তুরস্ক ও সিরিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৩, ০৩:৪১ পিএম

তুরস্ক ও সিরিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়

শক্তিশালী ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় চলছে উদ্ধার তৎপরতা।  বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, চেক রিপাবলিকসহ বিভিন্ন দেশের উদ্ধারকর্মীরা চেষ্টা করছেন ধ্বসস্তূপের নিচ থেকে জীবিত উদ্ধারের। এপর্যন্ত আড়াইশো শিশুকে জীবিত  উদ্ধার করা হয়েছে তুরষ্কে। তবে উদ্ধার কাজ চলার মধ্যে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে মৃত্যুর সংখ্যা। এপর্যন্ত দেশ দুটিতে প্রায় ৩৫ হাজার জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ৮০ হাজারের বেশি।

ভূমিকম্পের সাতদিন পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে এখনও প্রয়োজনীয় ত্রাণ পৌঁছেনি। তুরস্কের ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি প্রদেশ ও সিরিয়ার আলেপ্পো প্রদেশে প্রচণ্ড খাবারের অভাব দেখা দিয়েছে। তুরস্কে হাজারো ভবন বিধ্বস্ত হওয়ায় লাখো মানুষ এখন ঘরছাড়া খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন। গরম কাপড়ের অভাবে তারা প্রচণ্ড শীতে আগুন জ্বালিয়ে নিজেদের শরীর গরম রাখার চেষ্টা করছেন।

সিরিয়ার অবস্থা আরও শোচনীয়। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ভূমিকম্পের পর সিরিয়ায় ৫৩ লাখের মতো মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। এছাড়া দুই দেশে ৯ লাখ মানুষের জরুরি গরম খাবার প্রয়োজন। এই ঘটনায় ৮ লাখ ৭৪ হাজার মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দাতব্য সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে, বিশেষ করে সিরিয়ায়। অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারীরা ধসে পড়া হাজার হাজার ভবনের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে থাকায় প্রচণ্ড ঠান্ডায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। মাথার ওপর ছাদ নেই। অন্ন, বস্ত্র ও পানির তীব্র অভাব রয়েছে সেখানে। বহু বছর যুদ্ধের পর ভূমিকম্পের ফলে দেশটি গুরুতর মানবিক সংকটের মুখে পড়েছে। দেশটির জনগণের  জীবনের মৌলিক নিশ্চয়তা নষ্ট হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে গৃহযুদ্ধের কারণে সিরিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বেশকিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। ওই নিষেধাজ্ঞা এখনও কার্যকর রয়েছে।  কার্যকর থাকা নিষেধাজ্ঞাগুলোর একটি হলো-সিরিয়ার বিমান ও সমুদ্রবন্দরে বিদেশি উড়োজাহাজ ও জাহাজ প্রবেশ বা নোঙর করতে পারবে না। এই নিষেধাজ্ঞার কারণে সিরিয়ায় ত্রাণ পাঠাতে অনেক দেশের ইচ্ছে থাকলেও পারছে না।

তবে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ রেড ক্রস এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সিরিয়ান রেড ক্রিসেন্টকে সহায়তা করছে। সংস্থাটি উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানে এবং দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের জীবন রক্ষাকারী সহায়তা এবং জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে। তবে তা খুবই অল্প বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, স্থানীয় সময় গত সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে তুরস্ক ও সিরিয়ায়।  এর কিছুক্ষণ পর ফের ৬ দশমিক ৭ মাত্রার আরও একটি ভূমিকম্প এবং পরে আরও অনেকগুলো আফটারশক হয়। ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত দুই দেশে মৃত্যুসংখ্যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার।  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তাদের ধারণা, নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে।

Link copied!