নিয়ন্ত্রণাধিকার পায় তাহলে রোহিঙ্গাদের নিয়ে একসাথে কাজ করবে। রোহিঙ্গাদের কাজ করার অভিপ্রায় প্রকাশ তাকে জনপ্রিয়তা পেতে সাহায্য করে।