ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে যতদিন প্রয়োজন ততদিন জেলেনস্কিকে সামরিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকে অস্ত্র, অর্থ— সব দিক থেকেই ইউক্রেনকে সাহায্য করে আসছে বাইডেন প্রশাসন। এছাড়াও তাদের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির মাধ্যমে ইউক্রেনে ৩৭ কোটি মার্কিন ডলার ত্রাণ সহায়তা পাঠানোর ঘোষণাও দিয়েছেন বাইডেন।
বুধবার (২২ ডিসেম্বর) ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠকের পর এই ঘোষণা দিয়েছেন জো বাইডেন।
বাইডেনের ঘোষণা অনুসারে ইউক্রেন প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পাচ্ছে। এ ছাড়া গোলা, ট্যাংক ও রকেটলঞ্চার পাচ্ছে দেশটি। সব মিলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ১৮৫ কোটি মার্কিন ডলারের সাহায্য পাচ্ছে ইউক্রেন।
জো বাইডেন বলেন, ‘ইউক্রেনের আকাশসীমা সুরক্ষায় প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা চালানোর জন্য দেশটির সেনাদের আমরা প্রশিক্ষণ দেব।’ এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইউক্রেনের আকাশসীমা সুরক্ষায় বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি।
গত কয়েক দিন ধরে ইউক্রেনে টানা হামলা চালাচ্ছে রুশ বাহিনী। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর জেলেনস্কির এটিই প্রথম কোনো বিদেশ সফর। আকস্মিক এ সফরে হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জেলেনস্কি। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ভাষণও দিয়েছেন তিনি। এই হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আসার জন্য প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ধন্যবাদ জানান জো বাইডেন।
শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে জো বাইডেন যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমরা চাই যুদ্ধ শেষ হোক। এই যুদ্ধ আজই থেমে যেতে পারত, যদি পুতিনের সেই ভদ্রতাবোধ থাকত এবং ঠিক কাজটি করতে পারতেন। তিনি যদি সেনাদের বলতে পারতেন, ফিরে আসুন। কিন্তু এমনটা ঘটবে না। তাই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইউক্রেনকে যুদ্ধে জেতানোর জন্য শেষ পর্যন্ত সাহায্য করে যাবে।’
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জো বাইডেন বলেন, ‘আপনি কখনোই একা হবেন না। আমেরিকান জনগণ প্রতিটি পদক্ষেপে আপনার সাথে আছে এবং আমরা আপনার সাথে থাকব - যতদিন লাগবে।’
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘ইউক্রেনীয় জনগণ বিশ্বকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। শুধু আমাদের অনুপ্রাণিত করছে না, যেভাবে তাদের সাহস এবং কীভাবে তারা তাদের পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে এবং ভবিষ্যতের জন্য সংকল্প বেছে নিয়েছে, তা পুরো বিশ্বকেই অনুপ্রাণিত করবে। আমেরিকান জনগণ ইউক্রেনীয়দের পাশে ‘গর্বের সঙ্গে দাঁড়িয়েছে’।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘জাতি হিসাবে ইউক্রেনের অস্তিত্বের অধিকারের ওপর’ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নৃশংস হামলার ৩০০ দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকানরা একসাথে ইউরোপ, জাপানসহ অন্যান্য জায়গায় আমাদের মিত্রদের সাথে, প্রয়োজনীয় আর্থিক, মানবিক এবং নিরাপত্তা সহায়তা নিশ্চিত করেছে।’
কংগ্রেসে বক্তৃতায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র অকুণ্ঠ সমর্থন দেওয়ায় তিনি কৃতজ্ঞ। তিনি মস্কোর বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। এ ছাড়া মার্কিন সরকারের কাছে তিনি আরও সহায়তা প্রার্থনা করেছেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন কখনোই আত্মসমর্পণ করবে না।’
যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তাকে ‘গণতন্ত্রের জন্য বিনিয়োগ’ বলেও অভিহিত করেন তিনি এবং বলেন, মার্কিন সহায়তা কোনো ‘দাতব্য বিষয়’ নয়।
এদিকে জেলেনস্কির এই সফরকে ক্রেমলিনও ভালো চোখে দেখছে না। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের এই সফর ভালো কিছু বয়ে আনবে না। যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে অস্ত্র সরবরাহ করেই যাচ্ছে এবং ক্রমেই তা বাড়ছে। এটা অবশ্যই যুদ্ধের তীব্রতাকে আরও বাড়িয়ে দেবে।